• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অন্যের আবেগের জায়গায় কীভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নেই?

  জুবায়ের আহাম্মেদ

২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:০৪
আবেগ
অন্যের আবেগের জায়গায় কীভাবে কাজ করে আমাদের মস্তিষ্ক?

খাঁটি বাংলায় একেবারেই প্রচলিত প্রবাদ “আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী।” কথাটা বাস্তবজীবনে একেবারেই সত্য। নিজেদের মতামতকে অন্যের কাছে প্রাধান্য দিতে কিংবা অন্যের মতামত বা মনোভাব বুঝে নিতে সবচেয়ে বেশি জরুরি খোলা চোখে ভেতরের রূপ বুঝতে পারার আর বুঝে নিতে পারার ক্ষমতা। আমরা সবসময়ই অন্যের সামনে নিজেদের একান্ত নিজস্ব মুখভঙ্গি উপস্থাপন করছি। কিন্তু অপর পাশের মানুষটি কি আমাদের সেই মুখভঙ্গি বুঝতে সক্ষম হচ্ছে? কিংবা আমাদের আবেগ আর ব্যক্তিত্ব কি তাকে নিজের জগতে আমাদের অবস্থান জোরালো করতে পারছে?

অথবা আমরা নিজেরাই কি অন্যদের আসল কথা বুঝতে সক্ষম হচ্ছি? অন্যের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কীভাবে নিচ্ছি আমরা? আর আমাদের সিদ্ধান্তকে আমরাই বা কীভাবে বিচার করছি? আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে অভাব থাকলে এসব প্রশ্নে দৈনন্দিন জীবনে কাবু হওয়া সবচেয়ে বেশি সহজ।

এসব প্রশ্নের উত্তরই সম্প্রতি খোঁজার চেষ্টা করেছেন সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ জেনেভার গবেষকরা। তাদের গবেষণার মূল বিষয় ছিল, অন্যের আবেগের জায়গায় আমরা কীভাবে নিজেদের মনে সিদ্ধান্ত নিই এবং এক্ষেত্রে আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে।

আবেগ বোঝার ক্ষমতায় কতটা সফল আমরা

প্রিয়জনের আবেগ বুঝে চলার চেষ্টা আমাদের সকলের মাঝেই চলছে। আবেগের কাছে হার মেনেই সারা পৃথিবীতে বাড়ছে ডিপ্রেশনের রোগী। বাড়ছে আত্মহত্যা প্রবণতা। কিন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অন্যের আবেগ বোঝার ক্ষমতায় আমরা আসলেই খুব বেশি পটু নই। অবশ্য এটি কেবল আপনার ব্যর্থতা নয়। বরং আমাদের মস্তিষ্কই এক্ষেত্রে আমাদের পর্যাপ্ত সাহায্য করতে পারছে না।

ইউনিভার্সিটি অফ জেনেভায় এই গবেষণায় মোট অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৩৪ জন শিক্ষার্থী এবং তাদের সর্বমোট ১২৮ টি মানুষের মুখের কেবল চোখ এবং মুখের মাংসপেশী দেখে আবেগ নির্ধারণ (আনন্দিত এবং ক্রোধ) করতে বলা হয়। এবং এক্ষেত্রে ব্যর্থতার হার ছিল অনেক বেশি। তবে একটি দিক আপনি বুঝতে পারবেন, তা হল অপর পাশের মানুষটি আপনার ব্যাপারে কিংবা নিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী কি না। আবেগ বোঝার পরীক্ষায় ফলাফলের (৪ দশমিক ৫৯) তুলনায় আত্মবিশ্বাস বোঝার পরীক্ষায় সফলতা ছিল অনেক বেশি (৫ দশমিক ৮৯)।

সত্যি কথা বলতে, পারস্পরিক আলোচনার সময় দুই পক্ষের অবচেতন মন আমাদের ভুল পথে চালিত করে। মস্তিষ্কের ইন্টারলোকেটরস আমাদের কথা বলার সময় আমাদের মিথ্যে বলা, কঠোর হওয়া কিংবা আমাদের প্রকৃত আবেগ প্রকাশে বাধা দেয়। তাই অন্যের ইন্টারলোকেটরস সক্রিয় হতে শুরু হলে আমাদের মাঝে আত্মবিশ্বাসের খানিক দোলাচল এনে দেয়। তাই আমরা ধরেই নিই, আমাদের প্রথম দর্শনেই আমরা ঠিক উপলব্ধি করতে সক্ষম। এবং মস্তিষ্ক ঠিক সেভাবেই সাড়া প্রদান করে। তাই প্রথম দেখায় আমরা ধরে নিই, কেউ একজন রেগে আছে বা আনন্দে আছে। অথচ ভুলেই বসে থাকি, আমাদের উপস্থিতি তাদের আবেগের বা অনুভূতির জগতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

তবে আমাদের আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে আমরা সাধারণত অন্যদের অনুভূতির মূল্যায়ন করতে পারি না। যার কারণে আমাদের সামনেই কারও মনোজগতে পরিবর্তন আসলেও আমরা সেটা মেনে নিতে পারি না। যার ফলে আমাদের মাঝে একপ্রকার মনস্তাত্বিক দ্বন্দ শুরু হয়। আত্মবিশ্বাসের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় আমাদের মস্তিষ্কের প্যারাহিপ্পোক্যাম্পাল অংশে। আবার প্যারাহিপ্পোক্যাম্পালেই আমরা অন্যান্য মানুষের সাথে আমাদের কাটানো সময়ের সব স্মৃতি জমা রাখি। তাই এই দুইয়ের সমন্বয়ে আমাদের মাঝে আত্মবিশ্বাসের পারদ অনেকখানি উপরে উঠতে থাকে। তাই আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকেই আমরা অন্যের আবেগের বিষয়ে ভুল ভাবনা প্রয়োগ করি।

এ কারণেই মনোবিদদের পরামর্শ নিজের কথা ব্যক্ত করার সময় একেবারেই স্বাভাবিক হয়ে কথা বলা উচিত। অতিরিক্ত জোর প্রয়োগ করা কিংবা রেগে যাওয়া অথবা একেবারেই হালকা হয়ে কথা বলার মাধ্যমে আপনার মতের ওপর অন্যের আস্থা হারানোর জন্য আপনিই তাকে প্ররোচিত করছেন এছাড়া অন্য কারও মতামতের প্রসঙ্গে যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ থাকা যায় ততটাই থাকার চেষ্টা করুন। আপনার আত্মবিশ্বাসই আপনাকে বলে দিবে সেই মতামত কতটা গ্রহণযোগ্য।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড