জুবায়ের আহাম্মেদ
এইতো কিছুদিন আগের কথা। সারা দেশে ফোর জি নিয়ে মোটামুটি বেশ ভালো একটা সাড়া পড়ে গিয়েছিল। মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে ফোর জি সুবিধার মাধ্যমে গ্রাহকদের মন জয় করার চেষ্টায়। তবে সম্ভবত এখানেই সবকিছুর শেষ হচ্ছে না। নতুন করে নতুন সম্ভাবনা আর দর্শন নিয়ে বিশ্বব্যাপী হাজির হয়েছে ফাইভ জি। আমাদের দেশেও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। কবে আসবে ফাইভ জি? হয়তো খুব শীঘ্রই। তবে তার আগে জেনে নেয়া উচিত ফাইভ জি কী? ফাইভ জি কী করতে পারে? কেনইবা এটি পূর্ববর্তী ফোর জি থেকে একেবারেই আলাদা।
ফাইভ জি কী?
যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ইন্টারনেট থেকে কী চান? বা ইন্টারনেটের কার্যকারীতা বলতে সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবে আপনি কী বোঝেন। উত্তরে ২টি বিষয় উঠে আসা স্বাভাবিক। গ্রাহক উপযোগী ব্যবস্থাপনা এবং ইন্টারনেট গতি। আর এ ব্যাপারগুলো গ্রাহককে যতটাই দেয়া হোক না কেন গ্রাহক চাহিদা বাড়তেই থাকবে। আর এই কথা মাথায় রেখে এসেছে ফাইভ জি।
আমরা এত দিন সবাই চালকবিহীন গাড়ি, স্মার্ট হোম কিংবা ড্রোনের কথা শুনে এসেছি। ফাইভ জি অনেকটা সেই প্রযুক্তির কাছাকাছি। ফাইভ জি এমন একটি অবস্থা যা গ্রাহকের চাপ সামলে বিরামহীন ডেটা চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
ফাইভ জি অনেক বড় পরিসরে, অনেক বেশি গতি এবং অনেক বেশি গ্রাহকের চাপ নিতে সক্ষম। প্রতিটি ফোর জি টাওয়ারের তুলনায় ফাইভ জি টাওয়ার অধিক সুবিধা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মজার ব্যাপার হলো, ফাইভ জি কখনোই কানেকটিভিটি নিয়ে গ্রাহকদের চাপ প্রয়োগ করবে না। যেমনটি ফোর জি তে আমরা লক্ষ করি, ধীরে ধীরে সব অপারেটরে সকল সিম ফোর জি আওাতায় আনতে হয়েছিল এবং স্মার্টফোন ফোর জি উপযোগী না হলে প্রায়শ ফোর জি ইন্টারনেট সুবিধা গ্রাহক উপভোগ করতে পারেন না। ফাইভ জি গ্রাহকদের এমন প্রযুক্তিগত বিভ্রাট থেকে মুক্তি দিবে। যে সকল গ্রাহক ফাইভ জি সুবিধা নিতে আগ্রহী নন তারা এর থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবেন।
ফাইভ জি কার্যপদ্ধতি
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, যে প্রযুক্তির মাধ্যমে ফাইভ জি কাজ করবে তা অত্যন্ত জটিল। তাই এখানে যতটা সম্ভব সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত একেবারেই নিশ্চিত কোনো অবস্থায় কিন্তু ফাইভ জি এসে পৌঁছায়নি। পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টাগুণে বিভিন্ন উন্নত দেশে ফাইভ জি ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন প্রযুক্তিবিদরা।
তবে আমেরিকান ফেডেরাল কমিউনিকেশন ব্যুরো আলোক বর্ণালীর মাধ্যমে ফাইভ জি ব্যান্ডউইথ সুবিধাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিভিন্ন কোম্পানি এর মাধ্যমেই দেশে বিদেশে ফাইভ জি সুবিধা প্রদান করছে।
তবে এখনই স্পষ্ট না হলেও ৩ টি মৌলিক বিষয় ফাইভ জি তে থাকছে। মিলিমিটার ওয়েভ বা তরঙ্গ, বেস স্টেশন এবং মিমো (MIMO) প্রযুক্তি।
মিলিমিটার তরঙ্গ
ফোর জি প্রযুক্তিতে এরই মাঝে রেডিও তরঙ্গের সকল ক্ষমতা প্রযুক্তিবিদগণ ব্যবহার করে ফেলেছেন। তাই নতুন ভরসার নাম মিলিমিটার তরঙ্গ। রেডিও তরঙ্গ থেকে বেশ কয়েকগুণ ছোট দৈর্ঘ্যের মাধ্যমে ডেটা আদান প্রদানের ফলে ফাইভ জি নিশ্চিত করে ফোর জি থেকে দ্রুত গতির ইন্টারনেট।
কিন্তু ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য কীভাবে দ্রুত গতি নিশ্চিত করে? উত্তরটা বেশ সহজ। বিজ্ঞান আমাদের বলে, যত ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য অধিক পরিমাণ স্পন্দন হার। স্বাভাবিক ভাবেই স্পন্দন হার বেড়ে গেলে তারা অনেক বেশি শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম হবে।
অধিক বেস স্টেশন
ডেটা ট্রান্সফারে গতি বৃদ্ধি করলেও মিলিমিটার তরঙ্গে সমস্যা অন্য এক জায়গায়। ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য হবার কারণে বিল্ডিং, গাছ এমনকি বৃষ্টির পানিতেও শোষিত হয় উচ্চ শক্তির এই তরঙ্গ। এ ক্ষেত্রে সমাধান পুরো শহরকে হাজার হাজার সেল ফোন বেস স্টেশনের আওতায় নিয়ে আসা। গাণিতিক ফলাফল অনুযায়ী প্রতিটি সেলফোন বেস স্টেশনের মধ্যকার দূরত্ব হবে মাত্র ২৫০ মিটার। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হবে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা।
ব্যাপক মিমো
মিমো (Multiple Input Multiple Output – MIMO) প্রযুক্তির কল্যাণেই ফোর জি এখন সকলের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। ফাইভ জি বাস্তবায়নে একই প্রযুক্তির সাহায্য চাইছেন বিজ্ঞানীরা। এই তারহীন ব্যবস্থায় কয়েকটি ট্রান্সমিটারে ডেটা আদান প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে একই সাথে প্রচুর গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যায় ইন্টারনেট সুবিধা।
মিমো প্রযুক্তির আধুনিকায়ন হলে ফাইভ জি আরও বড় পরিসরে কাজের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে। বাস্তব হতে পারে এখনকার সময়ের সবচেয়ে জটিল প্রযুক্তিগত ইন্টারনেট ব্যবস্থা।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড