মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির
রাতারাতি সেলিব্রিটি হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় এখন টিকটক। অল্প সময়ে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে অ্যাপটি। বিশ্বের প্রায় ৭৫টি ভাষায় এই অ্যাপটি বানানো হয়েছে। ৮০০ মিলিয়নবারেরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে অ্যাপটি। বর্তামানে ফানি ও শর্ট ভিডিওর সর্ববৃহৎ অ্যাপ এটি। বিভিন্ন গানের অংশ, সিনেমা, নাটক বা কৌতুকের ডায়ালগগুলোর সঙ্গে অভিনয় করে রাতারাতি হাজার হাজার ফলোয়ার পেয়ে যাচ্ছে অনেকেই। সেলিব্রেটি হওয়ার নেশায় কেউ কেউ আবার বিভিন্ন ওয়ায-মাহফিলের অংশবিশেষ দিয়েও টিকটক ভিডিও বানাচ্ছে। কেউ কেউ আবার একধাপ এগিয়ে নিজের অজান্তেই দীন-ইসলাম নিয়েও ফান করা শুরু করে দিয়েছে। কৌতুক বা হাস্যরসের ছলে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী মুসলমানরা। জাতির প্রাণশক্তি বলা হয় যে তরুণ সমাজকে, তারাই যদি সব বাদ দিয়ে জীবনটাকে নিবেদিত করে কৌতুক আর হাস্যরসের পেছনে, তাহলে জাতির কী অবস্থা হবে?
ইসলামের দৃষ্টিতে এসবকিছুই মারাত্মক গুনাহের কাজ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এসব অনর্থক কাজের জন্য সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاء وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَاعِبِينَ ‘আকাশ-পৃথিবী ও এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে, আমি তা ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।’ [সুরা আম্বিয়া, ২১ : ১৬]
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
‘একশ্রেণির লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার উদ্দেশে ‘লাহওয়াল হাদিস’ তথা অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।’ [সুরা লুকমান, ৩১ : ৬]
সুতরাং অশ্লীলতা, ঠাট্টা-বিদ্রুপে পরিপূর্ণ এসব ভিডিও তৈরি করা অত্যন্ত জঘন্য পাপ। দুনিয়া ও আখিরাতে যার জন্য ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা এসেছে। যতজন এই ভিডিওগুলো দেখবে সবার পাপের একটা অংশ ভিডিওনির্মাতা পেতে থাকবে। এমনকি মৃত্যুর পরও এই গুনাহ জারিয়াহ বা চলমান হিসেবে আমলনামায় যোগ হতে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে নেক কাজের দাওয়াত দেবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; যারা তার দাওয়াত পেয়ে নেক কাজ করবে অথচ তাদের সওয়াবের সামান্যও হ্রাস পাবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি মানুষকে গুনাহের কাজে আহ্বান করবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ গুনাহ পাবে, যারা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে গুনাহের কাজ করবে। অথচ তাদের গুনাহ হ্রাস পাবে না।’ [মুসলিম, আসসাহিহ : ৬৯৮০]
আবার কিছু ভিডিও হয় কারও প্রতি ট্রল বা ঠাট্টা-বিদ্রুপমূলক। এটিও জঘন্য পাপ। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা, কোনো সম্প্রদায় যেন অপর সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো যালিম।’ [সুরা হুজরাত, ৪৯ : ১১]
পতনের কালে নাকি কোনো জাতি অত্যধিক মাত্রায় ভোগ-বিলাস আর আত্মপ্রমোদে লিপ্ত হয়ে যায়। ইতিহাস তাই বলছে। আজকে দেশ, জাতি, সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহ কী নিদারুণ পরিস্থিতির মাঝ দিয়ে দিনানিপাত করছে। এই পরিস্থিতিতে বিশাল সংখ্যক মুসলিম যুবক এরকম হাসি-ঠাট্টা, মওজ-মাস্তিতে লিপ্ত থাকাটা উম্মাহর জন্য বড় ব্যর্থতা বৈ কি!
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড