নিশীতা মিতু
“আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে... ধুত্তুর ধুত্তুর ধুত্তুর ধু সানাই বাজিয়ে... যাবো তোমায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে”— একটা সময় প্রিয় মানুষকে ঘরণী করার জন্য এমন আবেদনই করতেন প্রেমিক। আজকাল অবশ্য কেউ গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে নেওয়ার কথা বলেন না। স্মৃতি ঠাওরে অনেকে মনে করতে চেষ্টা করবেন শেষ কবে দেখেছিলেন গরুর গাড়ি।
সময়ের স্রোতে আধুনিকতার হাওয়া লেগেছে শহর থেকে শুরু করে গ্রামে। আর এই নতুনত্বের ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি এখন কেবলই স্মৃতি। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠো পথও এখন হাতেগোনা। সে পথে আর ধুত্তুর ধুত্তুর ধ্বনি তোলে না কোনো গরুর গাড়ি। অথচ গেল দুই যোগ আগেও গাঁয়ের পথে রাজত্ব ছিল তার।
এক সময় গরুর গাড়ি ছাড়া গ্রামের কোনো বিয়ে কল্পনাই করা যেত না। টোপর দেওয়া গরুর গাড়িতে করে নববধূ যেতেন স্বামীর ঘরে। কাদামাখা পথ পার হতে হতে গোছাতেন নিজের নতুন জীবনের স্বপ্নমালা। শুধু নতুন বউই নয়, বরযাত্রীরাও যাতায়াত করতেন এই যানবাহনে।
কারো বাড়ির সামনে গরুর গাড়ি থাকলেই বোঝা যেত, ঘরে অতিথির আগমন ঘটেছে। সিলেট ও দক্ষিণ-উত্তরাঞ্চলের এলাকায় অভিজাত পরিবারের মানুষরা যাতায়াতের কাজে ব্যবহার করতেন গরুর গাড়ি। শুধু তাই নয়, কৃষকের ঘরে ধান তোলা, জমিতে সার, গোবর নেওয়া এমনকি বাজারে ধান বিক্রি করা সবটাতেই ছিল গরু-মহিষের গাড়ির ব্যবহার।
যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনে গরুর গাড়ির ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল থেকেই। বাংলা, বাঙলিয়ানা আর বাঙালি ঐতিহ্য— সবটা জুড়েই একসময় দাপট ছিল গরুর গাড়ির। উৎসব পার্বণে এটি ছিল অপরিহার্য। গরুর গাড়িই ছিল অনেকেই আয়-রোজগারের অবলম্বন। ‘গাড়িয়াল’ পেশায় নিযুক্ত ছিলেন অনেকেই।
রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে পথই গাড়িয়ালদের সঙ্গী। গাঁয়ের মেঠো পথে জোড়া মহিষ/গরুর গাড়ি চালাতে চালাতে তাইতো তারা মনের সুখে গেয়ে উঠতেন, ‘ও কী গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে...’। আজকাল অবশ্য পথের দিকে চেয়ে থেকেও দেখা মেলে না গাড়িয়ালের কিংবা কোনো গরুর গাড়ির।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। সেই সঙ্গে হারাচ্ছে গাড়িয়াল পেশাও। অথচ একসময় বংশ পরাম্পরায় এ পেশায় যুক্ত হত অনেকে। অদূর ভবিষ্যতে হয়ত গান, লেখা আর ছবিতেই কেবল খোঁজ মিলবে গরুর গাড়ির।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড