• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ডিজিটাল প্রতারণায় সবচেয়ে সক্রিয় মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং

নিরাপত্তায় ব্যক্তি সচেতনতাই কি যথেষ্ট?

  তারিন ফাহিমা

১২ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:০৫
odhikar_mobile banking
লেনদেনের সহজলভ্য মাধ্যম যেন প্রতারকদের এখন মূল হাতিয়ার; ছবি : সম্পাদিত

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে লেনদেনের শীর্ষে জনপ্রিয় অবস্থানে আছে মোবাইল ব্যাংকিং। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই মোবাইল ব্যাংকিং কর্মসূচিতে বাংলাদেশ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে । বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক পরিক্রমা জুলাই-২০১৮’ সংখ্যায় বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবধারীর সংখ্যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। আর ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ শতাংশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিনই মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোবাইল ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ১ লাখ ৫২ হাজার। এর মধ্যে সক্রিয় গ্রাহক ২ কোটি ২ লাখ ৬২ হাজার। যারা প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ১১ কোটি টাকা লেনদেন করেন। আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট সংখ্যা ৮ লাখ ৪ হাজার ৬১০ জন। মূলত, দেশের সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মোবাইল অপারেটরভিত্তিক হলেও বাংলাদেশে এই সেবা ব্যাংকভিত্তিক।

বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত কিছু মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যম

আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ সেবা দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বর্তমানে ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ২৯টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন নিয়েছে। ডাচ বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করলেও এখন পর্যন্ত এ সেবা প্রদানে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ।

বিকাশের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মোট লেনদেনের ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশ হয়। আর ডাচ বাংলার ৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং অন্যান্য ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ লেনদেন হয়। এই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন আগের চেয়ে আরও অনেক সহজ হয়েছে। এখন ঘরে বসেই সব ধরনের কাজও করা যাচ্ছে। যেমন- মোবাইল রিচার্জ, রেমিট্যান্স পাঠানো, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মার্চেন্ট পেমেন্ট, সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেতন দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা, বিমা প্রিমিয়াম, ডিপিএস দেওয়া ইত্যাদি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকিং ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) কোন শ্রেণির মানুষ বেশি মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে সে বিষয়ে এক গবেষণা জরিপ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, নিরক্ষর মানুষই মোবাইল ব্যাংকিং বেশি ব্যবহার করেন। জরিপে দেখা গেছে, ২১ দশমিক ৭ শতাংশ নিরক্ষর মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করেন। আর যাদের শিক্ষার গণ্ডি প্রাথমিক পর্যন্ত তাদের ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ, মাধ্যমিক পাশ ১৮ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ১৬ দশমিক দুই শতাংশ, স্নাতক পাশ ১৮ শতাংশ এবং স্নাতকোত্তর পাশ শ্রেণির ছয় দশমিক দুই শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করেন।

মোবাইল ব্যাংকিং- প্রতারণার আরেক নতুন কৌশল

গবেষণায় দেখা গেছে, যেহেতু নিরক্ষর মানুষই মোবাইল ব্যাংকিং বেশি ব্যবহার করেন, সেহেতু তারাই এ ক্ষেত্রে প্রতারণার বেশি শিকার হন। এই মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেই অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও দক্ষ কায়দায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে ।

তবে শুধু নিরক্ষর লোকই নয়, এর মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন উচ্চ পর্যায়ের সরকারি চাকরিজীবী, সেনা কর্মকর্তা, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও সুশীল সমাজের সদস্যরাও।

প্রতারকরা নানাভাবেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। যেমন- সুলভমূল্যে ফ্ল্যাট, প্লটের অফার, নোবেল লরিয়েটের সঙ্গে ডিনার প্রোগ্রামের অফার, অপহরণ, মানবপাচার, চুরি, হ্যাকিং, সিএনজি, অটোরিকশা ছিনতাই, সিম রিপ্লেস, ন্যাশনাল আইডি কার্ড জালিয়াতি, জিনের বাদশার অফার, বিভিন্ন ইস্যুতে ‘আপনি চূড়ান্ত বিজয়ী’ বলে নির্ধারিত নম্বরে রেজিস্ট্রেশনের টাকা পাঠানোর অফার। আবার কোথাও টাকা পাঠানোর অনুরোধ করে সেটি পাঠাতে বাধ্য ও করা হচ্ছে।

প্রতারণার ধরন

ঘটনা ১

রফিক আজাদ(ছদ্মনাম) একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। গতকালই অবসর গ্রহণ করেছেন। অবসর গ্রহণের পরের দিন সকালে তার কাছে একটি ফোন এলো। তাকে বলা হলো, তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে সিইও এর দায়িত্ব পালন করবেন কি না। যদি পালন করতে রাজি হন, তাহলে তাকে মাসে ২ লক্ষ টাকা বেতন দেওয়া হবে। কোনো কিছু চিন্তা না করেই রাজি হয়ে যান রফিক। তিনি মনে মনে ভাবেন, ঘরে বসে থাকার চেয়ে এই কাজ করলে খারাপ কী? তখন তাকে কোম্পানির মালিকের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করার প্রস্তাব দেয়া হয়। তাকে একটা ঠিকানা দিয়ে সেখানে আসতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পরে তাকে আবারও ফোন করা হয়। বলা হয় মালিক অতি জরুরি কাজে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন। তিনি সেখানে যেতে পারবেন কি না? তার থাকা, খাওয়া, টিকিটসহ সব খরচ কোম্পানি বহন করবে। তিনি তাতেও রাজি হয়ে যান। তখন তাকে এয়ারপোর্টে আসতে বলা হয়।

তিনি তখন এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এমন সময় আবার ফোন। বলা হলো, তাদের সার্ভারে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তারা টিকিট কাটতে পারছে না। তিনি বিকাশ বা অন্য কোনো মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে পারবেন? তখন তিনি কোনো এজেন্টের দোকান থেকে তাদের সমপরিমাণ অর্থ পাঠান। তখন তিনি এয়ারপোর্টে পোঁছান, তাদের ফোন করলে সব নম্বরগুলোই বন্ধ পান। তিনি বুঝতে পারে, তিনি প্রতারকের ফাঁদে পা দিয়েছেন।

ঘটনা ২

মুক্তা বেগম (ছদ্মনাম)। মাঝরাতে অপরিচিত নম্বর থেকে হঠাৎ করেই তার সেলফোনে অপ্রত্যাশিত কল। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে খসখস কণ্ঠ শোনা যায়। মাঝরাতে এমন বিচিত্র এমন কণ্ঠস্বরে ভয় পেয়ে যান তিনি। সেই আজব কণ্ঠস্বর তখন অভয় দিয়ে স্বপ্নে ‘সোনার কলস’ পাওয়ার কথা জানায়। নিজেকে পরিচয় দেয় ‘জিনের বাদশা’। এই সোনার কলস পাওয়ার জন্য তার ফোন করা নম্বরে বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠানোর কথা বলেন। আর সতর্ক করে দেন, সে যদি কারও সাথে এই কথা আলোচনা করে, তাহলে সোনার কলসের সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে তার পুরো পরিবারও। মুক্তাও তার কথায় রাজি হয়ে পরের দিন টাকা পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু পরে মুক্তা না পায় সোনার কলস না পায় জিনের বাদশাকে তার দেয়া ২০ হাজার টাকা!

ঘটনা ৩

নাইম আহমেদ (ছদ্মনাম)। রাজধানীর মিরপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। থাকেন হেমায়েতপুরে। সেখান থেকে যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসে তিনি অফিসে যাতায়াত করেন। সাধারণত এই মাইক্রোবাসগুলো হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী বা যাত্রীদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে তাদের আনা নেয়া করে। প্রতিদিনের মতো সেদিনও তিনি এমন একটি মাইক্রোবাসে ওঠেন। সেখাবে তিনি স্যুট ব্যুট পরা মানুষ দেখতে পান। আমিন বাজার পার হবার একটু আগে মাইক্রোবাসের সব জানালা তুলে দিয়ে তাকে মারধর করেন স্যুট-ব্যুট পরা ব্যক্তিরা। পরে তার পরিবারের লোকজনের কাছে বিকাশের মাধ্যমে টাকা দাবি করেন। পরে তাদের টাকা দেয়া হলে নাইমকে ছেড়ে দেন।

পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার ধরন জানা গেছে। জিনের বাদশার কথা নিশ্চয়ই সবারই মনে আছে। এই নামের এক ভণ্ড প্রতারক যে কিনা চতুর্থ আকাশে থাকে বলে নিজেকে দাবি করে। সে বলে, বাংলাদেশি ২৫ জন নিয়মিত মোবাইল ব্যবহারকারী তার মোবাইল কল রিসিভ করলে সে স্বর্ণের কয়েন ও বড় জার উপহার দেবে। তার কল পেতে তার ব্যবহৃত নম্বরে ২৫ টাকা করে দিতে হবে। আর সাধারণ মানুষ তার ফাঁদে পা দেয়। এর মধ্যে গ্রামীণ নারীদের সংখ্যাই বেশি। এক পর্যায়ে যারা এই জিনের বাদশার প্রস্তাবে সাড়া দেয়, তাদের সব সম্পত্তি চলে যায় সেই জিনের দখলে। সব হারিয়ে তারা হয়ে যায় নিঃস্ব।

আবার পুলিশের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সিএনজি চোর গ্রুপের একজন অপরিচিত সদস্য সিএনজি মালিকের কাছে টাকা চেয়ে তাকে বিকাশ করতে বলে। এভাবে সংঘবদ্ধ চোরচক্র সিএনজি, মোটরসাইকেল, অটোরিকশাসহ নানা গাড়ি জব্দ করে বিকাশের মাধ্যমে নির্ধারিত নম্বরে টাকা পাঠাতে বলে। এভাবে তারাও প্রতারণার শিকার হয়।

আরেক ধরনের প্রতারণা চক্র ও বেশ বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় জনগণের কাছ থেকে। ‘হ্যালো পার্টি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান মানুষকে ফোন করে বলে -আপনি চূড়ান্ত বিজয়ী হয়েছেন। পাচ্ছেন এক সেট অলঙ্কার। একইভাবে রাজধানীতে পাচ্ছেন প্লট অথবা একটি ফ্ল্যাটের পজিশন। অথবা কোনো নোবেল লরিয়েটের সঙ্গে ডিনার প্রোগ্রাম। সংঘবদ্ধ এই চক্রটি বড় অফারের সঙ্গে দিচ্ছে মোবাইল অপারেটরদের মতো ওয়েলকাম টিউন ও কলার টিউনের মতো ছোট অফার। যেখানে ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়। এসব প্রতারণা থেকে উঁচু থেকে নিচু মানের কেউ রক্ষা পাচ্ছেন না।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এজেন্টদের একটি মাত্র নম্বরে অ্যাকাউন্ট খুলে ব্যবসা পরিচালনার কথার নির্দেশ রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক ও এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছে। বিকাশের একাধিক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ও এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকেই।এমনকি একজন এজেন্টের কাছ থেকে বিকাশ অ্যাকাউন্ট করা ৮৭টি সিম পর্যন্ত উদ্ধার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

প্রতারণা ঠেকাতে যত পদক্ষেপ

বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণা বন্ধে প্রতিদিন লেনদেনের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন তিনবারের বেশি টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না একজন গ্রাহক। আর প্রতিবার ১০ হাজার টাকার বেশি লেনদেন করা যাবে না। আর পাঁচ হাজার টাকার বেশি লেনদেন করতে তাকে নিজ পরিচয়পত্রের নম্বর প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং এর সাথে যুক্ত সকল কোম্পানিকে নতুন নির্দেশনা প্রদান করে। পাশাপাশি ইতোমধ্যে যেসব গ্রাহক একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তার মধ্যে একটি রেখে বাকিগুলো অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনা অবিলম্বে বাস্তবায়ন না করলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হবে বলে ও জানানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দুই উপায়ে বিকাশের মাধ্যমে জালিয়াতি করা হচ্ছে। সিম রিপ্লেস ও ভুয়া ন্যাশনাল আইডি কার্ড। তিনি বলেন, সিমের দায়িত্ব বিটিআরসিকে নিতে হবে এবং আইডি কার্ডের দায়িত্ব নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। তবে অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় সাধারণ জনগণ সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হন বিকাশের মাধ্যমে। কেননা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদানের জন্য এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। কারণ বিকাশের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার অভিনব ফাঁদ পেঁতে জনগণকে প্রতারিত করে।

তাই প্রতারক চক্রের ফাঁদ থেকে সাধারণ মানুষ কীভাবে রক্ষা পেতে পারেন, এ বিষয়ে আলাপকালে বিকাশের জনসংযোগ বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম জানান, সাধারণ মানুষ নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। কারণ প্রতারক চক্র অনেক বেশি দক্ষ এই বিষয়ে। তারা জনগণের সাথে এমনভাবে কথা বলে যেন এটি একটি সাধারণ কথোপকথন। আর তারই ফাঁদে পা দেয় গ্রাহক।

তিনি বলেন, প্রতাকররা bkash এর বদলে bkrash, bkesh, bckash এসব নম্বর থেকে প্রতারক চক্র ম্যাসেজ পাঠিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। এইসব প্রতারণা থেকে বাঁচতে নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর ও অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স কখনো কারও সাথে না শেয়ার করার আহ্বান জানান। এছাড়া এই চক্র প্রায়ই ফোনে ভুল করে টাকা পাঠানোর কথা বলে টাকা ফেরত চায়। সে ক্ষেত্রে সন্দেহ হলে অবশ্যই নিজের অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স চেক করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, লোভে পড়ে অনেকেই লটারি জেতার মিথ্যে আশায় লেনদেন করেন। সেটি থেকে বিরত থাকতে হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যেটি বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ঘটে সেটি হলো- ফোনের কথোপকথনের মাধ্যমে কারও কথা শুনে পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কারও নির্দেশনায় কোনো নম্বর ডায়াল করে টাকা লেনদেন করা। এটি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

তিনি পরামর্শ দেন, এর পরেও যদি কেউ প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে মনে করেন, তিনি তৎক্ষণাৎ স্ব স্ব মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করে প্রতারণার ঘটানাটি জানাবেন। বিকাশের কোনো গ্রাহক যদি প্রতারণার শিকার হন তিনি বিকাশের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের নম্বর ‘১৬২৪৭’ কল করে জানাবেন এবং থানায় এ সংক্রান্ত একটি জিডি করবেন ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম জানান, মূলত চারটি অঞ্চলে এই প্রতারকরা বেশি অবস্থান করে। সেগুলো হলো- ভাঙ্গা, মধুখালী, ফরিদপুরএবং মাগুরা সদর। আসামিদের ধরে আইনের আওতায় আনা হলেও তারা আবার একই ধরনের অপরাধ বার বার করছে। যার ফলে এই অপরাধ কমছে না।

তিনি আরও বলেন, তারা মূলত টার্গেট করে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের। কেননা তাদেরকে প্রভাবিত করা খুবই সহজ। আর তাদের মধ্যে অক্ষরজ্ঞান না থাকায় নিজেদের অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত করতে পারে না। নাজমুল ইসলাম বলেন, এ দেশের সাধারণ মানুষ অনেক বেশি লোভী। তারা কোনোভাবেই তাদের লোভ সংবরণ করতে পারে না। প্রতারকরা এই লোভকেই তাদের মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তাই অনেক সময় অনেক অসাধু প্রতারক চক্র এবং এজেন্টরা ও এই সুযোগ নিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা বিকাশসহ সকল মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির সাথে কাজ করছি। তাই তাদেরকে শুধু একা দোষারোপ করলে হবে না। নির্বাচন কমিশনের সাথে বিকাশের ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা নিয়ে কথা হয়েছে। সেখানে তারা ভোটার আইডি কার্ডের সাথে মিলিয়ে দেখবে যে একই আইডি দিয়ে একাধিক অ্যাকাউন্ট আছে কি না। যদি তা থাকে, তাহলে তারা বিকাশকে জানাবে এবং ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো বাতিল করে দেবে। আশা করছি এর মাধ্যমে অপরাধ কিছুটা কমে আসবে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বা আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে টাকা লেনদেন করলে অপরাধের পরিমাণ কমানো সম্ভব কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে অপরাধীরা অনেক বেশি সচেতন। আর যেহেতু তাদের টার্গেট গ্রামের নিরক্ষর মানুষ, সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে অপরাধ কমবে কি না সে ব্যাপারে সঠিককভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। আর আঙুলের ছাপ সংগ্রহের ফলে যদি তথ্য ঠিকভাবে সংগ্রহ না করা হয়, তাহলে সেটি বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এমন কি সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডও ঘটাতে পারে। এরই বিকল্প হিসেবে ইতোমধ্যেই টাকা লেনদেনে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তিনি পরামর্শ দেন, সর্বোপরি যা করতে হবে তা হলো নিজেকে সচেতন হতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর সেরকম কিছু চোখে পড়লে অবশ্যই তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড