• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আগামীর শিল্প জ্বালানি হবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড!

  জুবায়ের আহাম্মেদ

১১ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:২৫
কার্বন-ডাই-অক্সাইড
কার্বন-ডাই-অক্সাইড হতে পারে আগামীর শিল্প জ্বালানি

কার্বন নিঃসরণ, পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি, শিল্প জ্বালানির বিকল্প চিন্তা, জীবাশ্ম জ্বালানির ক্রমাগত হ্রাস পাওয়া... সবই এক সুতোয় বাঁধা একটি সমস্যা। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা যেমন প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে সেই সাথে বাড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ। প্রতিদিন, প্রতিটা সেকেন্ড পৃথিবীর সকল মানুষ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছেড়ে দিচ্ছে। সেই সাথে বৃক্ষ নিধনের কারণে কার্বন ডাই অক্সাইডের গ্রহীতা কমে যাওয়াতে সেই পরিমান বেড়েছে আরও বহুগুণ।

একইসাথে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য শিল্পায়ন হয়ে পড়েছে আবশ্যক। কিন্তু শিল্পাঞ্চল থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড এই বিপদ বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন। আবার জ্বালানির জন্য কাঠের দহন কাজেও বেড়ে চলেছে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ।

এমনই বিপদের মুখে নতুন আশার বাণী শুনিয়েছেন হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। দীর্ঘদিনের গবেষণার ফলাফল হিসেবে অচিরেই কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিকল্প একটি রাস্তার সন্ধান পেয়েছেন তারা। আর এই প্রবাহে শিল্প জ্বালানি নিয়েও দুশ্চিন্তাও কমে আসবে। নতুন এই আবিষ্কারের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডই হতে পারে আগামীর শিল্প জ্বালানি।

ভেবে দেখুন কোনো এক সময় কারখানার ধোঁয়া বাতাসে ছাড়ার পরিবর্তে গ্যাসগুলো পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকেই আসছে, কিংবা কারখানার কালো ধোঁয়া রাসায়নিক এক প্রক্রিয়ায় কেলাসিত হয়ে নতুনভাবে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং শিল্পজাত হিসেবে সে সময় কার্বন-ডাই-অক্সাইডের জায়গায় অক্সিজেন নির্গত হচ্ছে।

এমনি এক ভবিষ্যতের কথা শোনাচ্ছেন হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাওশিন ওয়াং এবং তার সতীর্থরা। ওয়াং এবং তার গবেষক দল নতুন এক উপায়ে তাড়িতশক্তির মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কার্বন মনোক্সাইডে রুপান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ করে শিল্প জ্বালানি উৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন। গত নভেম্বরের ৮ তারিখ “জুল” ম্যাগাজিনে প্রকাশিত গবেষণায় এমনই দাবি করা হয়েছে।

“সবচেয়ে আশার কথা হলো, আধুনিক যন্ত্রপাতির সাথে আমরা কয়লা ভিত্তিক জ্বালানি প্রকল্পের একটি সংযোগের চেষ্টা করছি। এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ গ্যাসের নির্গমন হয় যার প্রায় ২০ শতাংশই কার্বন ডাই অক্সাইড। এরপর সেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড যদি তাড়িতশক্তির সাথে যুক্ত করা যায় সেক্ষেত্রে একটি টেকসই জ্বালানির ব্যবস্থা সম্ভব।”

এর আগে ২০১৭ সালে একই রকম তাড়িৎশক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলেন ওয়াং। এবারের প্রচেষ্টায় তড়িৎ কোষে কপার বা তামার কেলাস ব্যবহার করা হলেও পূর্বে নিকেল ব্যবহার করা হয়। নতুন এই পদ্ধতি পূর্বের তুলনায় বেশ সস্তা এবং কেবলমাত্র কার্বন ডাই অক্সাইডের বাড়তি ঘনত্বের উপর নির্ভর করে। সেই সাথে জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন যাতে করে পুরো তড়িৎ প্রক্রিয়া আরো ভালোভাবে পরিচালিত হতে পারে।

নতুন এই পদ্ধতিতে দুটি চ্যালেঞ্জকেই বড় করে দেখছেন ওয়াং। একটি এই কাজের জন্য খরচ আর অন্যটি এর কাজের পরিধি।

ওয়াং বলেন, “ইতিপূর্বে আমরা শুধুমাত্র একটি নিকেল অণুর তড়িৎদ্বার ব্যবহার করেছিলাম যা কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ কমিয়ে আনতে খুবই উপযোগী ছিল। কিন্তু আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ ছিল তা হলো এর পিছনে খরচ। এটি ছিল বেশ ব্যয়বহুল একটি পদ্ধতি।”

নতুন এই পদ্ধতিতে প্রতি ব্যাচে একক গ্রাম হিসেবে কপার কেলাস সংগ্রহ করতে পারছেন বিজ্ঞানীরা যা নিকেলের ক্ষেত্রে আগে কেবল মাত্র মিলিগ্রাম এককে পাওয়া সম্ভব ছিল। এছাড়া পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় নতুন এই কেলাস পূর্বের কেলাস থেকে অধিক পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে সক্ষম।

নিজেদের কাজের সম্ভাবনা নিয়ে হাউশিন ওয়াং বলেন, “আপনার কাছে যদি বড় কোন ট্যাংক বা তড়িৎকোষ থাকে সেক্ষেত্রে কয়েক কিলোগ্রাম এমনকি কয়েক টন কেলাস আপনি পেতে পারেন।”

পূর্বের পদ্ধতিতে তড়িৎকোষে থাকা পানি অণুর অক্সিজেন এবং প্রোটন আলাদা হয়ে নিকেল তড়িৎদ্বারের সাহায্যে কার্বন ডাই অক্সাইড ভাঙনের কাজ করতো। কিন্তু সেক্ষেত্রে সমস্যা ছিল, এটি কেবলমাত্র পানিতে দ্রবীভূত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমাতে সক্ষম ছিল। কিন্তু এবার বিজ্ঞানীরা জলীয় বাষ্প ব্যবহারের মাধ্যমে সেই সীমাবদ্ধতা দূর করতে সক্ষম হয়েছেন। আগের পরীক্ষায় তড়িৎকোষে পানির পরিমাণ ছিল ৯৯ শতাংশ এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ছিল কেবল ১ শতাংশ। কিন্তু জলীয়বাষ্পের কারণে তড়িৎকোষে প্রায় ৯৭ শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রবেশ করানো হয়।”

নতুন এই প্রযুক্তি অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত সফলতার জন্য অবশ্য দীর্ঘমেয়াদে পরিচালনা করা প্রয়োজন বলে অভিমত দিয়েছেন এর আবিষ্কারক হাউশিন ওয়াং। সেই সাথে বর্তমানে তিনি কার্বন মনোক্সাইড নিঃসরন রোধে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার প্রকাশিত গবেষণাপত্রে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড