যুলকারনাইন আহমেদ
একসময় সারা বিশ্বের কাছে আতঙ্ক ছিল ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা গুটিবসন্তের কিছু রোগ। মানবসভ্যতাকে বারবার বিপর্যস্ত করেছে প্লেগ কিংবা কলেরার মত রোগ। ১৯৮১ সালে নতুন করে বিশ্বের সামনে আসে 'এইডস'। এইচআইভি নামক ভাইরাসের সংক্রমণে হওয়া এই রোগের বিরুদ্ধে এখনও অজেয় বিজ্ঞানীরা। তবে প্রতিনিয়ত গবেষণার ফলে প্রতিবারই নতুন নতুন আবিষ্কারের কারণে ধীরে ধীরে এইডস এবং এইচআইভি ভাইরাসের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা চলছে সারা পৃথিবীতে।
চলতি অক্টোবর মাসের শুরুতেই তেমনই আরেক গবেষণার ফল রীতিমতো আশা জাগিয়েছে সারা পৃথিবীর মানুষদের। বেশ কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রয়াসে এবং 'ইউনিভার্সিটি অফ ডেলওয়্যার' এর দুই গবেষকের নেতৃত্বে আবিষ্কৃত হয়েছে এইচআইভি ভাইরাসের জীবনচক্র।
আগস্টে করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের প্রকাশিত প্রবন্ধের জের ধরেই আবিষ্কৃত হয় এইচআইভি ভাইরাসের এই জীবনচক্র। আগস্টে প্রকাশিত সেই প্রবন্ধে IP6 নামের ক্ষুদ্র এক মলিকুল সম্পর্কে বিশেষ আলোকপাত করা হয়। গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, IP6 এইচআইভি ভাইরাসের জীবনচক্রের পরিণত এবং অপরিণত সকল অবস্থাতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
IP6 এইচআইভি জীবনচক্রে দুটি আলাদা পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে কাজ করে থাকে। একটি কোষ থেকেই IP6 এর সাহায্যে কয়েক মিলিয়ন ভাইরাসের জন্ম হতে পারে। তবে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া ছাড়া এটি কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করতে পারেনা।
আগস্টের এই গবেষণার যেখানে শেষ সেখান থেকেই নতুন গবেষণা শুরু করেন 'ইউনিভার্সিটি অফ ডেলওয়্যার' (ইউডি) এর রসায়ন এবং প্রাণরসায়নের অধ্যাপক হুয়ান পেরিলা এবং ডক্টরেট ছাত্র চাওয়ি জু।
পেরিলা এবং জু তাদের গবেষণায় গাণিতিক এবং তাত্ত্বিক দুটো দিকই বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। গবেষণায় মূলত দুটি দিকে নজর দেয়া হয়। ভাইরাস ক্যাপসিডের গঠন। এবং এর গঠনে IP6 এর ভূমিকা। পুরো গবেষণায় উন্নত মাইক্রোস্কপের পাশাপাশি সুপার কম্পিউটারের ব্যবহার এর সত্যতা নিশ্চিত করে।
গবেষণা প্রক্রিয়া সম্পর্কে পেরিলা বলেন, 'কিছু কিছু অংশ দেখে সম্পূর্ণ স্থিরচিত্র মনে হবে। কিন্তু কম্পিউটিং মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আসলে পুরো প্রক্রিয়া কিভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।'
পেরিলা এবং জু তাদের গবেষণার পুরোটাই করেন একটি বিশেষায়িত পরিবেশে। যাকে বলা হয় 'এক্সট্রিম সায়েন্স ন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এনভায়রনমেন্ট।'
আমেরিকান ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন এর অধীনে এতে সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে কেবল সনির্দিষ্ট কিছু সমস্যার গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
পেরিলার গবেষক দল একই প্রক্রিয়ায় এইচআইভির পাশাপাশি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নিয়েও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়াও বিস্তারিত জানার জন্য অন্যান্য রেট্রো ভাইরাসে IP6 এর প্রভাব নিয়ে গবেষণা চলছে।
পেরিলা বলেন, 'আমরা কেবল এটা জানতে পেরেছি এইচআইভি ভাইরাস IP6 এর মাধ্যমে নিজেদের পরিণত করে তোলে। এখন আমাদের লক্ষ্য রেট্রোভাইরাস ঠিক কিভাবে IP6 ব্যবহার করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া।'
এইচআইভি নিয়ে কিছু কথা
এইচআইভি এর পূর্ণরূপ 'হিউম্যান ইমিনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস।' এর ফলে যে রোগের উৎপত্তি তার নাম 'এইডস।' জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে সারা বিশ্বের ৩৭ লাখ মানুষ এইচআইভি ভাইরাস বহন করে চলেছে। এইচআইভি রেট্রোভাইরাস পর্বের লেন্টোভাইরাস বর্গের অন্তর্ভুক্ত। নিজের বংশবৃদ্ধির জন্য এইচআইভি ভাইরাসের একটি পোষ্য দেহ প্রয়োজন হয়। এছাড়া প্রয়োজন CD4 রিসেপ্টর। CD4 রিসেপ্টর যে কোনো সুস্থ কোষেই বিদ্যমান।
CD4 রিসেপ্টর এর মাধ্যমে এইচআইভি নিজস্ব একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে যার ফলে দেহের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে পড়ে।
এইচআইভি এর গঠন
এইচআইভির আকার গোল একটি বলের ন্যায়। এইচআইভি মূলত একটি আরএনএ ভাইরাস। এই আরএনএ'ই পোষ্য দেহে জন্ম নেয়া নতুন ভাইরাসে জিনোম সিকোয়েন্স বহন করে।
এইচআইভির সবচে বাইরের স্তরকে বলা হয় 'এনভেলপ'। এনভেলপ পোষক দেহের কোষঝিল্লিতে অবস্থান নেয় এবং ভাইরাস তখন নিজস্ব কোষঝিল্লি তৈরি করতে এনভেলপ ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এনভেলপে নিজস্ব কিছু প্রোটিন উপাদান থাকে যা পোষকদেহ আক্রমণে সহায়তা করে। GP120 ভাইরাসকে CD4 রিসেপ্টরে যুক্ত হতে এবং GP41 কোষঝিল্লি অকেজো করে নতুন ভাইরাস গঠনের কাজ করে থাকে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, IP6 মলিকুল এই পুরো প্রক্রিয়ার গতি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
পেরিলা এক ম্যাগাজিনে দেয়া সাক্ষাতে বলেন, 'প্রতিটি ভাইরাসই একসময় নিজেদের প্রকাশ করে। তবে এটি আমাদের কাছে একটু আলাদা গুরুত্ব বহন করে।'
এইচআইভি কবে নিজেকে মেলে ধরবে? সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য আজও অজানা।
তথ্যসূত্র: সায়েন্স নিউজ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড