• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কার্ড : এ যেন একের ভেতর দশ!

  প্রযুক্তি ডেস্ক

০৫ আগস্ট ২০১৯, ১৪:৪৬
কার্ড
(ছবি: সংগৃহীত)

আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর পূর্বে মানুষ লেনদেনের জন্য বিনিময় প্রথা ব্যবহার করত। এরপর প্রথম মুদ্রার প্রচলন করেন লিডিয়ার রাজা। তুরস্কের রাজা এই লিডিয়ার হাত ধরেই পৃথিবীর মানুষ প্রথম মুদ্রার দেখা পেয়েছিল। পরবর্তীতে মুদ্রা লেনদেন পদ্ধতিতে আসে নানা পরিবর্তন। আর এখন তা এই কাগজের মুদ্রায় পরিণত হয়েছে।

তবে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে এখন আর সেই নগদ টাকায় লেনদেন হয় না। কেননা মানুষের এই লেনদেনের ধরন বদলে গেছে। বর্তমানে মানুষ এখন কার্ডের মাধ্যমেই লেনদেন করেন। তবে প্রতিটি মানুষের এই কার্ডে লেনদেনের কারণ হয়তো ভিন্ন, কিন্তু উদ্দেশ্য একই। কেননা এই এক কার্ড দিয়ে আপনি অনেক ধরনের লেনদেন করতে পারেন। অনেকটা একের ভেতর দশের মতোই।

চলুন এমন কিছু মানুষের কথা জেনে নেই, যারা কেন এই কার্ড ব্যবহার করেন।

মোহাম্মদ রেদওয়ান। স্ট্যান্ডার্ড ফিনিশ ওয়েল কোম্পানিতে অ্যাসিসেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দুটিই ব্যবহার করেন। কেন এই দুটি কার্ড ব্যবহার করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, কার্ড ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এতে নগদ টাকা বহন করতে হয় না। এছাড়া প্রায়ই গেট টুগেদার, পরিবারের জন্য শপিংসহ নানা কাজে টাকার দরকার হয়। এক্ষেত্রে নগদ টাকা বয়ে বেড়ানোর চেয়ে কার্ডে লেনদেন করা অনেক সহজ। এছাড়া অনেক জায়গায় কার্ডে পেমেন্ট করলে নানা ছাড়ও পাওয়া যায়। তাই তিনি এই কার্ড ব্যবহার করেন।

আল-আমিন কবীর, দেশে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করেন। অধিকাংশ সময় তাকে বাইরের দেশগুলোতে টাকা পয়সা লেনদেন করতে হয়। আর এ কারণেই তিনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। পাশাপাশি দেশে বসেই তিনি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত কাজের সমাধান করেন। আর এই কাজ বাবদ যে টাকা পান, তা ক্রেডিট কার্ডে এসে জমা হয়। ফলে খুব সহজেই দেশে বসে তিনি এই টাকা তুলে খরচ করতে পারেন।

দেশে বসে আমদানি–রপ্তানির ব্যবসা করেন ফারহান তানভীর। প্রায়ই তাকে ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে যেতে হয়। এছাড়া বিদেশি ক্লায়েন্টের পাওনাও পরিশোধ করতে হয়। নগদ টাকা দিয়ে এসব লেনদেন করা খুবই ঝামেলা। তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেই তিনি এসব লেনদেন করে থাকেন। বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করায় ঝামেলা কমে গেছে। এখন আর পাওনাদারের টাকা পরিশোধের জন্য কারও দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। এসব সুবিধাই তিনি ক্রেডিট কার্ডে পেয়ে থাকেন।

তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে একটি ট্যুর এজেন্সি কোম্পানি খুলেছে মেহেদি হাসান। আর ব্যবসাও ভালোই যাচ্ছে। বিভিন্ন ট্যুর গ্রুপ নিয়ে দেশ বিদেশ চষে বেড়াচ্ছেন। আর টাকা পয়সারও লেনদেন হচ্ছে ভালোই। তবে বেশিরভাগই কার্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘গ্রাহকেরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ঘুরতে যান। তারা আবার এখান থেকে ভ্রমণের টিকিটও কাটেন। তাই তাৎক্ষণিক সেবা দিতে আমরা ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিই। এখানে বসেই আমরা হোটেল, সারা বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইনের টিকিট কেটে দিতে পারি। এছাড়া এসব কার্ডে টিকিট কাটলে ছাড়ও পাওয়া যায়। যার একটি অংশ গ্রাহককে দিই।’

একবার বেতনের টাকা তুলে রাতে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় ছিনতাইয়ের শিকার হন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ইমরুল হাসান ইরুন। এরপর থেকে তিনি পকেটে আর বেশি টাকা রাখেন না। বলেন, বেশি টাকা থাকা মানে আলাদা একটা দুশ্চিন্তা। এজন্যই এই কার্ড ব্যবহার করি।

সংসার সামলে সবার জন্য ঈদসহ যে কোনো উৎসবে কেনাকাটাও সারতে হয় আসিয়া আফরিনকে। আর তার ছোট বাচ্চা নিয়ে এই কেনাকাটার জন্য নগদ টাকা বহন করাও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি নানা উৎসবে কার্ডে কেনাকাটায় নানা ছাড়ও পাওয়া যায়। নিমিষেই এসব ঝুটঝামেলা থেকে রেহাই দেয় ব্যাংকের কার্ড।

গ্লোবাল এইচটি নামক প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা বলেন,‘আমাদের এখান থেকে অনেকে বিদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। আর আমরা কার্ডের মাধ্যমে তাদের টাকা পরিশোধে সহায়তা করি। এখান থেকেই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে চীনসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তির খরচ, টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচ পরিশোধ করি। এসব কাজে ক্রেডিট কার্ড অনেক সহায়ক।’

অবন্তিকা রায় দেশের বাইরে জার্মানিতে পড়াশোনা করেন। তিনি বললেন, প্রতি মাসে স্কলারশিপের টাকা ক্রেডিট কার্ডে এসে জমা হয়। আবার সেই টাকা থেকে খরচ করতে তাকে বেগ পোহাতে হয় না। এছাড়া এই কার্ড দিয়ে তিনি বিদেশে কেনাকাটা করেন। শুধু তাই নয়, দেশে এসেও তিনি এই কার্ড ব্যবহার করেন। আর এভাবে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ক্যাশ ব্যাক পান।

হুট করেই মাঝরাতে রাসেল আহমেদের চার বছর বয়সী শিশু অসুস্থ হন। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে অ্যাপেন্ডিসের জন্য দ্রুত অস্ত্রোপাচারের কথা বলেন। কিন্তু মাঝ রাতে তার কাছে একসঙ্গে এত টাকা ছিল না। পরে এক বন্ধুর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে তার সন্তানের জীবন বাঁচান।

তিনি বলেন, নিয়মিত টাকা পরিশোধ করলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা অনেক উপকারী। এছাড়া যে কোনো স্থান থেকে সুবিধামতো টাকা তোলা যায়। আর ওই ঘটনার পর থেকেই তিনি এই তিনি নিয়মিত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন।

ওডি/টিএফ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড