• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গ্রিনল্যান্ডে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের রেকর্ড মাত্রা

  জুবায়ের আহাম্মেদ

৩১ জুলাই ২০১৯, ১৪:৫৮
গ্রিনল্যান্ড

ইউরোপের সাম্প্রতিক তীব্র গরমের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে উত্তর মেরু অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডে। গত সপ্তাহের তীব্র তাপদাহে যুক্তরাজ্যে রেকর্ড অতিক্রম করা তাপমাত্রার ভয়াল থাবায় গ্রিনল্যান্ডে এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বেশি বরফ গলনের আশঙ্কায় আছেন বিজ্ঞানীরা। ইউরোপের গত সপ্তাহের হিট ওয়েভ ধীরে ধীরে উত্তর মেরু অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডের দিকে অগ্রসর হওয়ার কারণে এমন ধারণা করছেন ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের বিশেষজ্ঞ দল।

ডেনমার্কের ‘ড্যানিশ মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের’ আবহাওয়া বিজ্ঞানী মার্টিন স্টিন্ডল তার এক টুইটার বার্তায় জানান, ১৯৫০ সালে তাপমাত্রা রেকর্ড করার পর এবারই গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলনের হার সর্বোচ্চ হতে পারে। যা সর্বকালের ২য় বৃহত্তম স্থানে চলে যাবার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকছে।

সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একই প্রতিষ্ঠানের আরেক জলবায়ু বিজ্ঞানী রুথ মট্রাম জানান, ‘সাধারণত গ্রিনল্যান্ডের বরফ মে মাসের গ্রীষ্মের তাপে গলতে শুরু করে। কিন্তু এ বছর গলন প্রক্রিয়া আরও চার মাস আগে থেকেই দেখা দিয়েছে এবং তা শুরু থেকেই একবারেই ধারাবাহিক মাত্রায় বজায় ছিল। বরফ গলনের এই মাত্রা আধুনিক কালের সব রেকর্ড এরই মাঝে অতিক্রম করে গিয়েছে’।

মট্রাম আরও জানান, ‘আমাদের আবহাওয়া সঙ্কেত আমাদের জানিয়েছে উত্তর মেরুতে সমুদ্র থেকে ৩০০০ মিটার উচ্চতায় এই সপ্তাহে তাপমাত্রা হবে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মেরু অঞ্চলের সাপেক্ষে অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা’।

রুথ মট্রামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালে বিশ্বে তাপমাত্রা খুব বেশি বেড়ে যায়। সে সময় গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলে যাবার মাত্রায় নতুন রেকর্ড লিপিবদ্ধ করা হয়। তবে সেবার তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বরফ গলে যাওয়া দুটোই ছিল আকস্মিক এক বিস্ফোরণের ন্যায়। কিন্তু চলতি বছর টানা চার মাস ধরে প্রতিদিন একই নিয়মে বরফ গলতে থাকার কারণে ২০১২ সালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলেই বিশ্বাস করছেন সকলে। এর মঝেই একটি চমকে দেওয়া তথ্যও মিলেছে এই জলবায়ু বিজ্ঞানীর মাধ্যমে। গত জুলাইয়ের এক তারিখ পর্যন্ত গ্রিনল্যান্ডে সব মিলিয়ে ১৮০ বিলিয়ন টন বরফ গলে পানিতে পরিণত হয়েছে। এর ফলে বৈশ্বিক সামুদ্রিক উচ্চতা প্রায় আধ মিলিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। সংখ্যাগত দিক থেকে এই আধ মিলিমিটার খুবই কম হলেও আদতে পরিবেশের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব বেশ ভয়াবহ। এরই মাঝে বার্তা সংস্থা সিএনএন তাদের অন্য এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কেবল চলতি সপ্তাহেই গ্রিনল্যান্ডে নতুন করে ২ গিগাটন বরফ গলে সাগরের পানিতে মিশে গিয়েছে। মট্রামের ভাষ্যমতে যাকে বলা চলে, ‘স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি মাত্রা’।

২০০২ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২৫০ গিগাটন বরফ গ্রিনল্যান্ডের সমুদ্রে গলে পড়ে। সেই গাণিতিক হিসেবে চলতি সময়ে যা হওয়া উচিত অন্তত ৬০ থেকে ৭০ গিগাটন। কিন্তু বিগত চার মাসেই এটি প্রায় ২০০ গিগাটনের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।

ইউরোপ জুড়ে এই হিট ওয়েভের প্রভাবে এরই মাঝে প্রায় ১০০ দাবানলের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে ডেনমার্কের কোপার্নিকাস জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা। এছাড়াও বিগত জুলাই মাসে বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড এবং জার্মানিতে জাতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ফ্রান্স নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম তাপমাত্রা (প্রায় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং ইংল্যান্ড ইতিহাসের উষ্ণতম জুলাই মাস এরই মাঝে অতিক্রম করেছে।

ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক অর্গানাইজেশনের পানি এবং জলবায়ু বিভাগের ডিরেক্টর জোহান্স কলামের মতে, ‘এমন হিটওয়েভ এবং এর দ্রুত বিস্তৃতি প্রাকৃতিক নয়, বরং মানব সৃষ্ট বিপর্যয়ের দিকে সবচেয়ে বেশি ইঙ্গিত করে চলেছে’।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

ওডি/এএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড