• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শ্রীলঙ্কায় বন্ধ সকল সামাজিক মাধ্যম, জেগে উঠছে নতুন শঙ্কা

  জুবায়ের আহাম্মেদ

২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:০৯
শ্রীলঙ্কা

গত রবিবারে ইস্টার সানডের উৎসবে সন্ত্রাসী হামলার পর সন্ত্রাস আক্রান্ত দেশ হিসেবে নতুনভাবে চিহ্নিত হয়েছে শ্রীলঙ্কা। নিশ্চিতভাবেই আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা তামিল টাইগার পরবর্তী সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। এরইমাঝে শ্রীলঙ্কা সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটিতে সকল প্রকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে দেশটিতে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে ফেইসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ সহ সকল প্রকার সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সরকারী দফতর থেকে জানানো হয়েছে যে কোনো প্রকার গুজব, ভুল তথ্য এবং আতঙ্ক রোধেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। কিন্তু এতে করে নতুনভাবে আরেকটি শঙ্কা জেগে উঠেছে প্রযুক্তি বোদ্ধাদের মাঝে।

গত রবিবার ইস্টার সানডে উৎসবে সিরিজ বোমা হামলায় শ্রীলঙ্কায় প্রায় ৩০০ জন নারী পুরুষ এবং শিশু প্রাণ হারিয়েছেন। হাসপাতালে আছেন আরো শতাধিক মানুষ। এমন অবস্থায় দেশটিতে কোন প্রকার অনাকাঙ্কাখিত পরিস্থিতি ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকলেও তাতে খুব বেশি আশার কিছু নেই। বরং ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবার কারণে নতুন করে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে শ্রীলঙ্কার সাধারণ জনসাধারণের মাঝে। এছাড়া এতে করে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং সহিংস হামলায় জড়িতদের শনাক্তকরণ এবং আতঙ্ক রোধ কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন মার্কিন সংবাদপত্র সিএনবিসি নিউজের প্রযুক্তিবিভাগের। এর আগেও শ্রীলঙ্কান সরকার জাতীয় সমস্যার কারণে সামাজিক সকলপ্রকার মাধ্যম বন্ধ রাখার কারণে সমালোচিত হয়েছিল। ২০১৮ সালের মার্চে ১০ দিনের জন্য বন্ধ থাকা অবস্থায় সরকারের এমন আচরণ কোনভাবেই সহিংসতা উস্কানি এবং গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে পারেনি।

২০১৮ সালের মার্চে বৌদ্ধ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সহিংসতার সময়ে সরকারীভাবে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। একইসাথে বন্ধ করে দেয়া হয় সকল ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার এমনকি গুগল ব্রাউজিং। পরবর্তীতে এই নিয়ে গবেষণায় শ্রীলঙ্কান প্রযুক্তিবিদ ধনঞ্জয়া উইরাত্নে তার গবেষণায় দেখান এতে করে ফেসবুক ব্যবহার কেবলমাত্র ৫০ শতাংশ কমে এসেছে। একইসাথে বেড়ে গিয়েছে ‘ভিপিএন’ বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক এর ব্যবহারও। শ্রীলঙ্কার সাধারণ জনগণ প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প খুঁজে নিতে সেবার খুব বেশি সময় ব্যয় করেনি।

অবশ্য ফেইসবুক ইতিমধ্যে তাদের নিজস্ব পলিসির কারণেই শ্রীলঙ্কার দুর্ঘটনায় সকল প্রকার সহিংস এবং বীভৎস ছবি এবং ভিডিও মুছে দেবার উদ্যোগ নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সহিংস হামলার ছবি ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ফেসবুকের এ সম্পর্কিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা শ্রীলঙ্কার হামলার আহত এবং নিহতদের প্রতি গভীর শোকপ্রকাশ করছি। ফেসবুকের সকল টিম দ্রুত সাড়াপ্রদান এবং আইনের ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে আমাদের নিজস্ব নীতির বাইরে সকল প্রকার সহিংস ছবি এবং ভিডিও মুছে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা শ্রীলঙ্কার সরকারের সাময়িক ফেসবুক বন্ধের ব্যাপারে অবগত হয়েছি। শ্রীলঙ্কান জনগণ আমাদের উপর দীর্ঘদিন তাদের বিশ্বাস স্থাপন করেছেন তাদের প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে এবং আমরাও এই দুঃসময়ে তাদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চাই।’

তবে এই বন্ধের ঘটনা খুব যে ফলপ্রসূ নয় তা বলাই বাহুল্য। ২০১৬ সালে ভারতে এমন পদক্ষেপ নেবার পর ধর্ষণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অবনতিই বরং লক্ষ্য করা গিয়েছে বলে গবেষণায় প্রকাশ করেছিলেন স্ট্যানফোর্ড গ্লোবাল পলিসির সহযোগী পরিচালক জ্যান রিজাক। তিনি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ‘সামাজিক মাধ্যমসমূহের এমন বন্ধ হয়ে থাকা যেকোন সহিংসতা দ্রুত উস্কে দিতে সক্ষম। একইসাথে এটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বিপক্ষে বাঁধা হিসেবে কাজ করে।’ এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত কাউকে আটক করতে না পারায় এমন সিদ্ধান্ত যে ঠিক কতটা ফলদায়ক হবে শ্রীলঙ্কার জন্য, তা সত্যিই প্রশ্নের অবকাশ রাখে।

তথ্যসূত্র: সিএনবিসি নিউজ

ওডি/এএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড