• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিএফআরআই উদ্ভাবিত শিং মাছের নিবিড় চাষে বিপ্লব

  শাহীন সরদার, বাকৃবি প্রতিনিধি

১১ জানুয়ারি ২০২০, ১০:২৮
শিং মাছ
চাষকৃত শিং মাছ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএফআরআই) গবেষণালব্ধ ফলের ভিত্তিতে উদ্ভাবিত শিং মাছের পুকুরে নিবিড় চাষে মৎস্য চাষে এক নবদিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। ময়মনসিংহ সদরের মাঝিহাটি গ্রামের আবু রায়হান নামের একজন খামারি বিএফআরআইয়ের এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ৫ মাসে ৩২ শতাংশের পুকুর থেকে খরচ বাদে আয় করেছেন ১১ লক্ষ টাকা।

জানা যায়, তিনি ২০১৯ সালের জুন মাসে তার ৩২ শতাংশের পুকুরে শতাংশ প্রতি চার গ্রাম ওজনের শিং মাছের ৫০০০টি পোনা মজুদ করেন। চাষকালীন সময় পাঁচ মাস পর আহরণকৃত মাছের গড় ওজন হয় ৫২ গ্রাম। শতাংশ প্রতি ২৮০ কেজি করে মোট উৎপাদন হয় প্রায় ৯০০০ কেজি। প্রতি কেজি মাছ ২৮০ টাকা বিক্রি করে মোট আয় করেন প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। এতে ৫ মাসে ৩২ শতাংশের পুকুর থেকে খরচ বাদে মোট আয় করেন ১১ লক্ষ টাকা।

এ বিষয়ে আবু রায়হানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি শুরু থেকেই ইন্সটিটিউটের নিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছের চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন । তিনি বলেন, আমি ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও পরামর্শ গ্রহণ করেছি। পুকুরের ও মাছের নিয়মিত পরিচর্যা ও যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি মাছের জন্য নিয়মিত সুষম খাদ্য সরবরাহ করেছি। এছাড়াও যে বিষয়গুলো খেয়াল রেখেছি তা হলো পুকুরে একই আকারের শিং মাছের পোনা মজুদ করা, বিশেষ করে স্ত্রী পোনা মজুদ করা, অধিক ঘনত্বে পোনা মজুদ করা, নিয়মিত চুন ও লবণ প্রয়োগ করা। তাছাড়া, নিয়মিত পানি পরিবর্তন করা হয়েছে ও পুকুরের গভীরতা তুলনামূলক বেশি রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিএফআরআইয়ের কারিগরি সহযোগিতায় শিং মাছের নিবিড় চাষে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মাঝিহাটি পাড়া গ্রাম ছাড়াও ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, নান্দাইল, হালুয়াঘাট, ভালুকা, শেরপুরের নকলা ও নোয়াখালীর চাটখিলের মৎস্য চাষিরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিং মাছের নিবিড় চাষাবাদ শুরু করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএফআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এইচ এম কোহিনুর বলেন এ ধরনের চাষাবাদের ক্ষেত্রে পুকুরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে যাতে পুকুরের পানি কোনোভাবেই নষ্ট না হয়। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ দিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হয়। ক্ষতিকর জলজ প্রাণির প্রবেশ রোধে পুকুরের চারপাশে ফিল্টার জাল দিয়ে বেষ্টনী দেওয়া যেতে পারে। খামারে চাষকালীন সময়ে মাছ রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে পুকুরের জৈব নিরাপত্তা ও রোগ প্রতিরোধী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। সাধারণত পোনা মজুদের ছয় থেকে সাত মাস পর মাছ আহরণ করতে হয়। এ সময়ে মাছের গড় ওজন ৫৫ থেকে ৬৫ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। পুকুর পুরোপুরি শুকিয়ে শিং মাছ আহরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ পদ্ধতি অনুসরণে ৫০ শতাংশের পুকুর হতে ৭ মাসে ৮ থেকে ৯ টন শিং মাছ উৎপাদন করা যায়।

সাধারণত মৎস্য চাষিরা আধা নিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করে থাকেন। বিএফআরআইয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে চাষকৃত অন্যান্য মাছের তুলনায় শিং মাছের নিবিড় চাষ অধিক লাভজনক। শিং মাছের নিবিড় চাষের জন্য ২০ থেকে ৫০ শতাংশ আয়তনের ছায়াযুক্ত গভীর পুকুর নির্বাচন করতে হয়। সম্পূর্ণরূপে পুকুর শুকিয়ে তলা থেকে ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস করার লক্ষ্যে প্রতি শতাংশে ৫০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হয়। এরপর পুকুর বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ১ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত পূর্ণ করে পোনা মজুদ করা হয়। পুকুর পানি দিয়ে পূর্ণ করার পর, চুন প্রতি শতাংশে ৫০০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করা হয়। শিং মাছের নিবিড় চাষ ব্যবস্থাপনায় প্রতি শতাংশে ৪ থেকে ৫ গ্রাম ওজনের ৩৫০০ থেকে ৪০০০টি সুস্থ-সবল ও গুণগত মানসম্পন্ন শিং মাছের স্ত্রী পোনা প্রস্তুতকৃত পুকুরে মজুদ করা হয়। সাধারণত কম তাপমাত্রায় সকালে বা সন্ধ্যায় পোনা মজুদ করাই উত্তম।

পোনা মজুদের পরের দিন থেকে প্রাণীজ প্রোটিন সমৃদ্ধ সম্পূরক খাদ্য মাছের দেহ ওজনের শতকরা ১২ থেকে ১৩ হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সম্পূরক খাদ্য দুই ভাগ করে সন্ধ্যায় ও সূর্য ওঠার আগে প্রয়োগ করতে হয়। শিং মাছ চাষের জন্য পানির গুণাগুণ উপযোগী মাত্রায় রাখা করণীয়। এ জন্য নিয়মিতভাবে পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পোনা মজুদের এক মাস পর হতে সঠিকভাবে ১৫ দিন অন্তর সঠিক প্রতি শতাংশে ১০০ গ্রাম চুন ও পরবর্তী ১৫ দিন পর ৪০০ গ্রাম লবণ প্রয়োগ করতে হয়। অন্যথায় পানির গুণাগুণ ধরে রাখা যায় না।

আরও পড়ুন- যশোরের যশ খেজুরের রস

এ প্রসঙ্গে ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, বাংলাদেশে শিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। এই মাছে ফ্যাটের পরিমাণ কম এবং প্রচুর পরিমাণে উচ্চমানের সহজপাচ্য আমিষ থাকায় সবার কাছে এ মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। রুইজাতীয় মাছের চেয়ে এদের বাজার মূল্য অনেক বেশি। বিএফআরআইয়ের গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে নিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করা হলে মৎস্য খাতে এক নতুন মাত্রা সংযোজন হবে। এ প্রযুক্তি এখন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। ফলশ্রুতিতে দেশের মানুষের কাছে শিং মাছ আয়ের সহজলভ্য হবে পাশাপাশি চাষিরাও সঠিকভাবে আর্থিক লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ওডি/এসজেএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড