সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
আমাদের মাথার খুলির পুরোটা জুড়ে যে মস্তিষ্ক, তার মাত্র দশ শতাংশ আমরা ব্যবহার করতে পারি— এমনটাই ভেবে থাকেন অনেকে। মস্তিষ্কের পুরোটা ব্যবহার করা গেলে মানুষ খুব অসাধারণ কিছু করতে পারতো, এমন চিন্তার ফলাফল হিসেবেই যুগে যুগে মানুষ তৈরি করেছে বই, চলচ্চিত্র আর কাল্পনিক সব বিষয়বস্তু।
২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘লুসি’ মুভিটির কথা মনে আছে? সেখানে মাদকের মাধ্যমে একজন নারী নিজের পুরো মস্তিষ্ক ব্যবহার করার সুযোগ পায়। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, মানুষ আসলে আর মস্তিষ্কের পুরোটাই প্রাত্যাহিক জীবনে ব্যবহার করে। কীভাবে? চলুন, বিস্তারিত দেখে নেওয়া যাক।
স্নায়ুমনোবিজ্ঞান-
মস্তিষ্কবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। কোনটা রঙ চিনতে, কোনটা গন্ধ নিতে। যেটা কিনা মানুষের মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করার ব্যাপারটিকে ভুল প্রমাণ করে। বরং পুরো মস্তিষ্কই এখানে একে অপরের সাথে কাজ করে।
কোনো স্নায়ুতে হয়তো এই কার্যক্ষমতা কম থাকে, কোনো স্নায়ুতে বেশি। তবে একেবারে স্থির আর নিশ্চল স্নায়ু খুঁজে পাওয়াটা কঠিন। মূলত, কাজের উপরে ভিত্তি করে মস্তিষ্কের একেকটি অংশ বেশি সচল হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের একটি অংশ উজ্জ্বল এবং একটি অংশ ধূসর মানে এই নয় যে, ধূসর অংশটি ব্যবহৃত হচ্ছে না। মূলত, এই অংশটি কম ব্যবহৃত হয়।
সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো, যদি মস্তিষ্কের ১০ শতাংশ ব্যবহারের এই ব্যাপারটি সত্যি হতো, তাহলে মানুষ স্ট্রোক করলে, কোনো কারণে ভয় পেলে তার প্রভাব মস্তিষ্কের অব্যবহৃত অংশের উপরে পড়তো না। কিন্তু সেটা পড়ে। মস্তিষ্কের একটি ছোট্ট সমস্যা পুরো মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। ফলে, মস্তিষের পুরোটা যে একে অন্যের সাথে যুক্ত সেটা সহজেই বোঝা যায়।
শক্তির ব্যবহার-
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরের মোট ওজনের মাত্র ২ শতাংশ তার মস্তিষ্ক থেকে আসে। তবে শরীরের শক্তির প্রায় ২০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় মস্তিষ্কের কাজে। অন্যদিকে, মাছ বা অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে শক্তি ব্যবহৃত হয় ২ থেকে ৮ শতাংশ। এখানে খুব সহজেই বোঝা যায় যে, মানুষের মস্তিষ্ক যদি পুরোটাই ব্যবহৃত না হতো, তাহলে এর এতোটা শক্তিরও প্রয়োজন হতো না।
ভুল ধারণার উৎস-
এখন প্রশ্ন হলো, এই ভুল ধারণাটি কীভাবে ছড়ালো? মানুষ তার মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারে, এই ধারণাটি জনপ্রিয় কীভাবে হয়েছে তা জানা না গেলেও এর উৎস সম্পর্কে ধারণা করাই যায়। মনে করা হয়, মানুষকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে এবং স্নায়ুবিজ্ঞানের কিছু ভুল ধারণা— এই দুটোর উপরে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এই কথাগুলো।
‘আমার হাতে কিছু করার নেই। যদি আমি আমার পুরোটা মস্তিষ্ক ব্যবহার করতে পারতাম, তাহলে আমিও ভালো কিছু করতাম’— এই চিন্তাটি আমাদের অনেকভাবে স্বস্তি প্রদান করে। আর এটিই ‘মস্তিষ্কের ১০ শতাংশ’ ব্যবহার ধারণাটিকে আরো জনপ্রিয় করে তুলেছে বলে মনে করা হয়।
অন্যদিকে, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা নিজেদের মতামত দিয়েছেন, কখনো কোন রোগীর মস্তিষ্কের কিছু অংশকে কাজ না করতে দেখেছেন। এজন্য তাদের কাছ থেকেও এই ভুল ধারণাটি এসেছে। মূলত, মস্তিষ্কের কোন অংশ কাজ করছে না, তারমানে এই নয় যে, সেটি স্থির। নির্দিষ্ট কারণেই মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ কাজ করে। এই ঘটনার পেছনে এটিও বড় একটি ভূমিকা পালন করে।
সবমিলিয়ে, পুরো ব্যাপারটি নিয়েই আরও কাজ করার আছে। মস্তিষ্কের কার্যক্রম সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বোঝার এখনো অনেক বাকি আছে। সে পর্যন্ত নাহয় অপেক্ষা করা যাক!
সূত্র- থটকো
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড