• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গৃহশিক্ষকের হাত ধরে লক্ষ্যহীন বালকের বিশ্বজয়

  মুহাম্মদ আব্দুর রহমান কুতুবী

১৫ মে ২০২০, ১৬:৩৮
হাসান মুরাদ
ক্রিকেটার হাসান মুরাদ (ছবি : সংগৃহীত)

সাধারণ একটা গ্রাম্য চঞ্চল কিশোরের যাপিত জীবন যেমন হয়, ঠিক তেমনই ছিলো তার রোজকার রুটিন। পড়ালেখায় অমনোযোগী, পরীক্ষায় টেনেটুনে পাশ, লক্ষ্যহীন জীবন, সারাদিন বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড়, খেলাধুলা, আড্ডাবাজি, সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসা, ক্লান্ত শরীর নিয়ে পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে পড়া। এভাবেই চলছিল তার জীবন।

গৃহশিক্ষক আতিকুর রহমানের দিক নির্দেশনায় বিকেএসপিতে ভর্তি এবং প্রফেশনাল ক্রিকেটে হাতেখড়ির পর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আর। কক্সবাজার জেলায় অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেট লীগ দিয়ে প্রফেশনাল ক্রিকেট শুরু করেন কক্সবাজারের সন্তান হাসান মুরাদ। পরে বিকেএসপির হয়ে অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৮, ফার্স্ট ডিভিশন দুইবার, প্রিমিয়ার লীগে প্রথমবারই অসাধারণ পারফরম্যান্স করে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের চূড়ান্ত টিমে জায়গা নেন, ছিনিয়ে আনেন বিজয়।

করোনা সংকটময় অবসর এ সময়ে ক্রিকেটের নতুন এই ভরপুত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৈনিক অধিকারের মুখোমুখি হয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক অধিকারের প্রতিনিধি মুহাম্মদ আব্দুর রহমান কুতুবী।

কুতুবী : কেমন আছেন? হাসান মুরাদ : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

কুতুবী : বিশেষত, করোনা পরিস্থিতিতে ক্রিকেট ছাড়া কেমন কাটছে সময়? হাসান মুরাদ : ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি, গেমস খেলছি আর ইবাদত করে সময় কাটাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য সবার জন্য দোয়া করছি।

কুতুবী : ক্রিকেটের হাতেখড়ি কীভাবে? হাসান মুরাদ : ছোটবেলায় এলাকায় টেপ টেনিস খেলতাম। আমার আগ্রহ দেখে আমার গৃহশিক্ষক আতিকুর রহমান বিকেএসপি সম্বন্ধে ধারণা দেয়। পরে ২০১১ সালে তিনিই চট্টগ্রামে বিকেএসপির প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পে ট্রায়াল দিতে নিয়ে যান। ওখানে আমি নির্বাচিত হই। ওখানে তিনমাস ক্যাম্প করি। প্রফেশনাল ক্রিকেট নিয়ে জানতে পারি। ২০১১ সালে কক্সবাজার জেলা অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেট লীগে খেলি। ২০১২ সালে বিকেএসপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ভর্তি হই। এরপর থেকেই আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু। পরে অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৮, ফার্স্ট ডিভিশন দুইবার, প্রিমিয়ার লীগ একবার খেলি। পরে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের চূড়ান্ত টিমে জায়গা পাই।

কুতুবী : আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত টিমে বাংলাদেশের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়ার সংবাদ শুনে কেমন অনুভূতি ছিলো? হাসান মুরাদ : তখন বগুড়াতে ক্যাম্প করছিলাম। ক্যাম্প শেষে আমাদের সামনেই বিশ্বকাপের টিম ঘোষণা করা হয়। চূড়ান্ত টিমে নিজের নাম শুনার অনুভূতি আসলে অন্যরকম, ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

কুতুবী : আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স ভবিষ্যতে কতটুকু আত্মবিশ্বাস যোগাবে বলে মনে করেন? হাসান মুরাদ : এটাই আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন বলতে পারেন। ভবিষ্যতে এটি অনেক আত্মবিশ্বাস যোগাবে বলে বিশ্বাস করি।

কুতুবী : বোলার হিসেবে ইতোমধ্যে আপনি সবার নজর কেড়েছেন। শুরু থেকেই কী বোলার হতে চেয়েছেন? হাসান মুরাদ : জ্বি। আমি শুরু থেকে বোলারই ছিলাম। তবে বিকেএসপিতে যখন ট্রায়াল দেই, তখন পেস বোলার ছিলাম। পরে উচ্চতা না থাকায় বাদ দিতে হয়। কিছুদিন লেগ স্পিন করেছি। মূল সফলতা আসে যখন অফ স্পিনে মনোযোগ দেই।

কুতুবী : ব্যাটিং নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? হাসান মুরাদ : হ্যাঁ,পরিকল্পনা আছে। ব্যাটিং নিয়ে নিয়মিত কাজ করছি, যাতে দলকে সাহায্য করতে পারি। একজন অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।

কুতুবী : আচ্ছা, বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন, অনুভূতি কেমন? হাসান মুরাদ : দেশের হয়ে খেলার অনুভূতি অন্যরকম। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করেছি, যখন খেলছি, তখন অনুভব করছি ব্যাপারটা। খেলা শুরুর আগে জাতীয় পতাকা সামনে নিয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময়টা খুব দারুণ লাগে।

কুতুবী : জাতীয় দলে খেলার ব্যাপারে আপনার আত্মবিশ্বাস কেমন? হাসান মুরাদ : সব খেলোয়াড়েরই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার। আমারও আছে। দীর্ঘ সময় জাতীয় দলে খেলার জন্য স্কিল ডেভেলপ করার চেষ্টায় আছি।

কুতুবী : আপনার প্রিয় খেলোয়াড় কে? কেন প্রিয়? হাসান মুরাদ : সাকিব আল হাসান। সাকিব ভাইয়ের বোলিংটা ভালো লাগে আমার। তার মতো বিশ্বসেরা বাঁহাতি স্পিনার হতে চাই। মাঠে ভাইয়ের আত্মবিশ্বাস সবাইকে ছাড়িয়ে যায়, এসব দেখতেও খুব ভালো লাগে। সাকিব ভাই ছাড়াও রবীন্দ্র জাদেজা ও নাথান লায়নও আমার পছন্দের খেলোয়াড়।

কুতুবী : অবসর সময়ে কী করতে পছন্দ করেন? মুরাদ হাসান : মুভি দেখতে পছন্দ করি।

কুতুবী : কেমন মুভি পছন্দ করেন? আপনার পছন্দের হিরো কে? মুরাদ হাসান : ডিটেকটিভ মুভিগুলো আমার পছন্দের। প্রিয় হিরো বলতে তেমন কেউ নেই। সবার মুভিই দেখা হয়।

কুতুবী : পড়ালেখার বাধ্যবাধকতা কেমন ছিল? মুরাদ হাসান : ছোটবেলায় পড়ালেখার বাধ্যবাধকতা ছিল। যখন খেলায় পূর্ণ মনোযোগী হই, তখন আর তেমন বাধ্যবাধকতা ছিল না।

কুতুবী : ছাত্র হিসেবে কেমন ছিলেন? মুরাদ হাসান : সত্যি বলতে ছাত্র হিসেবে ভাল ছিলাম না। টেনেটুনে পাশ করতাম এই আর কী!

কুতুবী : বড় হয়ে কী হতে চেয়েছিলেন? মুরাদ হাসান : এরকম কোনো পরিকল্পনা ছিল না। এতকিছু বুঝতাম না। খেলাধুলা-ঘুরাঘুরির বাইরে তখন তেমন কোনো চিন্তা মাথায় আসতো নাহ।

কুতুবী : এখন কোথায় পড়াশুনা করছেন? মুরাদ হাসান : এআইউবিতে স্নাতকে ভর্তি প্রক্রিয়াধীন।

কুতুবী : কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে কোনো সমস্যা হয় কিনা? আপনার সতীর্থরা কীভাবে নেন? মুরাদ হাসান : এটাকে ঠিক সমস্যা বলবো না। আমি যখন বিকেএসপিতে ছিলাম, তখন বাসায় আব্বু-আম্মুর সঙ্গে কথা বললে কেউ কিছু বুঝতো না। পরে জিজ্ঞেস করতো, কোন ভাষায় কথা বলি? একটু মজা করতো এই আর কী!

কুতুবী : তরুণ ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ? হাসান মুরাদ : প্রথমেই বলবো যে কোনো একটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। হয় পড়াশুনা, না হয় খেলাধুলা। প্রফেশনাল ক্রিকেটার হতে চাইলে কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ক্রিকেটে সময় দিতে হবে, এটাই শেষ কথা।

কুতুবী : দৈনিক অধিকারকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। হাসান মুরাদ : আপনাকে এবং দৈনিক অধিকার পরিবারকেও ধন্যবাদ।

প্রোফাইল

নাম : হাসান মুরাদ

ডাক নাম : মুরাদ

জন্ম : ১ জুলাই ২০০১

জন্মস্থান : কক্সবাজার

উচ্চতা : ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি

পড়াশোনা : স্নাতক(এআইইউবি)

প্রথম ক্লাব : বিকেএসপি

বর্তমান ক্লাব : শাইনপুকুর

ব্যাটিং স্টাইল : ডানহাতি

বোলিং স্টাইল : বাঁহাতি অফ স্পিনার

প্রিয় ডেলিভারি : বল টার্ন করাতে বেশি পছন্দ করি

প্রিয় মানুষ : বাবা-মা

প্রিয় ক্রিকেটার : সাকিব আল হাসান, রবীন্দ্র জাদেজা ও নাথান লায়ন

প্রিয় বন্ধু : বিকেএসপি-২০১২ ক্রিকেট ব্যাচ

ক্রিকেটের সেরা মুহূর্ত : গত বছরের প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড