• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গবেষণার নতুন ক্ষেত্র অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ

  শাহীন সরদার, বাকৃবি প্রতিনিধি

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:১৪
গবেষণা
অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

প্রচলিত মৎস্য সম্পদে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ যেমন কাঁকড়া, কুচিয়া, শামুক, ঝিনুক, সিউইড ইত্যাদি উন্নয়নে সাম্প্রতিককালে গবেষণা জোরদার করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) থেকে অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে গবেষণা করা হচ্ছে।

বিএফআরআই কর্তৃক এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলমান এসব প্রকল্পসমূহ হচ্ছে- সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা জোরদারকরণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, সিউইড চাষ ও মূল্য সংযোজিত পণ্য উৎপাদন প্রকল্প এবং শামুক-ঝিনুকের চাষ ও সংরক্ষণ প্রকল্প।

এছাড়া ইনস্টিটিউটের আওতায় অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ যেমন ‘ঝিনুকে মুক্তা উৎপাদন’ এবং ‘কাঁকড়া ও কুচিয়ার প্রজনন ও চাষ’ শীর্ষক ২টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্প্রতি সমাপ্ত হয়েছে। চলমান এসব উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ওয়েস্টার ও সিউইড চাষ এবং বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন শামুক-ঝিনুকের প্রজনন ও চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে।

তাছাড়া, ইনস্টিটিউট থেকে ইতোমধ্যে দেশে প্রথমবারের মত হ্যাচারিতে শীলা কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে কুচিয়ার পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে কুচিয়ার চাষাবাদ ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন অপ্রচলিত জলজসম্পদ সিউইডের (সামুদ্রিক শৈবাল) চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিএফআরআই ইতোমধ্যে সফলতা অর্জন করেছে। ইনস্টিটিউট হতে পরিচালিত গবেষণায় কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে এ পর্যন্ত ১৩২ প্রজাতির সিউইড শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ প্রজাতির সিউইড বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন। ইনস্টিটিউট থেকে ইতোমধ্যে ৩ প্রজাতির সিউইড চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এসব সিউইড উন্নত খাদ্যমান ও ওষধি গুণসম্পন্ন এবং প্রাকৃতিক মিনারেল সমৃদ্ধ। যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। খাদ্য ও ঔষধ শিল্পে সিউইড কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৫ মাস সিউইড চাষ করা যায়। তবে সিউইড চাষের সর্বোচ্চ অনুকূল সময়কাল জানুয়ারি থেকে মার্চ।

গবেষণায় সেন্টমার্টিনে ৯০ দিনে প্রতি বর্গকিলোমিটার জায়গায় ৩০ কেজি পর্যন্ত সিউইড উৎপাদিত হয়েছে যা পার্শ্ববর্তী দেশের উৎপাদনের (৩৬ কেজি) খুবই কাছাকাছি। বাণিজ্যিকভাবে সিউইড চাষ সুনীল অর্থনীতিতে (ব্লু-ইকোনোমি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেছেন বিজ্ঞানীরা। ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত সিউইড চাষ প্রযুক্তি ইতোমধ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

অপরদিকে, দীর্ঘ গবেষণার পর বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীরা হ্যাচারিতে শীলা কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছেন। বর্তমানে প্রকৃতি থেকে শীলা কাঁকড়ার পোনা সংগ্রহ করে মূলত সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলে এর চাষাবাদ করা হয়। ফলে প্রাকৃতিক উৎসে শীলা কাঁকড়ার পোনা প্রাপ্তি সাম্প্রতিককালে হুমকির মধ্যে পড়েছে।

এ প্রেক্ষিতে বিএফআরআই এর খুলনার পাইকগাছাস্থ লোনাপানি কেন্দ্র ২০১৫ সাল থেকে হ্যাচারিতে শীলা কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনের জন্য গবেষণা শুরু করা হয়। দীর্ঘ গবেষণার পর চলতি অর্থ বছরে (২০১৮-১৯) গবেষকগণ হ্যাচারিতে শীলা কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছেন। এতে দেশে কাঁকড়া চাষ সহজতর হবে এবং প্রকৃতি থেকে নির্বিচারে কাঁকড়ার পোনা আহরণ হ্রাস পাবে।

অনুরূপভাবে, গবেষণা মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে কুচিয়ার পোনা উৎপাদনে ইনস্টিটিউটের সফলতা অর্জিত হয়েছে এবং দেশীয় প্রচলিত খাবারে ক্রমশ কুচিয়াকে অভ্যস্ত করা হচ্ছে। কুচিয়ার পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হওয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে কুচিয়ার নির্বিচার আহরণ হ্রাস পাবে এবং এর চাষাবাদ সহজতর হবে।

গবেষণার মাধ্যমে সম্প্রতি ইনস্টিটিউট থেকে ইমেজ মুক্তা উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৭-৮ মাসেই ঝিনুকে ১টি পূর্ণাঙ্গ ইমেজ মুক্তা তৈরি করা সম্ভব। সাধারণত মোম, খোলস, প্লাস্টিক, স্টিল ইত্যাদি দিয়ে চাহিদা মাফিক তৈরিকৃত নকশাকে ঝিনুকের ম্যান্টাল টিস্যুর নিচে স্থাপন করে ইমেজ মুক্তা তৈরি করা হয়। ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও সিলেটের কয়েকজন নারী ও যুবক ইমেজ মুক্তা চাষ শুরু করেছেন।

আরও পড়ুন : কক্সবাজারের মাটি ও পানিতে ইউরেনিয়ামের সন্ধান

অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদের মধ্যে ঝিনুকের পাশাপাশি অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন সামুদ্রিক ওয়েস্টার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েস্টারকে স্থানীয় ভাষায় ‘কস্তুর’ বলা হয়। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ওয়েস্টার ভক্ষণে অভ্যস্ত না হলেও উপজাতীয়দের কাছে ওয়েস্টারের মাংসল অংশ সুস্বাদু খাবার হিসেবে বিবেচিত। ওয়েস্টার অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, খনিজ ও ভিটামিন রয়েছে। এ ছাড়াও ওয়েস্টারে উচ্চমাত্রায় অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং নিম্ন রক্তচাপের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। ওয়েস্টারে বিদ্যমান ফ্যাটি এসিড শিশুদের মস্তিষ্ক গঠন ও বার্ধক্যকে প্রতিহত করে।

এ বিষয়ে একুশে পদক প্রাপ্ত (২০২০) বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ কাঁকড়া, কুচিয়া, শামুক, ঝিনুক ও সিউইড আমাদের দেশে খাবার হিসেবে জনপ্রিয় না হলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর প্রচুর চাহিদা ও মূল্য রয়েছে। এ বিবেচনায় সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণা জোরদার করা হয়েছে। এতে দেশে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড