মো. জাবেদ শেখ, শরীয়তপুর
ভোগান্তির আরেক নাম শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরিঘাট। এই ঘাটে প্রতিনিয়ত নানামুখী ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাতায়াতকারীরা যাত্রীরা।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত শরীয়তপুর-চাঁদপুর এই ফেরিঘাট। এখানে সড়কের বেহাল অবস্থা, নদীতে নাব্যতা সংকট, যাত্রী ছাউনির অভাব, বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজি, স্পেশাল সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, সিরিয়াল ভঙ্গ করাসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার ফলে এ ঘাটে চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তির মাত্রা চরম আকার ধারণ করছে।
বিষয়গুলো নিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী, চালক ও মালিক পক্ষের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করলেও রহস্যজনক কারণে এগুলো সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের মাঝে। ফলে দিনের পর দিন এ অনিয়মগুলো নিয়মে পরিণত হতে চলছে।
সোমবার (১৯ জানুয়ারি) সরেজমিনে জানা গেছে, শরীয়তপুর চাঁদপুর ফেরি ঘাট দিয়ে প্রতিদিন খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মালবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন পারাপার হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে খুলনা বিভাগে যাতায়াতের খুব সহজ পথ এটি। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সারা রাত ফেরী চলাচল বন্ধ থাকার কারণে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের।
সড়কের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে তৈরি হয়েছে ট্রাক, কার্গো পিকাপসহ বিভিন্ন যানবাহনের দীর্ঘ সারি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত পরিমাণে ফগ লাইট ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য কুয়াশার কারণেই ফেরী চলাচল বন্ধ থাকে এ ঘাটে। আর যাত্রীদের জন্য ছাউনির ব্যবস্থা না থাকায়, সারারাত যাত্রীদের পোহাতে হয় শীতের সীমাহীন দুর্ভোগ।
বাস যাত্রী শামীম জামান বলেন, ফেরিতে লাইট না থাকায় কুয়াশার কারণে চলাচল করতে পারছেনা। এছাড়া এ ঘাটে বসার জন্যও ভাল একটি ছাউনির ব্যবস্থা নেই।
তবে ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু ফগ লাইট নয়, নদীতে পানি কম থাকায় নাব্যতা সংকটের কারণেই ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
এ দিকে শরীয়তপুর সদরের মনোহর বাজার থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থার কারণে সড়ক পথেও যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি উল্টে পড়ে থাকে এ সড়কে। বর্ষার কাঁদা-পানির পর বর্তমানে ধুলাবালিতে অসহনীয় হয়ে উঠেছে যাত্রী, চালক ও সড়কের আশেপাশে বসবাসকারী জনসাধারণের জীবন।
বিশেষ করে ওই রাস্তার বেইলি ব্রিজগুলো যান চলাচলের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিছুদিন পরপরই দুর্ঘটনা ঘটে এ ব্রিজ গুলোতে। এছাড়া একটি চাঁদাবাজ চক্র সুযোগ পেলেই বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তায় চাঁদাবাজি শুরু করে।
ট্রাক চালক আলম বেপারী বলেন, রাস্তার বেহাল দশার কারণে এমনিতেই খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়। তার মধ্যে আবার সুযোগ পেলেই নারায়পুরসহ বিভিন্ন নির্জন পয়েন্টে একটি চক্র গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি করে।
শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিক কাদির বলেন, আমাদের ইব্রাহীমপুর ফেরি ঘাট থেকে মনহোর পর্যন্ত সড়কটিতে বর্তমানেও কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া যে বেইলি ব্রিজগুলো রয়েছে সেগুলো এবং সড়কটি মেরামতের কাজ আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে পুরো দমে শুরু হবে।
অন্য দিকে স্পেশাল সার্ভিসের নামে টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল ভঙ্গ করা এবং চালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এখন শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরিঘাটে সুশৃঙ্খল নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া কাঁচামাল, মাছ, গ্যাস ও গরু বহনকারী ট্রাক থেকে প্রতিনিয়তই অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে একটি চক্র।
ট্রাক চালক জাহিদ চৌকিদার বলেন, তিন দিন ধরে ঘাটে এসে বসে আছি কিন্তু আমরা পারাপার হতে পারছি না। এদিকে ঘাটের লোকজন অতিরিক্ত টাকা নিয়ে সিরিয়াল ভেঙে গাড়ি পার করে দিচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই।
ঘাটের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাটে দায়িত্বরত বিআইডাব্লিউটিসির সহকারী ম্যানেজার আব্দুল মমিন বলেন, মূলত ঘন কুয়াশা ও ডুব চরের কারণে রাতে অনেক সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। তবে উপরস্থ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে, তারা শীঘ্রই এখানে ফগ লাইটের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে। আমরা আমাদের নিয়ম অনুযায়ী গাড়ি থেকে ভাড়া আদায় করছি।
এ বিষয়ে ঘাট ইজারাদার জিতু মিয়া বেপারী বলেন, ঘন কুয়াশা, রাস্তার বেহাল দশাসহ বিভিন্ন করণে এ ঘাট দিয়ে গাড়ি চলাচল খুবই কম। এ ঘাটে কাঁচামাল ও পচনশীল গাড়ি আগে ছেড়ে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সিরিয়াল ঠিক রাখার দায়িত্ব সম্পূর্ণ টিসি কর্তৃপক্ষের হাতে। এছাড়া রাস্তায় চাঁদাবাজির বিষয়টি আমি প্রশাসনকে অবগত করেছি।
আরও পড়ুন : লক্ষ্মীপুরে রশিদ হত্যা মামলায় এক আসামির যাবজ্জীবন
এ বিষয়ে সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, ঘন কুয়াশা ও নাব্যতা সংকটে এ ঘাট দিয়ে ফেরি চলা ব্যাহত হওয়ায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছে। স্পেশাল সার্ভিসের নামে সিরিয়াল ভঙ্গ করে গাড়ি পারাপারের বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে দমন করেছি।
ওডি/এমবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড