জুবায়ের আহাম্মেদ
সৃষ্টির শুরুর সেই মহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং এর পর থেকে ক্রমাগত সম্প্রসারিত হয়ে আসছে এই মহাবিশ্ব। কিন্তু কতটা দ্রুতিতে এই সম্প্রসারণ? এ নিয়ে বেশ অনেকবারই মত বদলেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী হাবলের নাম অনুসারে চিহ্নিত এই বেগের নাম করা হয়েছিল হাবল ধ্রুবক। কিন্তু হাবল ধ্রুবকের মানও বদলেছে বেশ কবারই। সম্প্রতি আরো একবার রদবদল হতে পারে এর মানের ক্ষেত্রে।
যদিও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা হয়নি তবু প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের মতে, তারা হাবল টেলিস্কোপের নতুন এক মান নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১৭ সালের তাদের চিহ্নিত করা নিউট্রন তারকার মাধ্যমে হাবল ধ্রুবকের মান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ গবেষক। তাদের এই নতুন আবিষ্কারের খবর ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে মহাকাশ বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ন্যাচার অ্যাস্ট্রোনমি’ এর পাতায়।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের কেন্টা হোতোকাজেকা তার নিবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘হাবল ধ্রুবক জ্ঞানের সেই মূল ভিত্তি যা আমাদের মহাবিশ্বের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে নিঁখুত এক ধারণা দিতে সক্ষম। তাই আমরা এর সম্পর্কে একেবারেই সঠিক ধারণা পেতে উদগ্রীব’।
বর্তমানে হাবল ধ্রুবক বা মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ হার নির্ণয়ের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। প্রথমটি কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যবহারের মাধ্যমে। দ্বিতীয়টি কোনো তারা বা নক্ষত্রের বিস্ফোরণের মাধ্যমে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো দুটি পদ্ধতি একেবারেই পরস্পর বিরোধী। নক্ষত্রের বিস্ফোরণ বা টাইপ এলএ সুপারনোভায় প্রাপ্ত মান কসমিক মাইক্রোওয়েভ থেকে প্রাপ্ত মান অপেক্ষা বেশ অনেকটা বেশি।
হোতোকাজেকা এই অসঙ্গতি তুলে ধরে ব্যাখ্যা করেন, ‘হয়ত এই পদ্ধতির মাঝে একটি ভুল। নয়ত এই ব্যাখ্যার পিছনে থাকা পদার্থবিজ্ঞানে ভুল রয়েছে। আমরা জানতে চাই আসলেই মহাবিশ্বে ঠিক কী ঘটে চলেছে। এ কারণে আমাদের প্রয়োজন তৃতীয় একটি ঘটনা বা প্রমাণ। যা একেবারেই স্বাধীন থাকবে’।
কেন্টো হোতোকাজেকা এই গবেষণায় পাশে পেয়েছেন প্রিন্সটনে কর্মরত নাসার পোস্ট ডক্টরাল ফেলো কেন্টো মাসুদা, অরে গাতিলিয়েব এবং ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদ নাকারকে। এছাড়া তাদের আবিষ্কৃত নিউট্রন তারকা নিয়ে গবেষণায় ছিলেন আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামায়া নিশাঙ্কা, ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির গ্রেগ হালিনান এবং কুনাল মলি। দলের সবশেষ সদস্য অস্ট্রেলিয়ান মহাকাশ বিজ্ঞানী অ্যাডাম ডেলার।
২০১৭ সালে এই গবেষক দলের আবিষ্কৃত নিউট্রন তারকার আকার ছিল যুক্ররাষ্ট্রের শহর ম্যানহাটনের সমান এবং এর ভর ছিল সূর্যেরও দ্বিগুণ। একই সময়ে এটি আরেকটি নক্ষত্রের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। সেসময় এর গতিবেগ ছিল ঠিক আলোর বেগের সমান। আর এই বিস্ফোরণের ছবির জন্য সারা বিশ্ব থেকে সকল রেডিও টেলিস্কোপকে একযোগে অনুরোধ করা হয়।
গবেষক অ্যাডাম ডেলার জানান, ‘আমরা যে রেডিও ইমেজ পেয়েছি তা এতই সূক্ষ এবং স্পষ্ট যে, পৃথিবীতে আনুমানিকভাবে ৩ মাইল দূর থেকে এটি যেকোনো মানুষের একটি চুলের ছবি আলাদাভাবে তুলে আনতে সক্ষম’।
২০১৭ সাল পর্যন্ত হাবল ধ্রুবকের মান ছিল ৬৬ এবং ৯০ কিলোমিটার পার সেকেন্ড পার মেগাপারসেক। কিন্তু কুনাল মলি এবং আরো কজন বিজ্ঞানী যাদের মাঝে কেন্টো হোতোকাজেকাও ছিলেন, তাদের যৌথ গবেষণায় বেরিয়ে আসে এর মান আসলে আরো খানিকটা কম। নতুন মান ৬৫.৩ এবং ৭৫.৬ কিলোমিটার পার সেকেন্ড পার মেগাপারসেক।
যদিও এখন পর্যন্ত তাদের দাবি এই ফলাফল বেশ ভালো তবে আসলেই তা নাসা কিংবা অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করার পক্ষে যথেষ্ট নয়। নির্ভরযোগ্য হবার পক্ষে তাদের একই রক্স আরো ১৫ টি বিস্ফোরণ এবং সেই ক্ষেত্রে তাদের বেগ নির্ণয় করে নেয়া আবশ্যক। কারণ এখনকার ফলাফল হাবল ধ্রুবকের অন্য দুই নির্ভরযোগ্য সূত্র প্লাঙ্ক ধ্রুবক বা টাইপ এলএ মডেল সমর্থন করেনা। তবে ৩য় আরেকটি স্বাধীন ঘটনার আবিষ্কার যে হোতোকাজেকার গবেষণা থেকে নতুন ফলাফল প্রকাশ করবে তা নিয়ে আপাতত সন্দেহ প্রকাশ করা চলে না।
তথ্যসূত্র: প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাচারাল অ্যাস্ট্রোনমি, সায়েন্স ডেইলি
ওডি/এএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড