প্রযুক্তি ডেস্ক
প্লাস্টিক। এক নীরব ঘাতকের নাম। দীর্ঘদিন ধরেই এর বিপক্ষে হয়ে আসছে নানা আন্দোলন। শুধু পরিবেশের ক্ষতিই নয়, প্লাস্টিকে এখন ক্ষতি করছে মানুষেরও। ক্ষতি অর্থাৎ মানুষের শরীরে এখন প্রবেশ করছে প্লাস্টিক! নতুন এক গবেষণা অনুযায়ী, আমরা প্রতি সপ্তাহে গড়ে অন্তত ৫ গ্রামের মত প্লাস্টিক হজম করছি। আর এই পরিমান প্লাস্টিক একটি পুরো ক্রেডিট কার্ডের সমান!
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (ডাব্লিউডাব্লিউএফ) এর অনুমোদন নিয়ে এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল। গবেষণার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্লাস্টিকের এই দূষণ মূলত মাইক্রোপ্লাস্টিকের (প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র অংশ) ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমে হয়ে থাকে। এর আয়তন ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ক্ষুদ্র হয়ে থাকে। শুধু খাবার আর পানিই নয়, এই ক্ষতিকর প্লাস্টিক আমাদের শরীরে প্রবেশ করে বাতাসের মাধ্যমেও।
গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে মানুষের শরীরে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ২০০০ মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা প্রবেশ করে। অথচ এই ক্ষুদ্র কঙ্গুলো কিন্তু আমাদের ব্যবহার করা বিভিন্ন উৎস থেকেই! কাপড়ের কৃত্রিম তন্তু, কিছু টুথপেস্টে ব্যবহৃত মাইক্রোবিডস (এক মিলিমিটারের কম কঠিন প্লাস্টিক কণা দিয়ে তৈরি) অথবা প্লাস্টিকের বড় টুকরা ফেলে দেয়ার সময় একদম ছোট ছোট টুকরো করা হয়। এছাড়াও বর্তমানে নদী বা সমুদ্রের পানিতে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বর্জ্য ভাসতে দেখা যায়। আর সেসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা বা বর্জ্য পানিতে থাকা মাছ গ্রহণ করে। আর সেই মাছ আবার খাবারের পাতে নিয়ে আসি আমরাই। খাবারের এই চেইনের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণাগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।
সিএনএন এর বরাত দিয়ে এই গবেষণায় অংশ নেয়া এক গবেষক কালা সেনাথিরাজা বলেন, আমাদের প্রতিদিনের খাবার আর পানীয়তে মাইক্রোপ্লাস্টিক যেমন পানি, বিয়ার, শেলফিশ এবং লবণ ইত্যাদির দেখা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিকের সমস্যাটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কোনো দেশ এই প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করে ফেললেও বলা যাবে না তারা নিরাপদ। কারণ ক্ষতিকর কণাগুলো অন্য মাধ্যম থেকেও শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, খাওয়ার পানির মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে একজন ব্যক্তির শরীরে অন্তত ১ হাজার ৭৬৯টি প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে বোতল কিংবা কলের মাধ্যমে প্লাস্টিক গ্রহণ করা হয়। তবে অঞ্চলভেদে এ সংখ্যা কমবেশি হতে পারে।
২০১৮ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, ইউরোপীয় কিংবা ইন্দোনেশিয়ার কলের পানির তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের কলের পানিতে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার উপস্থিতি দেখা গেছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, প্লাস্টিকের দূষণে বিপর্যস্ত সমুদ্রে বসবাস শেলফিশের। আর এর পুরোটাই মানুষ খেয়ে থাকে। কারণ এই ধরনের খাদ্য গ্রহণে প্রতি সপ্তাহে মানুষ কমপক্ষে ১৮২ টি প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা গ্রহণ করে থাকে যা ০.৫ গ্রামের সমপরিমাণ।
শুধু খাবার বা পানীয় ছাড়াও, নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বাতাসে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিকও গ্রহণ করে মানুষ।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর প্রায় ৩৩০ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা আরও তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবেশের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এই প্লাস্টিক একটি বড় হুমকি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই বিষয়ে জনসাধারণকে এখনই সচেতন হবার পরামর্শ তাদের।
ওডি/এএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড