• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জাওয়াদের প্রভাবে মুন্সিগঞ্জে আলু চাষে বিপর্যয়

  রিয়াদ হোসাইন, মুন্সিগঞ্জ

০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:২১
বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে আলু ক্ষেত
বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে আলু ক্ষেত। (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে মুন্সিগঞ্জে রবিবার থেকে টানা বৃষ্টি ঝরছে। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আলু ক্ষেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯’শ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত আলু রোপণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমি, আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৭’শ হেক্টর জমিতে। টংগিবাড়ী উপজেলায় ৯ হাজার ৯’শ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৫ হাজার হেক্টর। শ্রীনগর উপজেলায় ২ হাজার ২৬০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৬২০ হেক্টর। সিরাজদিখান উপজেলায় ৯ হাজার ৩৬০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৭ হাজার হেক্টর। লৌহজং উপজেলায় ৪ হাজার ১১০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩’শ হেক্টর। গজারিয়া উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমি এবং এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার যোগিনী ঘাট, চরকেওয়ার, শিলই, দক্ষিণ চরমুশুরা, বজ্রযোগনী এবং টংগিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড়, হাসাইল ও যশলং এলাকার অধিকাংশ আলুর জমি বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফসল বাঁচাতে পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা করছেন কৃষকরা। তবে অনরবত বৃষ্টি ফলে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এতে সময়ের সাথে সাথে লোকসানের দুশ্চিন্তা বাড়ছে তাদের।

পূর্বরাখি গ্রামের কৃষক সোহাগ বেপারি বলেন, গত পাঁচ বছর আলু রোপণ করে প্রায় ৯৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বিগত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে এ বছরও সাড়ে ৩ কানি জমিতে আলু রোপণ করেছি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে অসময়ে এ বৃষ্টিতে সবকিছু হারিয়ে পথে বসার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে পানি নিষ্কাসন করার মতো ব্যবস্থা নেই। পুরো এলাকা জুড়ে আলুর জমি পানিতে তলিয়ে আছে।

চরকেওয়ার এলাকার কৃষক আমজাদ দিদার বলেন, এ বছর ২৮০ কড়া জমিতে আলু রোপণ করেছি। বিগত বছরগুলোতেও আলু চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছি। এবছরও বৃষ্টিতে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। জমির বেশিরভাগ অংশ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাসনের নালা তৈরি করেও তেমন লাভ হচ্ছে না।

যোগিনী ঘাটের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছর আলুর বস্তা প্রতি ৪’শ টাকা লোকসান হয়েছে। সেই ক্ষতি কাঁটিয়ে উঠতে এবছরও ১০ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করতে জমি প্রস্তুত করেছি। এখন পর্যন্ত ৫ বিঘা জমিতে আলু রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। এরমধ্যে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে রবিবার থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ৫ বিঘা জমির আলু পানিতে ডুবে গেছে। পানি সরানোর মতো কোনো উপায় পাচ্ছি না। এদিকে প্রস্তুত করে রাখা বাকি ৫ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করতে পারবো কিনা সেই আশঙ্কায় আছি।

মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খুরশীদ আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া আরও দুই-একদিন এমন বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে আলু চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হবে।

তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহের মধ্যে যারা জমিতে আলু রোপণ করেছেন তাদের বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। বৃষ্টিতে যে সকল আলুর জমি পানি নিচে তলিয়ে আছে, দ্রুত ওইসব জমির পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া ইতোমধ্যে যেসব জমির আলুর পাতা বের হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে আসার পর ছত্রাকনাশক ছিটিয়ে দিতে হবে।

কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আবহাওয়া পুরোপুরি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত যাতে কোন কৃষক জমিতে আলু রোপণ না করেন। তবে বৃষ্টির প্রভাবে অন্যান্য শীতকালীন ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না।

আরও পড়ুন : কীটনাশক ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কৃষকরা

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর বোঝা যাবে কেমন ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তীতে ক্ষতির হিসাব-নিকাশ করে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। যদি কোন সহযোগিতা আসে তবে কৃষকরা তা পাবেন।

জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ওডি/জেআই

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড