‘অমর’ যে প্রাণী!

অমরত্ব লাভের আশায় মানুষ কত কিছুই না করছে যুগ যুগ ধরে। মানুষ মাত্রই মরণশীল, তাই সেটি সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষ না পারলেও একটি ছোট্ট প্রাণী ঠিকই অমরত্ব লাভ করেছে। এমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

ছোট্ট এই প্রাণীটি হলো ব্যাকওয়ার্ড এজিং জেলিফিশ। প্রাণীবিদরা যাকে ডোরনি (Turritopsis dohrnii) নামে চেনেন। বিশেষ এক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়ায় জেলিফিশের এই ক্ষুদ্র প্রজাতিকে ‘অমর জেলিফিস’ নামে চিহ্নিত করা হয়। আক্ষরিক অর্থেই কিন্তু এরা নিজেদের প্রায় ‘অমর’ করে রেখেছে। মৃত্যুর কোনরকম আশঙ্কা থাকলে, এর বার্ধক্যের উল্টো পথ ধরে।

এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের গবেষকরা জানান, এই জেলিফিশের শরীরের কোনো অংশে আঘাত লাগলে কিংবা অসুস্থ হলে এতা ‘পলিপ দশা’ তে চলে যায়। চারপাশে মিউকাস মেমব্রেন তৈরি করে পলিপের আকারে গুঁটি বাঁধে। এভাবে এরা তিন দিন পর্যন্ত থাকে। আর এ উপায়ে কমিয়ে ফেলে নিজেদের বয়স।

আরও পড়ুন : গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ তৈরিতে প্রাণীদের এ ব্যবহারগুলো জানলে অবাক হবেন আপনিও!

এ সময়ের মধ্যে তারা দেহের সব কোষকে নতুন কোষে রূপান্তর করে আর নিজেদের বয়স কমিয়ে ফেলে। এভাবে নিজেদের রূপান্তরের মাধ্যমে তারা নিজেদের বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখে। যদিও এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে।

আমেরিকার ম্যাসাচুটেসের অ্যাবভিয়ে'র বিজ্ঞানী কে রায় সরকার বলেন, “এদের অমর বলা হয় কারণ কোষ রূপান্তরের মাধ্যমে এরা নিজেদের বয়স পিছিয়ে দিতে পারে। সেদিক থেকে রিজেনারেটিং ফ্ল্যাটওয়ার্মও অমর। কেননা, এদের শরীরের কোনো অংশ কেটে দু’টুকরো করলে এরা দুটো পৃথক ফ্ল্যাটওয়ার্ম তৈরি করে। শরীরের বয়স হলেও স্টাডি টার্টলদের ক্ষেত্রেও অর্গ্যানের বয়স কিন্তু বাড়ে না।”

অমর জেলিফিশগুলো অবশ্য অন্য কোনো বড় মাছ খেয়ে ফেললে কিংবা হঠাৎ কোনো বড় রোগে আক্রান্ত হলে মারা যায়। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে এদের মৃত্যু হয় না। তবে পূর্ণবয়স্ক না হওয়ার আগে এদের দেহে কোষ পরিবর্তনের ক্ষমতা আসে না। বংশবিস্তারের ক্ষমতা সম্পন্ন জেলিফিশগুলোই একমাত্র অমর, এমনটাই দাবি বিজ্ঞানীদের।

ভূমধ্যসাগর ও জাপানের সমুদ্রে এই জেলিফিশগুলো পাওয়া যায়। এদের নিয়ে গবেষণা করেছেন জাপানের কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।