• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আজ হেমন্তের প্রথম দিন

অনুভব করে নেওয়ার ‘ঋতুকন্যা’ : হেমন্ত

  নিশীতা মিতু

১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:০৮
হেমন্ত ঋতু
হেমন্তের নবান্ন উৎসব (ছবি সূত্র : ইন্টারনেট)

‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে-এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়;’

কবি জীবনানন্দ দাশ কবিতার ভাষায় ভোরের কাক হয়ে ফিরে আসতে চেয়েছেন এই কার্তিক নবান্নের দেশে। কেবল কবি কেন যে কেউ মুগ্ধ হবেন কার্তিকের ভোরের অপরূপ সৌন্দর্যে। নিজের রূপে আর গুণে পুরোটাই সমৃদ্ধ বাংলা মা। ছয়টি ঋতু দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে নিজের অঙ্গ। ঋতুচক্রে ঘটেছে হেমন্তের আগমন।

কার্তিক আর অগ্রহায়ণ এই দুই মাস নিয়ে হেমন্তকাল। কৃষকের মুখে এক চিলতে প্রশান্তির হাসি নিয়ে প্রকৃতিতে আগমন ঘটায় হেমন্ত। নুয়ে পড়া কাশফুলে হালকা শিশিরের পরশ বুলিয়ে জানান দেয়, এর পরই আগমন ঘটবে শীতের।

প্রকৃতির স্বর্ণঋতু হেমন্ত। মাঠজুড়ে সোনালি ফসল ধানের দোলা সবার মন করে শিহরিত। হেমন্তের সকালের সোনা রোদ, সোনালি ধান আর সবুজ মাঠ জুড়ে সৃষ্টি করে অপরূপ এক সৌন্দর্য। কার্তিকের ভোরে ধানের ডগায় মুক্তার মতো শিশিরকণা অলঙ্কার হয়ে সজ্জিত থাকে।

শহরাঞ্চলের ইট সিমেন্টের দালান আর নাগরিক কোলাহলে হেমন্তের আমেজ তেমন একটা বোঝা না গেলেও গ্রামীণ বাংলার সংস্কৃতিতে হেমন্তকে ঘিরে উৎসবের আমেজ যেন চিরকালীন শাশ্বত রূপ। কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন সোনা ফসল ঘরে তুলতে। আর তারপরও সোনালি রঙের ফসলকে নিয়ে কৃষক পরিবারগুলোতে শুরু হয় আনন্দ উৎসব। কিষাণীরা ব্যস্ত থাকে ধান মাড়াই, রোদে শুকানোর কাজে।

আর তারপরই ঘরে ঘরে শুরু হয় বাংলার ঐতিহ্য ‘নবান্ন উৎসব’। নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন অন্ন। হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই এই উৎসবের সূচনা। নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজন করা হয় উৎসবের। অগ্রহায়ণে নতুন ধানের চাল দিয়ে রান্না করা হয় ফিরনি-পায়েস। কোনো কোনো অঞ্চলে বানানো হয় বাহারি পিঠা।

শুধু কী তাই? এই নবান্নকে ঘিরে বসে গ্রাম্য মেলা। লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়া, পুতুল নাচ, বায়স্কোপ সব মেলে এখানে। সঙ্গে থাকে দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যদিও কালের স্রোতে নবান্নর আমেজও যেন গ্রামে কিছুটা পানসে হয়ে যাচ্ছে।

নবান্ন উৎসবে নিমন্ত্রণ জানানো হয় নতুন জামাইকে। মেয়েকেও বাপের বাড়িতে আনা হয় ‘নাইওর’। সবকিছু মিলিয়ে চারপাশে যেন উৎসবের মেলা বসে। এর কিছু পরই আশেপাশে আনাগোনা ঘটায় অতিথি পাখিরা। হেমন্তরের শেষের দিকটায় যেন এ দেশের প্রকৃতিকে ভালোবেসে তারাও চলে আসে। প্রকৃতিও তখন মুখর হয়ে পড়ে অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে।

হেমন্তে সমারোহ ঘটে বিভিন্ন ফলের। তবে কামরাঙ্গা আর চালতা এ ঋতুর বিশেষ ফল। হেমন্তের প্রধান ফল নারিকেল। আর তাইতো নতুন চালের গুঁড়ার সঙ্গে নারিকেল মিশিয়ে নানা বাহারের পিঠা তৈরির ধুম চলে ঘরে ঘরে। সারা রাত জেগে পিঠা তৈরি করেন গৃহিণীরা। কষ্ট সার্থক করে পিঠা বানানো শেষে তা বিতরণ করেন পাড়া-পড়শিদের মাঝে। মজবুত হয় বন্ধন, বৃদ্ধি পায় পারস্পরিক ভালোবাসা।

শরৎ আর শীতকে এক বন্ধনে মিল করার ঋতু হেমন্ত। শরতের তুলোর মতো সাদা মেঘকে পাশ কাটিয়ে, কাশফুলকে বাতাসে উড়িয়ে নিজের জায়গা দখল করে সে। আবার নরম কুয়াশার চাদর বিছিয়ে, সোনা রোদের উষ্ণতা দিয়ে, রঙ বেরঙের আনন্দ উৎসব দিয়ে জানান দেয় শীত আসি আসি করছে। সবাই এক সুতোয় বাঁধাই যেন হেমন্তের কাজ, হোক তা মানুষ কিংবা প্রকৃতি। আর তাইতো হেমন্তকে বলা হয় ‘ঋতুকন্যা’।

হেমন্তকে ছোঁয়া যায় না, ধরা যায় না। প্রকৃতিতে তার প্রখরতা বিরাজ করে না। তাই হেমন্তকে উপলব্ধি করতে হয়, অনুভব করতে হয়। কিছুটা ধূসর আর অস্পষ্ট ঋতু সে। গ্রীষ্মের মতো খরতাপ নেই, বর্ষার বৃষ্টির মুখরতা নেই, শীতের তীব্রতার উপস্থিতিও নেই এখানে। হেমন্তকে তাই খুঁজে নিতে হয়, বুঝে নিতে হয়।

প্রকৃতিতে আগামী দুই মাস বিরাজ করবে হেমন্ত। পাকা ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ, দূরের বনে পাখির খুনসুটি, দু’একটা ফুলের ঝরে পড়া আর ভোরের ঘাসে ভেজা শিশির আমাদের উপলব্ধি করাবে তার আগমন। আর কিষাণপাড়ায় শুরু হবে শত কষ্টের পর খানিকটা প্রশান্তি উদযাপন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড