ফেসবুকের সাথে হোয়াটসঅ্যাপের সম্পর্কে ভাঙনের সুর!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সাথে ম্যাসেজিং সেবা হোয়াটসঅ্যাপ মিলিত হয়ে বেশ পরিপূর্ণ হয়েছিলো আগেই। তবে এবার বোধহয় ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপের এই বন্ধনে ফাটল ধরলো। নিজের প্রতিষ্ঠা করা জনিপ্রয় মেসেজিং সেবা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যান কউম। আজ মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

জ্যান কউমের ফেসবুকের এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘প্রযুক্তির বাইরে আমি যেসব কাজ করতে উপভোগ করি, তার জন্য কিছুটা সময় দিতে যাচ্ছি।’ যদিও গতকাল সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াটসঅ্যাপের পরিকল্পনা ফেসবুকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় কউম তা মেনে নিতে পারছিলেন না।

হোয়াটসঅ্যাপ এখন ফেসবুকের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। কউম অভিযোগ করছিলেন, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুকে নেওয়া হচ্ছে এবং হোয়াটসঅ্যাপের এনক্রিপশনের মান দুর্বল করে ফেলা হচ্ছে।

কউম বলেছেন, ‘আগের চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপ টিম এখন অনেক শক্তিশালী এবং এটি দারুণ কাজ করে যাবে। তবে আমি হোয়াটসঅ্যাপের বাইরে থেকে এর জন্য শুভকামনা জানিয়ে যাব।’

এই বিবৃতিতে কউম আরোও বলেন, প্রায় এক দশক আগে ব্রায়ানের সঙ্গে মিলে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেরা কিছু মানুষকে সঙ্গে নিয়েছিল তাঁদের এ যাত্রা। এখান থেকে তাঁর সরে যাওয়ার উপযুক্ত সময় এখন।

স্ট্যানফোর্ডের অ্যালুমনাই ব্রায়ান অ্যাক্টন ও ইউক্রেনের অভিবাসী কউম ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ প্রতিষ্ঠা করে ২০১৪ সালে তা ১ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারে ফেসবুকের কাছে বিক্রি করেন। হোয়াটসঅ্যাপ তৈরির আগে ইয়াহুতে কাজ করেন ব্রায়ান অ্যাক্টন ও জ্যান কউম।

এত দিন হোয়াটসঅ্যাপের হয়ে তথ্য সুরক্ষা ও কাজের স্বাধীনতা ফেসবুকের কাছ থেকে পাচ্ছিলেন তাঁরা। ফেসবুকের কাছে বিক্রি হওয়ার আগে তথ্য সুরক্ষার শর্তও জুড়ে দিয়েছিলেন।

গত নভেম্বর মাসে অ্যাক্টন হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে যান এবং এরপর থেকে ফেসবুকের নানা সমালোচনা করে থাকেন। গত মার্চ মাসে তিনি হ্যাসট্যাগ ডিলিটফেসবুক নামের একটি কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। ফেসবুক থেকে ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁসের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর তিনি ওই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ওই কর্মসূচি শুরু করেন, যা বেশ আলোড়ন তুলেছিল।

সে সময় থেকেই ফেসবুক স্বীকার করে যে তাদের ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে যা নির্বাচনী প্রচারে কাজে লাগানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। হোয়াটসঅ্যাপকে বাণিজ্যিকীকরণের বিপক্ষে ছিলেন কউম ও অ্যাক্টন। অবশ্য, হোয়াটসঅ্যাপে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় না।

কউমের সরে দাঁড়ানোর ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। কউমের পোস্টে মন্তব্য করে তিনি লিখেছেন, এনক্রিপশন নিয়ে কউম তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন তার জন্য তিনি (জাকারবার্গ) কৃতজ্ঞ। কেন্দ্রীয় সিস্টেমের কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে সাধারণ মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা দেখিয়েছেন হোয়াটসঅ্যাপ। হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে এ নীতি বজায় থাকবে।’

উল্লেখ্য, বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৫০ কোটির বেশি। বিশ্বের বৃহত্তম মেসেজিং সেবা এটি। প্রযুক্তিপ্রেমিদের জন্য এই ভাঙ্গন বেশ দুক্ষজনকই বলা চলে।