নিজস্ব প্রতিবেদক
‘জিরো টলারেন্স’ নীতির মাঝেও বাংলাদেশে মাদকের ভয়াবহতা নাজুকতর পর্যায়ে পৌঁছেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের কড়া নজরদারিতেও মাদকের ছোবল যেন বেড়েই চলেছে।
গত সাত দিনের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে দেশজুড়ে পৃথক মাদকবিরোধী অভিযানে মোট ৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যার মধ্যে মাদকসেবী ও কারবারি উভয় থাকলেও সংখ্যায় বেশি রয়েছে উঠতি বয়সের তরুণ ও যুবক।
সদ্য বিদায়ী বছরে প্রকাশিত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (আইএনসিবি) প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে একই তথ্য। যেখানে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিশেষ করে বাংলাদেশে ইয়াবা উদ্ধারের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
একই দাবি বাংলাদেশি গবেষকদেরও। তারা বলছেন, দেশের ৬৮ হাজার গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ৭৩ লাখেরও বেশি মাদকাসক্ত। যার মধ্যে ৯১ শতাংশই কিশোর, তরুণ ও যুবক বয়সী। এছাড়া মাদকাসক্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারিদের মাধ্যমে মাদকাসক্তদের এই বিপুল পরিমাণ মাদকের জোগান আসে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে। যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাদক পাচার হয় কক্সবাজারের টেকনাফ, সাতক্ষীরা ও যশোরের বেনাপোল সীমান্ত এলাকা দিয়ে। দেশীয় অভ্যন্তরীণ মাদক কারবারিদের মাধ্যমে যা পরবর্তীকালে সরবরাহ করা হয় সারাদেশে।
যদিও সীমান্তবর্তী এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রতিনিয়তই মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে, তবুও আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী চক্রের সহায়তায় নিত্য নতুন কৌশলে দেশে আসছে মাদক। যার মধ্যে ইয়াবা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ ও ভারতীয় সিগারেট অন্যতম।
সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফ বিজিবির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শুধু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ৯ কোটি ৪৫ লাখ ১২ হাজার ৪৫৫ টাকার মাদকদ্রব্য ও চোরাই পণ্য জব্দ করেছে টেকনাফ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন। যার মধ্যে সম্পৃক্ত রয়েছে নারী মাদক কারবারিরাও। যারা প্রতিনিয়তই দেশে আনছে মরণ নেশা ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।
পৃথক এসব ঘটনায় ১৪ জনকে আটকসহ ১৭টি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এরই মধ্যে গত সোমবার (২ মার্চ) কক্সবাজারের রামুতে অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ সামিরা বেগম (২৫) নামে এক নারী মাদক কারবারিকে আটক করে পুলিশ। ওই সময় তার কাছ থেকে জব্দ করা হয় ইয়াবা বিক্রির নগদ ২৫ লাখ টাকা।
এর এক দিন আগে রবিবার (১ মার্চ) দিবাগত রাতে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার পশুর নদীর সাইলো এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩০০ বোতল বিদেশি মদসহ তিন চীনা নাগরিক ও দুই বাংলাদেশি মাদক কারবারিকে আটক করে কোস্ট গার্ড।
এভাবেই আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিদের সঙ্গে জড়িয়ে দেশীয় মাদক কারবারিরা বাংলাদেশে আনছে মাদক। ফলে মরণ নেশায় একে একে ঝুঁকে পড়ছে দেশের যুবসমাজ। এতে সমাজেও এর বিরূপ প্রভাব প্রতিফলিত হতে শুরু করেছে। যার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো নেশাগ্রস্ত হয়ে খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা।
সম্প্রতি মাদক সেবন করে ঠাকুরগাঁওয়ে নিজের বাবাকে মারধর করে এক যুবক। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাকে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতেই নড়াইলে মাদকসেবনের পর নেশাগ্রস্ত হয়ে নিজের মায়ের সঙ্গে যোগসাজশ করে স্ত্রী আশা খাতুনকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে রফিকুল নামে এক ব্যক্তি।
আরও পড়ুন : আনোয়ারায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ
এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহলের দাবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বাহিনীতে পর্যাপ্ত লোকবল ও লজিস্টিকস দিয়ে সেগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দুর্নীতি দূর করে দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে অনেকাংশেই মাদক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড