মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির
মুক্তির প্রথম সোপান হলো ঈমান। ঈমান মানে বিশ্বাস, আর সেই বিশ্বাস অনুযায়ী জীবন গঠন। ঈমান শুধুমাত্র কিছু মৌখিক বুলির নাম নয়। ঈমান হলো বিশ্বাস আর কর্মের বাস্তব অনুশীলন। এই ঈমানই প্রথমযুগের মুসলিমদের বিজয়ের রাজ মুকুট এনে দিয়েছিল। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে ওয়াদা করেছেন।
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
‘তোমরা নিরাশ হয়ো না, চিন্তাও করো না। বিজয়ী তোমরাই হবে, যদি তোমরা মুমিন হও।’ [সুরা আলি ইমরান, ৩ : ১৩৯]
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ
‘আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তোমাদের মধ্য হতে যারা ঈমান আনবে ও সৎকর্ম করবে, তিনি তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববতীদেরকে।’ [সুরা নুর, ২৪ : ৫৫]
অথচ দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আজকে বিজয় প্রত্যাশীরা বিজয়ের এই পূর্বশর্তকে তেমন কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। আজকে ইসলামের বিষয়াবলির মাঝে সম্ভবত সবচেয়ে কম আলোচনা হচ্ছে ঈমান নিয়ে। যতটুকু হচ্ছে, সেটাকেও কোনো অর্থেই পূর্ণাঙ্গ বলা যায় না। এ জন্য আমাদের এই মহৎ পদক্ষেপের প্রথম কর্মসূচি হবে ঈমান। তৃণমূল পর্যায় থেকে ঈমানের পূর্বশর্ত, রুকনসমূহ, এর দাবি-দাওয়া ও এ সংক্রান্ত মৌলিক বিষয়াবলির চর্চা এবং এর ভিত্তিতে একটা বৃহৎ জাগরণ সৃষ্টি করা। আমরা সংক্ষেপে এখানে কিছু বিষয় উপস্থাপন করছি। এ ব্যাপারে আরও ব্যাপক অধ্যয়ন কাম্য।
ক. ঈমানের পূর্বশর্ত
এমন একজন ব্যক্তির কথা ভাবুন তো, যে খুব সুন্দর করে, ধীরস্থিরে, বিনয় ও নম্রতার সাথে নামাজ আদায় করছে—কিন্তু সে ওযু করেনি, পবিত্রতা অর্জন করেনি। কী বলবেন আপনি তার ব্যাপারে? তার এই নামাজ কবুল হবে? কখনোই না। প্রশ্নই আসে না। কারণ কী? কারণ হলো—প্রতিটি কাজেরই কিছু প্রি-কন্ডিশন বা পূর্বশর্ত থাকে। সেই শর্ত পূরণ ব্যতীত কাজটি করা যায় না। করলেও গ্রহণযোগ্য হয় না। প্রতিটি আমল-ইবাদাতেরও এরকম কিছু পূর্বশর্ত আছে। সালাতের পূর্বশর্ত হলো তাহারাত বা পবিত্রতা। পবিত্রতা ব্যতীত সালাত গ্রহণযোগ্য নয়।
ঈমান। সমস্ত আমলের গ্রহণযোগ্যতার পূর্বশর্ত। সেই ঈমানেরও আছে পূর্বশর্ত; যা পূরণ না করলে কারও ঈমানও গ্রহণযোগ্য হবে না। আর ঈমানের সেই পূর্বশর্তটি হলো, ‘কুফর বিত তাগুত’ তথা তাগুতকে বর্জন। সুতরাং তাগুত বর্জন না করেই ঈমানের দাবি করার মানে হলো, ওযু ছাড়া নামায পড়ে তা কবুলের আকাঙ্ক্ষা করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
‘যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল, যা ছিঁড়ে যাবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা।’ [সুরা বাকারা, ২ : ২৫৬]
তাগুত পরিচিত
পূর্ববর্তী আলিমগণ তাগুত সংক্রান্ত যে আলোচনা করেছেন তার সারমর্ম হলো, আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে কিংবা পাশাপাশি যার ইবাদাত করা হয়, আল্লাহর বিপরীতে যার আনুগত্য করা হয়, তাকেই তাগুত বলা হয়, যদি সে এতে সন্তুষ্ট থাকে, অনুমোদন দেয় কিংবা বাধ্য করে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে তাগুত বহু প্রকার হতে পারে। এর মধ্যে প্রধান প্রধান তাগুত হলো :
• শয়তান। সমস্ত শিরক ও তাগুতের মূলহোতাই হলো শয়তান। [সুরা ইয়াসিন, ৬০]
• ইলমুল গায়িবের দাবিদা রগণক, জোতিষী, হস্তবিশারদ, পির-পুরোহিত। [সুরা আল-আনয়াম, ৫৯]
• জাদুকর। কারণ সে নিজেও শিরক করে এবং অন্যকেও শিরকে নিমজ্জিত করে। [সুরা বাকারা ২ : ১০২]
• আল্লাহর আইন পরিবর্তন কিংবা বাতিলকারী অত্যাচারী শাসক। [সুরা আন-নিসা, ৬০]
• গাইরুল্লাহর আইনে ফায়সালাকারী বিচারক। [সুরা আল-মায়িদা, ৪৪]
চলবে ইনশাআল্লাহ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড