• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নবিজির হাওয়ারি : যুবাইর ইবনুল আওয়াম

  ধর্ম ও জীবন ডেস্ক

২৩ অক্টোবর ২০১৯, ১২:৩৬
সাহাবা
ছবি : প্রতীকী

চারিদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়লো মুশরিকরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বন্দি অথবা হত্যা করে ফেলেছে। খবর শোনামাত্রই একজন বালক ক্ষিপ্ত হয়ে উন্মুক্ত তরবারি হাতে হাজির হলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘শুনেছি, আপনি বন্দি অথবা নিহত হয়েছেন।’

সে দিন বালকটির এরূপ আত্মত্যাগ, ভালোবাসা আর সাহসিকতা দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত মুগ্ধ হলেন। তিনি বালকটির জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করলেন।

সিরাত লেখকদের বর্ণনামতে, এটিই হচ্ছে প্রথম তরবারি, যা আত্মোৎসর্গের উদ্দেশ্যে একজন বালক উন্মুক্ত করেছিলেন। আর সেই বালকটিই হচ্ছেন ইসলামের ইতিহাসের অদম্য বীর যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাদিআল্লাহু আনহু)। যিনি ছিলেন আশারায়ে মুবাশশারা (জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন) সাহাবির একজন। যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাদিআল্লাহু আনহু) ছিলেন ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ। অত্যন্ত বীরত্বের সাথে তিনি ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত প্রায় সকল যুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন।

বদর যুদ্ধ চলাকালীন যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাদিআল্লাহু আনহু) শত্রুপক্ষের সাথে সাংঘাতিকভাবে লড়েছিলেন। আঘাতের তীব্রতায় তাঁর সারা শরীর ক্ষত বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল এবং তরবারিও ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল। মূলত সে দিনের ক্ষত এতটাই গভীর ছিল, এর ফলে তাঁর শরীরে গর্তের মতো হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তাঁর পুত্র উরওয়া (রা.) উল্লেখ করেন, ‘আমরা সেই গর্তে আংগুল ঢুকিয়ে খেলা করতাম।’

খন্দকের যুদ্ধকালীন কথা। মদিনার ইহুদি গোত্র বনু কুরাইযা মুসলিমদের সাথে সম্পাদিত মৈত্রিচুক্তি ভঙ্গ করে। রাসুল (সা.) তাদের অবস্থা জানার জন্য গুপ্তচর হিসেবে কাউকে পাঠাতে চাইলেন। সাহাবাদের উদ্দেশে তিনবার তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে তাদের সংবাদ নিয়ে আসতে পারবে?’

প্রত্যেকবারই যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.) বললেন, ‘আমি, ইয়া রাসুলাল্লাহ।’ রাসুল (সা.) তার উদ্দীপনায় সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, ‘প্রত্যেক নবিরই একজন হাওয়ারি (ঘনিষ্ঠ সঙ্গী/সাথী/অনুসারী) থাকে। আমার হাওয়ারি হচ্ছে যুবাইর।’ সুবহানাল্লাহ।

বস্তুত একজন ‘হাওয়ারি’ হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, এর সবই যুবাইর ইবনুল আওয়াম রাদিআল্লাহু আনহুর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। মূলত একজন যোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও যুবাইর ইবনুল আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহুর অন্তর ছিলো অত্যন্ত কোমল। উত্তম চরিত্র, তাকওয়া, দানশীলতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং সাহসিকতার সমন্বয়ে তিনি ছিলেন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

তাঁর এমন দুঃসাহসিক হয়ে বেড়ে ওঠার পিছনে ছিলেন তার মা সাফিয়্যা বিনতু আবদুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহার অবদান। শৈশব থেকেই তিনি ছেলেকে এমনভাবে প্রতিপালন করেন, যাতে বড় হয়ে সে একজন দৃঢ়-সংকল্প এবং আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ হয়ে ওঠেন। তাঁর প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি। সত্যিকার অর্থেই যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.) হয়ে উঠেছিলেন একজন দুঃসাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী এবং অদম্য বীর।

তথ্যসূত্র : ১. আসহাবে রাসূলের জীবনকথা (প্রথমখণ্ড) ২. সাহাবাদের জীবনী ৩. The life and martyrdom of Zubayr ibn al-Awwam (Radi-Allahu anhu)

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড