• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আর কখনো কি বসবাসের উপযোগী হবে সাইবেরিয়া?

  জুবায়ের আহাম্মেদ

১৬ জুন ২০১৯, ১০:২৭
সাইবেরিয়া
সাইবেরিয়া আর কখনো বসবাসের উপযোগী হবে কিনা এ বিষয়ে চলছে গবেষণা (ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস)

বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের তাপমাত্রা। গলছে পৃথিবীতে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ বরফ। এতে করে পৃথিবী নানাবিধ সমস্যায় পতিত হলেও সূক্ষ একটি সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে এরমাঝে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হয়ত পৃথিবীর বিভিন্ন বরফাঞ্চল ধীরে ধীরে হয়ে উঠতে আরে একেবারেই বাসযোগ্য। যেমনটা রাশিয়ার সাইবেরিয়াতে বিস্তীর্ণ বরফ অঞ্চলে বসবাস উপযোগী করে নেবার জন্য এখনই রীতিমত গবেষণায় নেমেছে দেশটির গবেষকরা। সম্প্রতি রাশিয়ার ক্রাসনোয়াস্ক ফেডেরাল রিসার্চ সেন্টার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যারোস্পেস নিজেদের আলাদা আলাদা গবেষণায় রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে জলবায়ু মানুষের উপযোগী কিনা এবং তাতে টিকে থাকার ক্ষমতা কতটা সে নিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছে। গত সপ্তাহেই যা ‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার্স’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।

রাশিয়ার এশিয়া অংশ যার আয়তন প্রায় ১৩ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার – প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে, রাশিয়ার মোট আয়তনের ৭৭ শতাংশ অংশ জুড়ে আছে বিশাল বরফ আচ্ছাদিত অংশ। অথচ এই পুরো অংশে বসবাস করেন রাশিয়ার বিপুল জনসংখ্যার মাত্র ২৭ শতাংশ। বাকি বড় অংশটি তুলনামূলক দক্ষিণে বসবাস করছে, যার আবহাওয়া মানুষের বসবাসের একেবারেই অনুকূলে।

ক্রাসনোয়াস্ক ফেডেরাল রিসার্চ সেন্টারের ড. এলিনা পারফেনোভা বলেন, ‘পূর্বে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের অভিযোজন ক্ষমতাও পরিবর্তিত হতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু মানব সভ্যাতার যত উন্নয়ন হয়েছে, প্রযুক্তি যত মানুষের হাতের কাছে সহজ হয়ে উঠেছে, তারা অভিযোজনের মাত্রায় অনেকেওটাই পিছিয়ে পড়েছে, অন্তত যেভাবে জলবায়ুগত পরিবর্তন হচ্ছে তার সাপেক্ষ’।

গবেষণা গ্রন্থের মূল এই লেখক বলেন, ‘আমরা মূলত জানতে চেয়েছি যদি ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন রাশিয়ার এশিয়ান অংশটিকে বর্তমানের বৈরী অবস্থা থেকে বের করে এনে মানুষের বসবাসের যোগ্য একটি অঞ্চলে পরিণত করতে সক্ষম কিনা’।

গবেষণা কাজের জন্য পুরো সাইবেরিয়ান অঞ্চল ২০ টি আলাদা জোনে ভাগ করা করা হয়। প্রতিটি জোনে দুটি ভিন্ন মাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব পরিমাপ করা হয়। কার্বন রিপ্রেজেন্টেটিভ কনসান্ট্রেশন পাথ (আরসিপি) ২.৬ নির্দেশ করে মৃদু জলবায়ু পরিবর্তন এবং আরসিপি ৮.৫ নির্দেশ করে চরম মাত্রার জলবায়ুগত পরিবর্তন। গবেষণায় জানুয়ারি এবং জুলাই মাসের তাপমাত্রা নিয়ে মূল একক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

ড. পারফেনোভা জানান, ‘আমরা গবেষণায় দেখতে পাই মধ্য শীতে বিগত সময়ে তাপমাত্রা ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রী থেকে ৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পর্যন্ত বাড়ছে। আর গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে তাপমাত্রা গড়ে ১ দশমিক ৯ ডিগ্রী থেকে ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রী পর্যন্ত বাড়ছে। এছাড়া এসময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬০ মিলিমিটার থেকে বেড়ে ১৪০ মিলিমিটার হয়েছে। আমাদের হিসেব অনুযায়ী আরসিপি ৮.৫ হারে বজায় থাকলে ২০৮০ সাল নাগাদ রাশিয়ার এশিয়ান অংশে তাপমাত্রা আর খানিক বাড়বে যার ফলে তা মানুষ বসবাসের পক্ষে আরো বেশি উপযোগী হয়ে উঠবে। এসময়ে এই অঞ্চলের বসবাস অনুপযোগী অংশের মাত্রা ৬৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে নেমে আসতে পারে’।

তবে পরিবেশের সাপেক্ষে আতঙ্কের ব্যাপার হলো, আরসিপি ২ দশমিক ৬ থাকা অবস্থাতেই বর্তমান সাইবেরিয়ার আরো ১৫ শতাংশ অঞ্চল ধীরে ধীরে বসবাস উপযোগী হতে পারে। যার সারমর্ম করলে দাঁড়ায় বর্তমান কার্বন ঘনত্বেই পৃথিবীর উষ্ণতা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। যা পরিবেশের জন্য এক বিরাট হুমকি।

সাইবেরিয়ার বর্তমান অবস্থা মানুষের বসবাস অনুপযোগী হলেও ভবিষ্যতে তা বসবাস উপযোগী তো বটেই বরং খাদ্য উৎপাদন এবং যেকোন প্রকার খামার গড়ে তুলতে উপযোগী হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন জনবসতি গড়ে উঠে আবাসন সমস্যার সমাধান দিলেও তাতে পরিবেশের উপর কি প্রভাব ফেলবে তা নিয়েও আছে বড় চিন্তা।

তথ্যসূত্র: সায়েন্স ডেইলি

ওডি/এএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড