• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ কমায় পলিপিল : গবেষণা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ নভেম্বর ২০২০, ২২:১৭
পলিপিল
হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ কমায় পলিপিল : গবেষণা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

চারটি ওষুধের সংমিশ্রণে তৈরি পলিপিল মানুষের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের হার উল্লেখযোগ্যভাবে (৪০%) কমাতে পারে বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

‘ইন্টারন্যাশনাল পলিক্যাপ স্টাডি (টিপস-৩) এর ওই গবেষণাপত্রটি গত ১৩ নভেম্বর নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত হয়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সায়েন্টিফিক সেশনেও গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়।

বিশ্বব্যাপী গবেষকরা বহুদিন ধরে চেষ্টা করে আসছিলেন কিভাবে হৃদরোগ নিরাময়ে বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে একটি কার্যকরী পিল তৈরি করা যায়, যেটি খুব স্বল্প মূল্যে সকল শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে। সর্বশেষ এই গবেষণার মাধ্যমে অবশেষে তারা সফলতার মুখ দেখেছেন। বর্তমানে গবেষণাটি নিয়ে সারা বিশ্বে আলোচনা চলছে।

পলিপিল হলো চারটি ওষুধের সংমিশ্রণে তৈরি একটি পিল, যার মধ্যে তিনটিই হলো পৃথক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ (অ্যাটেনলল, রামিপ্রিল, এবং ‘ওয়াটার পিল’ হাইড্রোক্লোরোথিয়াজাইড)। এছাড়া অন্যটি হলো চর্বি (কোলেস্টেরল) হ্রাসকারী ওষুধ স্ট্যাটিন (সিমভাস্ট্যাটিন)। এই চারটি ওষুধকে একত্রিত করে পলিপিল নামে এই পিলটি তৈরি করা হয়েছে। এটি মূলত অ্যাসপিরিন নামক ওষুধের সাথে সেবন করা যায় কিংবা অ্যাসপিরিন ছাড়াও সেবন করা যায়।

কানাডার ম্যাক মাস্টার ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সেলিম ইউসুফের নেতৃত্বে কানাডা, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, তানজানিয়া, তিউনিশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও বাংলাদেশসহ মোট নয়টি দেশের গবেষকরা এই প্রজেক্টটিতে কাজ করেছেন। ৫ হাজার ৭০০ স্বেচ্ছাসেবীর ওপর প্রায় পাঁচ বছরব্যাপী এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশ থেকে এমিনেন্স এসোসিয়েটিস ফর সোশ্যাল ডেভলাপমেন্ট নামক একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজেক্টটি বাস্তবায়নে কাজ করে। বাংলাদেশের গবেষণা দলটিকে নেতৃত্ব দেন এমিনেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জনস্বাস্থ্য গবেষক ডা. শামিম হায়দার তালুকদার এবং প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন ডা. শাহীন আক্তার।

ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগের মাঝারি মাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যাদের মধ্যে পুরুষদের বয়স ছিল ৫০ বছর এবং নারীদের বয়স ছিল ৫৫ বছর। স্বেচ্ছাসেবীদের কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত করে তাদের কাউকে শুধুমাত্র পলিপিল সেবন করতে দেওয়া হয়, আবার কোন গ্রুপকে পলিপিল এবং অ্যাসপিরিন উভয় সেবন করতে দেওয়া হয়। আবার অন্য কোন গ্রুপকে শুধুমাত্র স্বল্প মাত্রার (৭৫ মি.গ্রা.) অ্যাসপিরিন সেবন করতে দেওয়া হয়।

গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা যায়, যারা অ্যাসপিরিন ও পলিপিল উভয় গ্রহণ করেছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা ও এর ফলে সৃষ্ট মৃত্যু সংখ্যা ৩১ শতাংশ কমেছে। তবে ১.৫ শতাংশের ক্ষেত্রে রক্তচাপ কমে যাওয়া ও ঝিমুনিসহ স্বল্প মাত্রার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কিন্তু সে সব ক্ষেত্রে ওষুধের ডোজ কমিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যারা কোন রকম অনিয়ম বা বাধা ছাড়া ওষুধ সেবন অব্যাহত রেখেছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা ৪০ শতাংশ কমে যেতে দেখা গেছে। আর যারা দুইটি ওষুধই সেবন করেছিলেন, তাদের মধ্যে শুধুমাত্র ৪ শতাংশ এর ক্ষেত্রে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক এর সমস্যা দেখা গেছে। এছাড়া যারা শুধুমাত্র অ্যাসপিরিন গ্রহণ করেছিলেন তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ কোন পার্থক্য দেখা যায়নি। কিন্তু যারা শুধুমাত্র পলিপিল গ্রহণ করেছিলেন তাদের ক্ষেত্রে মাঝারি ফলাফল দেখা গেছে।

গবেষণাটির প্রধান গবেষক সেলিম ইউসুফ বলেন, ‘গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে পলিপিল ও অ্যাসপিরিনের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হবো’

আরও পড়ুন : সড়কে নামছে নতুন রাইড শেয়ার প্রতিষ্ঠান ‘ড্রাইভিল’

পলিপিল নিয়ে বাংলাদেশের গবেষণা দলের প্রধান জনস্বাস্থ্য গবেষক ডা. শামীম তালুকদার বলেন, ‘পলিপিল নিয়ে আমাদের কাছে এখন সর্বাধিক আধুনিক তথ্য রয়েছে। বাংলাদেশসহ সমপর্যায়ের দরিদ্র দেশগুলোর জনগণের হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি স্বল্পমূল্যের সহজলভ্য ওষুধের প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে এই ওষুধটি ভবিষ্যতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখি।’

গবেষণাটি পুরো পাঁচ বছরব্যাপী সাত হাজার মানুষের ওপর করার কথা থাকলেও ওষুধ সরবরাহের সমস্যা ও করোনা মহামারির প্রকোপের কারণে গবেষণাটিকে সীমিত করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড