• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এইচ আই ভি ভ্যাকসিনে নতুন সম্ভাবনা : সফলতা মিলল প্রাণিদেহে

  জুবায়ের আহাম্মেদ

২৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:৩৪
এইচ আই ভি
এইচ আই ভি ভ্যাকসিনে নতুন সম্ভাবনা

এইচআইভি নিয়ে মানুষের সংগ্রাম দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই বিশ্বের নানা প্রান্তে নানাভাবে গবেষকদের কাছ থেকে আসছে এইচআইভি সংক্রান্ত খবর। সবশেষ খবরটা এলো বেশ অনেকটা আশা নিয়ে। মানুষের আগে পরীক্ষামূলকভাবে প্রাণিদেহে প্রয়োগ করা ভ্যাকসিনে মিলেছে সফলতার দেখা। আর এ সংবাদ এসেছে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগোতে অবস্থিত “স্ক্রিপ্স রিসার্চ ইনস্টিটিউট” থেকে।

প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে স্ক্রিপ্স রিসার্চ ইনস্টিটিউট এইচআইভি নিয়ে গবেষণার পর এবারই প্রথম তাদের ভ্যাকসিন নিয়ে খানিক সফলতার দেখা পেয়েছে। “ইমিউনিটি” জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বিজ্ঞানীদের দাবি তারা এইচআইভি আক্রান্ত বানরের দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে ভাইরাস আক্রান্ত কোষের সংক্রমণ ঠেকাতে পুরোপুরিভাবে সফল হয়েছেন।

নতুন প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা যায়, টিয়ার টু ভাইরাস, যা অন্যান্য প্রাণিদেহ থেকে মানবশরীরে প্রবেশ করে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটায় সেটি ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে বেশ কার্যকরীভাবে দমন করা সম্ভব। এছাড়াও এই গবেষণার মাধ্যমে এইচআইভি প্রতিরোধক এন্টিবডির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের সন্ধানও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

ইন্টারন্যাশনাল এইডস ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ এর ডিরেক্টর এবং স্ক্রিপ্স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মাইক্রোবায়োলজি এবং ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান ড. ডেনিস বার্টন গবেষণা ফলাফল নিয়ে বলেন, “আমরা এমন এন্টিবডির সন্ধান পেয়েছি যা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রাণীদেহে প্রয়োগ করা সম্ভব। এবং এটি বাস্তবিক অর্থে মানবশরীরে এইচআইভি সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম হবে বলে আমরা আশাবাদী।”

যদিও এখন পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন মানবশরীরে প্রয়োগের উপযোগী হতে আরও বেশ অনেকটা সময় এবং দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা প্রয়োজন তবু বার্টন এবং তার গবেষণা দল আশাবাদী। এটি এই দলের ১৯৯০ সাল থেকে ক্রমাগত করে আসা গবেষণার প্রথম ফলাফল হলেও এর সফলতা নিয়ে দ্বিমত করার সুযোগ খুব কমই দেখছেন অন্যান্য সব গবেষকরা।

গবেষণার মূল লক্ষ্য শরীরে গোপনে এবং অরক্ষিত অবস্থায় বেড়ে ওঠা এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত খুঁজে বের করা এবং সেই সাথে ইমিউন সিস্টেম বা দেহের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সেই আক্রান্ত অঞ্চলে কাজ করার জন্য উপযোগী করে তোলা। বার্টনের আবিস্কৃত ভ্যাকসিন নিজে সরাসরি কাজের পরিবর্তে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এইচআইভি ভাইরাসের উপযোগী করে তোলার দিকে বেশি মনোনিবেশ করে।

এই কাজের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পরীক্ষামূলক বানরের দেহে উপযুক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়া যেখানে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রবেশ করিয়ে বানরের শরীর ভ্যাকসিনের উপযোগী করে তোলা। এছাড়া আক্রান্ত স্থানের সন্ধান লাভ এবং উপযুক্ত এন্টিবডির সন্ধান নিয়েও পরিশ্রম করতে হয়েছে পুরো দলকে।

কিন্তু এখানেই নতুন এক সমস্যা দেখা দেয় তাদের সামনে। এইচআইভি ভাইরাসের প্রোটিন আবরণ খুবই দূর্বল প্রকৃতির। আক্রান্ত স্থান থেকে খানিক আলাদা হলেই এই আবরণ ভেঙে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে সম্ভাবনা রয়েছে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার।

গবেষণা কাজের জন্য রেসাস বানরের দুটি আলাদা দল গঠন করে পরীক্ষা চালানো হয়। একই ভ্যাকসিন নিয়ে বার্টনের দলের এর আগের একটি পরীক্ষায় দেখা যায়, ভ্যাকসিন দেওয়া বানরের দলটি নিজ থেকেই শরীরের কম পুষ্টিমানের এন্টিবডির উন্নতি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অন্য দলের ক্ষেত্রে যা ছিল উল্টো। ভ্যাকসিন ছাড়া দলটির মাঝে কেবল নিজস্বভাবে উচ্চ পুষ্টিমানের এন্টিবডিতেই নজর দেওয়ার প্রবণতা ছিল লক্ষ্যণীয়।

তবে এবারের গবেষণায় গবেষকরা দুই দল থেকেই ছয়টি বানর আলাদা করে নতুনভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন। অর্থাৎ এবারের গবেষণায় উচ্চ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং নিম্ম প্রতিরোধ ক্ষমতা দুই প্রকারের বানরেরই উপস্থিতি ছিল।

কিন্তু এখানেই গবেষণার শেষ দেখতে চাইছেন না বার্টনের সহযোগীরা। এই ভ্যাকসিনকে মানুষের উপযোগী করতে এরই মাঝে কাজ শুরু করে দিয়েছেন তারা। মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিনের প্রভাব বিস্তার করতে প্রথমেই যেটি প্রয়োজন তা হলো এর দীর্ঘস্থায়ী হওয়া। প্রায় দুই দশক কাজের পর কি সবশেষ কিছু বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হবে স্ক্রিপ্স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এই বিজ্ঞানীদের পক্ষে? নাকি অজেয় থেকে যাবে এইচআইভি ভাইরাস এবং এইডস রোগ? উত্তরটা আপাতত সময়ের অপেক্ষায়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড