• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সুপারনোভা : নক্ষত্রেরও মরে যেতে হয়

  জুবায়ের আহাম্মেদ

১৮ জুন ২০১৯, ০৮:৫৩
সুপারনোভা
সুপারনোভা একটি নক্ষত্র নয়, এটি আসলে একটি নক্ষত্রের মৃত্যু (ছবি: নিউ সায়েন্টিস্ট)

বিজ্ঞানের কল্যাণে 'সুপারনোভা' আজ একেবারেই পরিচিত একটি শব্দ। একসময় যা ছিল প্রকৃতির অপার বিস্ময় এখন তাই ই বিজ্ঞানের কল্যাণে আমাদের চেনা প্রতিশব্দ। সুপারনোভা শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে গেলে দুটি আলাদা শব্দ পাওয়া যায়। সুপার আর নোভা। সুপার মানে অতি বৃহৎ এবং নোভা মানে নতুন তারা। যার মানে দাঁড়াচ্ছে অতি বৃহৎ আকারের নতুন কোনো তারা বা নক্ষত্রকেই আমরা বলছি সুপারনোভা। শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ এমন হলেও বর্তমান সময়ে এসে সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে তা।

বর্তমান সময়ে আপনি যখন একটি সুপারনোভার স্থিরচিত্র বা পুরো প্রক্রিয়া দেখছেন তখন এটি আর মোটেই নক্ষত্র নয়। বরং এটি একটি নক্ষত্রের মৃত্যু। বরং নিজ জীবনের শেষ পর্যায়ে একটি নক্ষত্র তার ভিতরের সমস্ত শক্তির মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যে উজ্জ্বল আলো জন্ম দিচ্ছে তাই ই বর্তমান সময়ে সুপারনোভা। সুপারনোভার সময়ে একটি তারা তার স্বাভাবিক শক্তির তুলনায় ৫ থেকে ৬ গুণ তো বটেই কিছু ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি আলোর বিকিরণ ঘটায়। সুপারনোভার সময়ে কিছুক্ষেত্রে নক্ষত্রের ঔজ্জ্বল্য তার অবস্থানরত পুরো গ্যালাক্সির চেয়েও বেশি হতে পারে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার মতে, ‘মহাশূন্যে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় আকারের বিস্ফোরণই সুপারনোভা’।

সুপারনোভার পর্যবেক্ষণ ইতিহাস টেলিস্কোপ আবিষ্কারের বহু আগেই পৃথিবীর বহু জনপদে সুপারনোভা দেখার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সুপারনোভা সম্পর্কে সবচেয়ে পুরাতন তথ্য পাওয়া যায় খ্রিস্ট পরবর্তী ১৮৫ সালে। চীনের সেসময়ের নথি অনুযায়ী আকাশে সেই ‘নতুন অতিথির’ আলো প্রায় ৮ মাস পর্যন্ত ছিল বলে জানিয়েছে নাসা কর্তৃপক্ষ।

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা থেকে ১৭শ শতাব্দী নাগাদ টেলিস্কোপ আবিষ্কার হলেও মাত্র সাতটি সুপারনোভার কথা জানা যায়। এদের মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘ক্রাব নেবুলা’। ১০৫৪ সালে চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে উল্লেখ করেন। ক্রাব নেবুলা এতই শক্তিশালী ছিল, আমেরিকান দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলেও এটি দেখা যায় বলে প্রত্নতত্ত্ব এবং মহাকাশ বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন। আমেরিকার অ্যারিজোনা এবং নিউ মেক্সিকোতে শিলালিপি থেকেই এমন ধারণা পোষণ করেন বিশেষজ্ঞরা। ক্রাব নেবুলা সুপারনোভা এতটাও উজ্জ্বল ছিল যে, দিনের বেলায়ও এর আলো সাধারণ মানুষ দেখতে পেয়েছেন বলে উল্লেখ আছে।

বিস্ময়কর হলেও সত্য ১৯৩০ সালের আগে অবশ্য সুপারনোভা নামে কোনো শব্দের অস্তিত্ব বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল না। মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরির দুই বিজ্ঞানী ওয়াল্টার বেড এবং ফ্রিটস জুইকি অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির এক বিস্ফোরণের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রথম সুপারনোভা শব্দটি ব্যবহার করেন। আধুনিক যুগে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুপারনোভা ছিল SN1987A যা ঘটেছিল ১৯৮৭ সালে। এই সুপারনোভা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মাঝে এখন পর্যন্ত গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে।

নক্ষত্রের মৃত্যু

নক্ষত্রের মৃত্যু বা সুপারনোভার ঘটনা আমাদের মিল্কিওয়ের সমান একটি গ্যালাক্সির সাপেক্ষে প্রতি ৫০ বছরে একবার দেখা যায়। কিন্তু মহাবিশ্বে প্রতিনিয়ত এবং প্রতিটিদিন একেকটি নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটে চলেছে। সম্প্রতি জাপানের সুবারু টেলিস্কোপে এমন ১৮০০ সুপারনোভার চিত্র ধরা পড়েছে যা পৃথিবী থেকে প্রায় ১০ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে হওয়ার কারণে পৃথিবী থেকে কোনোরকম আলো দেখা যায়নি। প্রায় ১০ মিলিয়ন বছর আগে ‘লোকাল বাবল’ সুপারনোভার ফলে প্রায় ৩০০ আলোকবর্ষ সমান এলাকা জুড়ে বিশাল আলোকচ্ছটা দেখা গিয়েছিল বলে ধারণা করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।

একটি নক্ষত্র কিভাবে সুপারনোভায় যাবে তা মূলত নির্ভর করে এর মোট ভরের উপর নির্ভর করে। আমাদের নিজস্ব নক্ষত্র সূর্যের সুপারনোভায় যাওয়ার কোনো রকম সম্ভাবনা নেই। যদিও নিজস্ব অভ্যন্তরীণ জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এটি লোহিত দানবে পরিণত হবে যার ফলে এটি পুরো সৌরজগতকে ভস্ম করে দিতে সক্ষম। পরবর্তীতে এটি পরিণত হবে শ্বেত বামন নক্ষত্রে। কিন্তু পর্যাপ্ত জ্বালানি থাকলে একটি নক্ষত্র বেশ বড় বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম। সুপার নোভা মূলত দুই প্রকার। টাইপ ওয়ান সুপারনোভা এবং টাইপ টু সুপারনোভা।

টাইপ টু সুপারনোভা

প্রথমেই আলোকপাত করা যাক অপেক্ষাকৃত বেশি রহস্যময় টাইপ টু সুপারনোভা নিয়ে। টাইপ টু সুপারনোভা টাইপ ওয়ান থেকেও বেশি আলো বিকিরণ করে থাকে, যা আমাদের সূর্যেরও ১০ থেকে ১৫ গুণ। টাইপ টু সুপারনোভার ক্ষেত্রে নিজস্ব জ্বালানি শেষ হওয়ার পরে ধীরে ধীরে নক্ষত্রের কেন্দ্রে ভারী বস্তু জমা হতে থাকে। পেঁয়াজের মতো করে তার চারপাশে আবরণ তৈরি হতে শুরু করে। যতই বাইরের দিকে আবরণ তৈরি হয় আবরণটি ততই হালকা হয়ে আসতে শুরু করে।

নক্ষত্রের কেন্দ্রের ভর একটি নির্দিষ্ট সীমা (চন্দ্রশেখর সীমা) অতিক্রম করলে এর ভেতরেই একটি ব্যাপক বিস্ফোরণ দেখা যায়। এজন্যই টাইপ টু সুপারনোভাকে অনেক সময় কেন্দ্র সংঘর্ষী সুপারনোভা বলা হয়ে থাকে। বিস্ফোরণের পর কেন্দ্রের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং এটি আরও বেশি ঘনীভূত হতে শুরু করে। পরবর্তীতে আরও একটি বিস্ফোরণ হলে এর অভ্যন্তরীণ সমস্ত শক্তি মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সৃষ্টি হয় সুপারনোভা।

টাইপ ওয়ান সুপারনোভা

টাইপ ওয়ান সুপারনোভার ক্ষেত্রে প্রথমেই একটি নক্ষত্র নিজস্ব জ্বালানি হারিয়ে ফেলার মাধ্যমে শ্বেত বামন নক্ষত্রে পরিণত হয়। শ্বেতবামনের ভিতরে একপর্যায়ে হাইড্রোজেন আয়নের উপস্থিতিতে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া শুরু হয়।

নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার ফলে গ্যাসের চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকলে একসময় গ্যাসের চাপজনিত কারণেই এর মাঝে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে। যা থেকে আমরা পাই সুপারনোভা। উল্লেখ্য, অপেক্ষাকৃত বড় এবং বেশি শক্তিশালী নক্ষত্রের বেলায় টাইপ টু সুপারনোভা পরিলক্ষিত হয়।

তথ্যসূত্র: স্পেস ডট কম

ওডি/এএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড