জুবায়ের আহাম্মেদ
চলতি বছর আবারও মহামারী আকারে ধেয়ে আসা ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্ভবত প্রতিরোধ গড়তে যাচ্ছে মানবজাতি। ২০১৬ সালের পর নতুন করে কঙ্গোতে ইবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর পরপরই নতুন করে ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে নতুন করে প্রায় ১৬২৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ভাইরাসঘটিত এই রোগ। এর আগে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত গুইনা, সিয়েরা লিওন এবং লাইবেরিয়াতে প্রায় ১১ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ইবোলা। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। ইবোলার উৎপত্তি এবং প্রথম ভ্যাকসিন ইবোলা রোগের নাম সাম্প্রতিক সময়ে বেশ জোরেশোরে শোনা গেলেও এর আবির্ভাব ইতিহাসের পাতায় বেশ আগে থেকেই। ১৯৭৬ সালে কঙ্গোর ইবোলা নদীর তীরে প্রথম এই রোগের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। উৎপত্তিস্থলের নাম থেকেই এই ভাইরাসের নাম করা হয় ইবোলা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্তদের মাঝে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু একেবারেই নিশ্চিত থাকে।
চলতি বছর নতুন করে ইবোলা সংক্রমণ বেড়ে যাবার পরপরই নিউ জার্সির মার্ক অ্যান্ড কোম্পানির একটি অনুমোদনহীন ভ্যাকসিনের প্রতি আবার নতুন করে জোর প্রদান করছেন চিকিৎসকরা। এটিই প্রথমবারের মতো কোনো ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হিসেবে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে। ট্রায়ালে আশানুরূপ সাফল্য এবং ব্যাপক বিস্তৃতির কল্যাণে এখনই একে ‘ত্রাতা’ বা স্যাভিওর হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন কঙ্গোতে নিযুক্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চিকিৎসক এবং কর্মীরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এর জরুরি স্বাস্থ্য বিভাগের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ডা. মাইক রায়ান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে এই ভ্যাকসিনটি জরুরি ভিত্তিতে বেশ সফলভাবেই সাড়া দিয়ে চলেছে।
ত্রাতা
‘চলতি সমস্যার বিপরীতে আমাদের সবচেয়ে বড় ত্রাতা বলছি এই কারণে, এখন পর্যন্ত আমরা এই ভ্যাকসিন নিজেদের পদ্ধতিগত ভাবে ব্যবহার করতে পেরেছি এবং সেই সাথে এটি আমাদের চারপাশে বেশ ভালোভাবেই কাজ করে চলেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটি ইবোলার সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে’। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র হিসেবে নতুন ভ্যাকসিন নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন ডা. মাইক রায়ান। তিনি জানান, ‘প্রতিবারই আমরা যখনই ভ্যাকসিন প্রয়োগে বাধার সামনে আসছি ততবারই ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলেছে’।
মার্ক অ্যান্ড কোং এর ভ্যাকসিন ‘আরভিসিভি-জেডইবিওভি’ বিগত সময়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হিসেবে পশ্চিম আফ্রিকায় কর্মরত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রায় ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপর প্রয়োগ করা হয়েছিল। মার্ক কোম্পানি এখন পর্যন্ত সকল ভ্যাকসিনই চ্যারিটি বা দাতব্য কাজে পশ্চিম আফ্রিকায় প্রেরণ করেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর এটি আবারও ইবোলা ভাইরাস নির্মূলের উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
মার্ক কোম্পানির ইবোলা ভ্যাকসিন দলের প্রধান ডা. বেথ আন কলার জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত নতুন করে ইবোলা সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর ১ লাখ ৩৫ হাজার ভ্যাকসিন আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে প্রয়োগ করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ডাটা অনুযায়ী, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর প্রায় ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ইবোলার সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। যদিও এতটা সাফল্যের পর এখনই একে অনুমোদন দিচ্ছেন না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু তাদের বিবৃতি অনুযায়ী এখন পর্যন্ত আফ্রিকার মাটিতে নতুন ‘আরভিসিভি-জেডইবিওভি’ ভ্যাকসিন সবচেয়ে সফল প্রতিরোধক হিসেবে বিবেচিত। তবে এ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আরও বেশি নিঁখুত এবং আরও বিস্তারিত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।
তথ্যসূত্র: সিএনবিসি
ওডি/এএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড