জুবায়ের আহাম্মেদ
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন কেনার সময় যে কারোরই প্রথম প্রশ্ন খুব সম্ভবত ব্যাটারির স্থায়িত্ব নিয়ে। শখের ফোনের ব্যাটারি যদি বেশিক্ষণ চার্জ ধরে রাখতে না পারে তাহলে আফসোস করতেই হয়। বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের নামী সব ফিচার বাজারে তরুণ ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হচ্ছে তাদের ব্যাটারি জনিত নানা সমস্যার কারণে। এ কারণেই দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির বিকল্প খুঁজতে ব্যস্ত ছিলেন গবেষকরা। ক্রমাগত এই গবেষণায় অবশেষে মিলেছে নতুন এক সম্ভাবনা। নাসা কর্তৃক পরিচালিত দুই গবেষণা কেন্দ্রের আলাদা পরীক্ষা থেকে পাওয়া ফলাফলে এমনই সুসংবাদ দিয়েছে সায়েন্স জার্নাল।
নতুন এই ব্যাটারিতে লিথিয়ামের পরিবর্তে ব্যবহার করা হবে ফ্লোরাইড আয়ন। গবেষণা কাজে জড়িত আছেন ২০০৫ সালে রসায়নে নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী এলিজাবেথ এটকিন্স। প্রকাশিত গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, 'ফ্লোরাইড লিথিয়াম অপেক্ষা অধিক চার্জ ধারণে সক্ষম। এবং এর স্থায়িত্ব বর্তমানে প্রচলিত ব্যাটারির প্রায় আটগুণ।' যার অর্থ বর্তমানে পুরোপুরি চার্জড অবস্থায় যেখানে ফোন দুইদিন চলতে পারছে সেটি নতুন এই ব্যাটারিতে ষোলদিন পর্যন্ত সেবা দিতে সক্ষম।
তবে বিষয়টি এখনই অতটা সহজভাবে নিচ্ছেন না গবেষকরা। এটকিন্স বলেন, 'ফ্লোরাইড নিয়ে কাজ করা এখনই সম্ভব না। এবং এতে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। যেহেতু ফ্লোরাইডে ক্ষয়কারী ক্ষমতা রয়েছে এবং একইসাথে এটি রিএক্টিভ বা সক্রিয় আয়ন। তাই ফ্লোরাইড নিয়ে আমাদের আরও সময় প্রয়োজন।'
ফ্লোরাইডের রিচার্জেবল ব্যাটারি সংক্রান্ত গবেষণা এবারই প্রথম নয়। এর ইতিহাস দেখলে পিছিয়ে যেতে হবে অনেকটা সময়। ৭০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফ্লোরাইড নিয়ে গবেষণায় কিঞ্চিৎ সাফল্য এসেছিল। তবে সেবার কঠিন পদার্থে গড়া সেই ব্যাটারি বাণিজ্যিকভাবে তো বটেই গবেষণা ক্ষেত্রেও আলোর মুখ দেখেনি। পুরোনো সেই পন্থায় ব্যাটারি কেবলমাত্র উচ্চ তাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম ছিল যা ফ্লোরাইড ব্যাটারি নিয়ে গবেষণার সেখানেই ইতি ঘটায়।
চার দশকের বেশি সময় পর এবার সেই সমস্যাই কাটাতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। এবং এতে তারা বেশ খানিকটা সফলতাও পেয়েছেন। কঠিনের পরিবর্তে এবার তরল উপাদানের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে রিচার্জেবল ব্যাটারি।
গবেষণার আরেক রসায়নবিদ সাইমন জোনস বলেন, 'আমরা এখনও পুরো কাজের বলতে গেলে একেবারে গোড়ার দিকে আছি। তবে একথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এটা পৃথিবীর প্রথম ফ্লোরাইড ব্যাটারি হতে যাচ্ছে যা কিনা কক্ষতাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম হবে।'
ব্যাটারি মূলত দুটি তড়িৎদ্বারের মাঝে আয়ন বা ইলেকট্রন আদান প্রদানের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। এটি সবচে ভালো কাজ করে কক্ষ তাপমাত্রায় যখন তাতে জলীয় দ্রবণ যোগ করা হয়। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ক্ষেত্রে লিথিয়াম দুটি তড়িৎদ্বারে নিয়মিত আবর্তিত হতে থাকে।
'ব্যাটারি চার্জ এবং ডিসচার্জ ব্যাপারটা অনেকটা এমন আপনি বারবার একটা বল পাহাড়ের উপর নিয়ে যাচ্ছেন এবং পরে সেটা গড়িয়ে ফেলে দিচ্ছেন। পুরো প্রক্রিয়াটি মূলত শক্তি জমা করা এবং সেটা খরচ করা। আর সবকিছুই হচ্ছে ব্যাটারির ভিতরে।' বলছিলেন গবেষণায় নিয়োজিত তৃতীয় বিজ্ঞানী থমাস মিলার।
বেশি ব্যবহারের জন্য আপনার প্রয়োজন হবে অধিক পরিমাণ আধান। আর এখানে মূলত ফ্লোরাইড ব্যবহারের সুবিধা নিতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। যদিও এ কাজে বড় বাধা প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহাত করা বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে। ল্যাপটপ বা ফোনে ফ্লোরাইড ব্যাটারি বর্তমান অবস্থায় ব্যবহার করা হলে তাতে উচ্চ মাত্রার ভোল্টেজ প্রয়োজন হবে। গবেষক সাইমন জোনস এ ব্যাপারে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন, 'আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাধারণ ব্যবহারিক ভোল্টেজে একে চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা করা। আমাদের কাছে বর্তমানে থাকা ফ্লোরাইড ব্যাটারি চার্জ করতে উচ্চ ভোল্টেজ প্রয়োজন হচ্ছে। যা প্রাত্যহিক জীবনে পাওয়া সম্ভবপর না।'
কিন্তু যদি সম্ভব হয়? তাহলে হয়তো প্রতিদিন সারাবিশ্বে কয়েকশ কোটি ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে। এবং সেটা সম্ভব। সাইমন জোনস যেমন বলেছেন, ব্যাটারিতে ফ্লোরাইড আবার ফিরে আসছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড