নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ তখনও দেশে ছাড়িয়ে পড়েনি; কিন্তু ভাইরাসটি নিয়ে আতঙ্ক মানুষদের মাঝে, প্রান্তিক জনপদের বেদে পল্লীর মানুষ যখন জানে না করোনা ভাইরাস মোকাবিলার হাতিয়ার কি! তখনি একটি বেসরকারি সংস্থা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় মোশারফ হোসাইন ঝিনাইগাতীর উপজেলার ডেফলাই গ্রামের বেদেপল্লিতে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে দেড় শতাধিক পরিবারের মাঝে সাবান ও ফেস মাস্ক দিয়ে আসেন, পাশাপাশি বেদেপল্লীতে ঘরেঘরে সরকারি জরুরি স্বাস্থ্যসেবা হেল্প লাইনের নম্বর যুক্ত লিফলেট লাগান, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার নিয়ম ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি অবগত করেন।
মোশারফ হোসাইনের কার্যক্রম বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর নজরে আসে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের, এরপর মোশারফ হোসাইনের কার্যক্রম গুলো যাচাইয়ের পর ‘রিয়েল লাইফ হিরো ও হিডেন হিরো উপাধি দেয় আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন’। ২১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এবং দ্যা ডেইলি স্টার যৌথ উদ্যেগে ‘হিডেন হিরো মোশারফ হেল্পস দ্যা স্নেক চ্যাম্বার কমিউনিটি’ শিরোনামে ডেইলি স্টারের সংবাদ মাধ্যম এবং অফিসিয়াল ইউটিউবে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার জন্য দেশের ২০ জনকে রিয়েল লাইফ হিরো ও হিডেন হিরো উপাধি দিয়েছে এই আন্তর্জাতিক সংস্থা; এর মধ্যে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মোশারফ হোসাইনকে সপ্তম পর্বের প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। মোশারফ হোসাইন পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কবি নজরুল সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের ১ম বর্ষে, পাশাপাশি ফিচার প্রতিবেদক হিসেবে লেখেন সমকাল পত্রিকার সমতা পাতায় ও দৈনিক অধিকার পত্রিকায়, শিশু অধিকার ভিক্তিক শিশু কিশোর ও অভিভাবকদের জন্য তার লেখা দু’টি বই প্রকাশ পেয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়।
ডেইলি স্টারের সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায় দেশের লকডাউনের সময়টিতে মোশারফ হোসাইন নিজ এলাকায় অবস্থান করেন এবং এমন একটি জনগোষ্ঠীকে খুঁজে বের করেন যারা সত্যিকার অর্থে অবহেলিত; যাদের খুজঁ কেউ রাখেনা, আর তারা হলো বেদে পল্লীর মানুষ। এই পল্লীর শিশুরা জীবিকার তাগিদে সাপ বানর ইত্যাদি খেলা দেখানোর মতো ভয়ংকর কাজের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ছে ফলে ঝুকির মুখে তাদের জীবনও। মোশারফ হোসাইন বলেন, বেদে পল্লীর মানুষ অশিক্ষিত থাকা মানে উপজেলায় সাক্ষরতার হাড় কমে যাওয়া, বেদে পল্লীর মানুষরাও আমাদের সমাজেই অংশ, তাদের পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই, আমরা যদি বেদে পল্লীকে পিছনে ফেলি তাহলে আমাদের সমাজও পিছিয়ে যাবে, কাছাকাছি কোন স্কুল না থাকায় বেদে পল্লীর শিশুরা স্কুল আগামী হতে পারেনা, দূরের স্কুলে গেলেও তাদের সাথে কেউই মিশতে চায়না, ২০১০ সাল থেকে এই পল্লীতে স্থায়ী অস্থায়ী হিসেবে বসবাস করে দুইশত পরিবার, যাদের শিক্ষার কোন মাধ্যম নেই।
মোশারফ হোসাইন বলেন, শিশুদের কোমল মন; সাধারণ পরিবারের শিশুরা বেদে পল্লীর শিশুদের ভিন্ন চোখে দেখে, তাদের সাথে মিশতে সাচ্ছন্দবোধ করেনা। আমার চাওয়া বেদে পল্লীর শিশুরা স্কুল আগামী হবে, শিক্ষিত হবে এবং দেশ উন্নয়নে তারাও ভূমিকা রাখবে। মোশারফ হোসাইন আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবেল মাহমুদের সাথে কথা হয়েছে তিনি বলেছেন শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে যদি বেদে পল্লীর আশেপাশে স্কুল উপযোগী হয় তাহলেই তাদের জন্য স্কুল করা হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস.এম. আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাঈম বলেন, তোমার কাজগুলো প্রশংসনীয়; বেদে পল্লীর জন্য আমার সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড