• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মেঘনায় অবৈধ ঝোপ দিয়ে মাছ শিকার

  নজরুল ইসলাম শুভ, সোনারগাঁ

০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:১০
মেঘনা
মেঘনা নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকা দখল (ছবি : দৈনিক অধিকার)

মৎস্য আইনে নদীতে মাছের নির্বিঘ্নে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা নিষিদ্ধ। এমন আইন অমান্য করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকা দখল করে মাছ শিকার করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় সিন্ডিকেট করে এ ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শনিবার (৮ ডিসেম্বর) উপজেলার মেঘনা নদীর আনন্দবাজার, নুনেরটেক ও শান্তিরবাজার এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ বছর ১২০টির অধিক জায়গায় চারিদিকে বাঁশ পুঁতে গাছের ডালপালা ফেলে জালের ঘের দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। মাছ আটকানোর জাল এতই ছোট যে এ জালে রেনুপোনাসহ মা মাছ ধরা হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কর্মীরা অনেকটা উৎসব করে মাছ শিকার করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দ্বন্দ্ব থাকলেও ব্যবসায়িক স্বার্থে মেঘনা নদীতে সবাই ঐক্যজোট হয়ে সিন্ডিকেট করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পদপদবি পাওয়া নেতারা সরাসরি এ কাজে যুক্ত না হয়ে গ্রাম পর্যায়ে তাদের কর্মীদের দিয়ে এ ব্যবসা করাচ্ছে।

এ ব্যাপারে মেঘনা নদীতে কথা হয় রফিক মিয়া নামের একজন সিন্ডিকেট সদস্যের সঙ্গে তিনি জানান, নদীতে ঝোপ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত অধিকাংশরাই রাজনৈতিক নেতা। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে যারা আছেন তারা হলেন- ইসমাইল মেম্বার, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম, হোসেন মিয়া, জয়নাল আবেদীন, মাইনুদ্দিন মিয়া, সাহাবুদ্দিন মিয়া, সামসুল হক, সাব মিয়া, মজিবুর রহমান, জিলানী মেম্বার, জাকারিয়া মিয়া, নুরুল ইসলাম, আক্কেল আলী, হাবিবুর রহমান, আতাউর রহমান, মোতালেব মিয়া, মোক্তার হোসেনসহ ২০ জন।

মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে আসা জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীতে গাছের ডালপালা ফেলে ঝোপ দেওয়ার ঝোপের ভেতরে মাছের খাবার দেওয়ার কারণে নদীর সব মাছ ঝোপের ভেতরে আটকা পড়ছে। এ কারণে সাধারণ জেলেরা নদীতে জাল ফেলে মাছ পাচ্ছে না। মাছ না পেয়ে অভাব অনটনে তাদের সংসার চলছে। গত বছর নদীর পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঝোপ দিলেও এ বছর আরও বেশি এলাকায় ঝোপ দেওয়া হয়েছে।

ঝোপ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত সামছুল হক জানান, এ বছর স্থানীয় মৎস্য অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অলিখিত চুক্তির ভিত্তিতে ঝোপের সংখ্যা এত বাড়ানো হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে গাছের ডালপালা ফেলে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এক মাস ধরে মাছ শিকার করা হয়। একটি ঝোপ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার মাছ ধরা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া মিয়া জানান, আমি এ বছরই নদীতে ঝোপের ব্যবসা শুরু করেছি। এলাকার অনেক নেতাকর্মী এ ব্যবসা করে। তাই আমিও ব্যবসা করছি। প্রশাসন নিষেধ দিলে আগামী বছর থেকে আর এ ব্যবসা করব না।

বারদি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল হক জানান, দীর্ঘদিন ধরেই নদীতে এ ব্যবসা চলছে। এ এলাকার মৎস্য সম্পদ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমাদের দলের লোকজন ও বিএনপি, জাতীয় পার্টির কর্মীরা সবাই এ ব্যবসার জড়িত। নদীজুড়ে ঝোপ দেওয়ার ফলে নৌযান চলাচলে বিঘ্নে ঘটছে। বিষয়টি আমি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। কোনো প্রতিকার পাইনি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম জানান, আমরা মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের কথা চিন্তা করে অবৈধ এ ঝোপ না দিতে মাইকিং করে নিষেধ করেছি। কিন্তু কেউ কথা রাখছে না। আমাদের জনবলের অভাবে এসব ঝোপ উচ্ছেদ করতে পারছি না। কারও কাছ থেকে আমরা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড