• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মহাকালের শপথ [পর্ব-০১]

সুরা আল-আসর ও নব্য জাহিলি সমাজ ব্যবস্থা

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:০৫
time_odhikar
ছবি : প্রতীকী

وَالْعَصْرِ ۝ إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ ۝ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ۝ [العصر:1-3]

‘মহাকালের শপথ! নিশ্চয়ই সমগ্র মানবজাতি মহা ক্ষতিগ্রস্ততায় নিমজ্জিত। কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে, পরস্পরকে হকের প্রতি আহ্বান করে, এবং পরস্পরকে উৎসাহিত করে সবর বা ধৈর্য অবলম্বনের।’ [সুরা আল-আসর]

প্রসঙ্গকথা

আয়াতসংখ্যার দিক থেকে কুরআনের সবচেয়ে ছোট তিনটি সুরার একটি হলো সুরা আল-আসর। আয়তনে ছোট হলেও মর্মের দিক থেকে এটি অনেক বিস্তৃত। এদিকে লক্ষ্য করেই ইমাম শাফিয়ি (রহ.) বলেছিলেন, ‘মানুষ যদি ছোট্ট এ সুরাটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতো, তাহলে এটিই তাদের জন্য যথেষ্ট হতো।’ এ জন্যই সাহাবা আজমাইন (রা.) পরস্পরে সাক্ষাৎ হলে এ সুরাটি একে অপরকে না শুনিয়ে বিদায় দিতেন না। [তাফসির ইবনু কাসির]

সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। মক্কার সেই জাহিলি পরিবেশে, জাহিলিয়াতে আকন্ঠ নিমজ্জিত সমাজে কী হবে মুক্তির পথ—সেই কর্মসূচিই জানিয়ে দেয়া হয়েছে এখানে। আর কুরআনের বাণী যেহেতু চিরন্তন, তাই অনাগত গোটা মানবজাতির কল্যাণ, সফলতা ও মুক্তি নির্ভর করছে এই সুরায় বর্ণিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর। এটি হলো মুক্তিকামীদের ম্যানিফেস্টো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুরো জীবনে আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে পাই। তাঁর সমস্ত কার্যক্রম যেন ছিল এই সুরাটিকে কেন্দ্র করে।

আজকের আধুনিক পৃথিবীর অবস্থা আরবের সেই জাহিলি সমাজব্যবস্থা থেকে মোটেই ভিন্ন নয়। জাহিলিয়াতের রূপ, গন্ধ আর অঙ্গসৌষ্ঠব বদলেছে, কিন্তু ভেতরটা ঠিক আগের মতোই অন্তসারশূন্য। মন্দির বদলেছে, বদলেছে পূজার ধরনও, কিন্তু বদলায়নি পূজারিদের মনস্তত্ত্ব। বরং আজকের জাহিলিয়াত গতকালের জাহিলিয়াত থেকে আরও ভয়াবহ, আরও মারাত্মক। তাই আজকের সংঘাতময় পৃথিবীতে, জাহিলিয়াতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত এই সমাজেও ঠিক সেই পন্থায়ই পরিবর্তন আসবে, যে পন্থায় পরিবর্তন এসেছিল আরবের সেই জাহিলি সমাজব্যবস্থায়। এই উম্মাহর শেষ প্রজন্মও সংশোধিত হবে সেই পন্থায়, যে পন্থায় সংশোধিত হয়েছিল প্রথম প্রজন্ম। আর এ জন্য আমাদের গ্রহণ করতে হবে সুরা আসরে বর্ণিত চারদফা কর্মসূচি : ১. ঈমান, ২. আমল, ৩. দাওয়াহ, ৪. সবর। এই চারদফা কর্মসূচি হলো একটা চেইনের মতো, একটা ছাড়া আরেকটা অচল।

প্রথম পদক্ষেপ

আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে সুরা আল-আসরের তাদাব্বুর বা অধ্যয়ন। বর্তমান সমাজকে বুঝতে হলে এই সুরাটির গভীর থেকে গভীরে প্রবেশ করতে হবে আমাদের। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন—

• আল্লাহ তায়ালা সুরাটি শুরু করেছেন কসমের মাধ্যমে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিষয়বস্তুর প্রতি গুরুত্বারোপ। মানে, এরপর যে কথাগুলো আসছে সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালার প্রতিটি কথাই গুরুত্বের দাবিদার, কিন্তু যখন তিনি নিজেই কোনো ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করছেন, তখন সেই ব্যাপারটা আমাদের কতখানি গুরুত্ব দেয়া উচিত?

• কসম করেছেন আল-আসরের। এখানে ‘আল-আসর’ শব্দটির সম্ভাব্য ৪টি ব্যাখ্যা হতে পারে :

১. আদ-দাহর বা সময়-কাল। এর দ্বারা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো সময়কালও উদ্দেশ্য হতে পারে, আবার পুরো মানবজীবন (জন্ম থেকে মৃত্যু) উদ্দেশ্য হতে পারে।

২. আসরের সালাত। এর দ্বারা আসরের সালাতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য উদ্দেশ্য হতে পারে।

৩. রাসুলুল্লাহর (সা.) জীবদ্দশা, সেই সোনালি সময়। এর দ্বারা উম্মাহর মুক্তির জন্য রাসুলের সেই স্বর্ণালি সময়কে আঁকড়ে ধরার গুরুত্ব বোঝানো হতে পারে।

৪. উম্মাতে মুহাম্মাদির বয়সকাল। এক হাদিসে এসেছে যে, অন্যান্য জাতির তুলনায় এই উম্মাহর বয়স হলো আসর-থেকে মাগরিব। এটাই শেষ উম্মাহ, শেষ সময়। এরপর কোনো নবিও আসবে না, উম্মাহও আসবে না। কিয়ামতের খুবই সন্নিকটস্থ সময়ে আমাদের পাঠানো হয়েছে। সময় খুবই কম। দায়িত্ব অনেক বেশি।

সবগুলোর সারমর্ম প্রায় কাছাকাছিই—সময়কে গুরুত্ব দেওয়া, সময়ের বাস্তবতা অনুধাবন করা, যা পরবর্তী কর্মসূচির জন্য খুবই দরকারি।

• এরপর বলা হয়েছে, সমগ্র মানবজাতি মহা-ক্ষতিগ্রস্ততায় নিমজ্জিত। সীমাহীন ক্ষতি। বরফ বিক্রেতার বরফ (মূলপুঁজি) গলে যাওয়ার মতো, গভীর সমুদ্রে ডুবে যাওয়া জাহাযের যাত্রীর মতো, বদ্ধ রুমে আগুন লেগে যাওয়া ব্যক্তির মতো ক্ষতিগ্রস্ততায় নিমজ্জিত। এখানে خُسْر (ক্ষতি) শব্দটা ব্যাপক। এমন ক্ষতি, যা পরিমাপ করা সম্ভব নয়। আধ্যাত্মিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষতি। এটাই আজকের পৃথিবীর বাস্তবতা। মানুষ সর্বদিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যক্তিগতভাবে চারিত্রিক স্খলন, মানসিক বিকৃতি, ভারসাম্যহীনতা, চিন্তার দৈন্যতা, যৌনলিপ্সা, লোভ, অহঙ্কার; সামাজিকভাবে অশ্লীলতার সয়লাব, নীতি-নৈতিকতাহীনতা, জুলুম-অবিচার, ধনী-দরিদ্রের মাঝে আকাশছোঁয়া প্রাচীর; অর্থনৈতিকভাবে সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা, ফলত সৃষ্ট সুদের মহামারি, কাগুজে মুদ্রার ভয়ঙ্কর ফাঁকি, সম্পদের অসম বণ্টন, পুঁজিবাদের ভয়াল গ্রাসে ভারসাম্যহীন অর্থনীতি, শ্রেণিবৈষম্য ও অধিকার বঞ্চিত গরিব জনগণ; রাজনৈতিকভাবে মানবরচিত আইনের জাহিলি শাসন, সেক্যুলারিজমের মতো কুফরি মতবাদের সয়লাব, নিকৃষ্ট জাতীয়তাবাদের চর্চা, জায়োনিস্ট ইহুদিদের বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র, পর্নোগ্রাফি, সমকামিতাসহ যৌনতার মহাপ্লাবন, সাম্রাজ্যবাদীদের কবলে একেক করে মুসলিম দেশগুলো, প্রায় এক শতাব্দি যাবত খিলাফাহ বিহীন উম্মাহ, বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর ওপর নির্যাতন নিপীড়নের স্টিমরোলার…।

এই বাস্তবতা আমাদের খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। যখন আমরা এই ধাপ অতিক্রম করতে পারব তখনই আমরা মুক্তির পথ খুঁজতে সচেষ্ট হব।

চলবে ইনশাআল্লাহ।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড