• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভালো বই পড়ুন এবং সুস্থ সাহিত্য চর্চা করুন

  আসমাউল মুত্তাকিন

০৫ জুন ২০২০, ২১:৩৫
লেখক
ছবি : সম্পাদিত

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় লেখক সারমিন ইসলাম রত্না। ১৯৮৭ সালের ২১ নভেম্বর কেরানীগঞ্জ জন্মগ্রহণ করেন। লেখালেখি করছেন ২০০৩ সাল থেকে। মূলত শিশুদের নিয়েই লিখেন তিনি।

পড়াশোনা বাংলা সাহিত্যে সম্মান। পেশা এবং নেশা লেখালেখি। দেশের প্রথম সারির পত্রিকায় নিয়মিত তার লেখা ছোটদের গল্প ও ছড়া প্রকাশিত হয়। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন ও আবৃত্তির সাথে যুক্ত রয়েছেন। তিনি তার লেখার দ্বারা শিশুদের জীবন আনন্দে ভরিয়ে দিতে চান।

লেখালেখি ও ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক অধিকারের মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসমাউল মুত্তাকিন।

মুত্তাকিন : কেমন আছেন? সারমিন ইসলাম রত্না : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। মুত্তাকিন : করোনায় কেমন যাচ্ছে আপনার দিনকাল? সারমিন ইসলাম রত্না : খুবই ভয়াবহ এবং একঘেয়ে। কিছুই ভালো লাগেনা। রাত্রে ঘুম হয় না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে পাখি হতে!এখন বুঝতে পারি খাঁচায় বন্দি পাখিরা কেন ছটফট করে। অনেক সময় কাজে মন বসে না, তারপরও জীবন চালাতে হয়।

মুত্তাকিন : বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে? সারমিন ইসলাম রত্না : করোনাকালীন শিশুতোষ গল্প ও অন্যান্য বিষয়ের উপরেও লিখছি। পাশাপাশি শিশুদের গল্প নিয়ে ভাবছি। কি করে শিশুদের আরও বেশি আনন্দে রাখতে পারি। এছাড়াও প্রচুর বই পড়ছি।

মুত্তাকিন : আপনার লেখালেখির শুরুটা কিসের মধ্য দিয়ে? সারমিন ইসলাম রত্না : আমার লেখালেখি শুরু ছোটবেলা থেকেই। যখন আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকেই আমার লেখালেখি শুরু। প্রচুর গল্প, কবিতা, উপন্যাস পড়তাম। এখনো পড়ি। পড়তে পড়তেই বাবার উৎসাহে শিশুদের জন্য লিখতে শুরু করি। আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালের ৪ঠা জুলাই। ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসরে। সেই দিনটি ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। মানুষ খুশিতে কাঁদতে পারে কথাটা সেদিনই বিশ্বাস হয়েছিল আমার। বাবা মাকে বলেছিলাম আমার জন্য দোয়া করো যেন আমি বহুদূর যেতে পারি। তারপর অনেক প্রতিকূলতা সামনে এসেছে কিন্তু থমকে দাঁড়াই নি। এখনো আসে তবু শিশুদের জন্য লিখেই যাচ্ছি নিয়মিত এবং ইনশাআল্লাহ লিখতেই থাকবো।

মুত্তাকিন : আপনার শৈশবটা কেমন ছিল? সারমিন ইসলাম রত্না : আমার শৈশবটা ছিলো উড়ন্ত এবং দুরন্ত। খুবই দুষ্ট ছিলাম আমি। বিকেল হলেই আমাকে খুঁজে পাওয়া যেতো না৷ তখন অনেক সবুজ মাঠ ছিলো। টলটলে জলের পুকুর ছিল আর ছিল অনেক অনেক গাছ। আমি ফুল খুব পছন্দ করি। তাই অনেকের ছাদ থেকে, বাগান থেকে ফুল চুরি করে নিয়ে আসতাম। তাই দেখে আমার বাবা আমাকে নানা রকমের ফুল গাছ কিনে দিলেন। তারপরও কি আমার দুষ্টুমি বন্ধ হয়? গাছের পরিচর্যার পাশাপাশি ছবি আঁকা নিয়েও ব্যস্ত থাকতাম। শিক্ষকের কাছে অনেক বকা খেয়েছি। সেই সব দিনগুলোর কথা মনে পড়লে বড় হওয়ার জন্য খুব দুঃখ হয়। ইচ্ছে করে আবারো যদি শৈশবে ফিরে যেতে পারতাম।

মুত্তাকিন : কার অনুপ্রেরণায় লেখালেখি শুরু করলেন? সারমিন ইসলাম রত্না : আমার বাবার অনুপ্রেরণায় এবং মায়ের আগ্রহে। নিজের ইচ্ছায় ও ছোট বোন সাবরিন ইসলাম স্বর্ণার উৎসাহে। আর শ্রদ্ধেয় শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েন উদদীন চাচার সহযোগিতায় ও ভালোবাসায়।

মুত্তাকিন : প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতিটা কেমন ছিল? সারমিন ইসলাম রত্না : এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। বইয়ের নাম 'স্বপ্নের ডানা'। প্রকাশক সিদ্দিকীয়া পাবলিকেশনস। বইটি দ্বিতীয় মুদ্রণ হয় ঐ প্রকাশনীরই আরেকটি শাখা সাতভাই চম্পা প্রকাশনী থেকে। এটি ছিলো ছড়ার বই। ভাবতেই চোখে পানি এসে যায় আমার প্রথম বই দ্বিতীয় মুদ্রণ হয়েছে। সেই অনুভূতিটা আসলে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারব না কারণ ঐ ভাষা'ই আমার নেই।

মুত্তাকিন : লেখালেখির কারণে কোথায় বাঁধার মুখে পড়েছিলেন? সারমিন ইসলাম রত্না : সামাজিক কিছু বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি। এখনো হচ্ছি। মন খারাপ করে ভেবেছি আর লিখবো না। কিন্তু তবুও এগিয়ে যাচ্ছি আমার স্বপ্নের পথে। একটা কথা মনে ধারণ করি সবসময়। লেগে থাকবো। ভেঙে পড়বো না কিছুতেই। আমাকে পারতেই হবে।

আরও পড়ুন : বেশি বেশি ভালো বই পড়ুন, ভালো লেখা পড়ুন

মুত্তাকিন : আপনার বর্তমান বইয়ের সংখ্যা কয়টি? সারমিন ইসলাম রত্না : আমার বর্তমান বইয়ের সংখ্যা ছয়টি।

মুত্তাকিন : কোন বইগুলো সবচেয়ে বেশি পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে? সারমিন ইসলাম রত্না : সবচেয়ে বেশি পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে সাতভাই চম্পা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তাহিয়ানের যত মজার কাণ্ড, মুক্তধারা থেকে প্রকাশিত সোনার পায়রা, পঙ্খিরাজ থেকে প্রকাশিত সবুজ বনের খরগোশ। তবে আমার একমাত্র ছোট ভাই নূর মোহাম্মদ সাদের কাছে আমার লেখা ওর সবচেয়ে প্রিয় বই পকেট ভর্তি আনন্দ।

মুত্তাকিন : আগামী বইমেলা নিয়ে কি পরিকল্পনা? সারমিন ইসলাম রত্না : আগামী বইমেলা নিয়ে পরিকল্পনা অনেক। বেশ কয়েকটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করছি। এখন দেখা যাক কি হয়, পরিস্থিতি কোন দিকে দাড়ায়। করোনাকালীন দুঃসময়ে সুস্থ থাকাটাই জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া।

মুত্তাকিন : আপনার লেখকদের তালিকায় কারা আছেন? সারমিন ইসলাম রত্না : আমার প্রিয় লেখকদের তালিকায় অনেকেই আছেন। তবে বিশেষভাবে যদি বলতে হয় তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। হুমায়ুন আহমেদ, সমরেশ মজুমদার, খালেক বিন জয়েন উদদীন, জুলভার্ন আর লুৎফর রহমান রিটন আরও অনেকেই বলে শেষ করতে পারব না।

মুত্তাকিন : নতুন লেখকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতেন.? সারমিন ইসলাম রত্না : নতুন লেখকদের উদ্দেশ্যে বলব অনেক বই পড়ুন, অবশ্যই ভাল বই এবং এগিয়ে যান মনে সাহস রেখে। বাধা আসবেই তারপরও সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে। সুস্থ সাহিত্যচর্চায় হতে হবে নিবেদিত প্রাণ।

মুত্তাকিন : আপনার পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান? সারমিন ইসলাম রত্না : আমি যেহেতু ছোটদের জন্য লিখি তাই আমার ছোট ছোট পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, তোমরা বই পড়। কারণ বই মানে থলে ভরা রাশি রাশি জ্ঞান সেই জ্ঞানে ডুব দিয়ে এসো করি ধ্যান। পাশাপাশি নিজেদের মত্ত রাখো খেলাধুলায় ও রঙিন স্বপ্নে।

মুত্তাকিন : সফলতা বলতে কি বুঝেন? সারমিন ইসলাম রত্না : সফলতা বলতে আমি বুঝি আমার বই পড়ে শিশুদের হাসি, তাদের ভালোলাগা। ব্যস এতটুকুই।

মুত্তাকিন : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। সারমিন ইসলাম রত্না : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড