• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ক্যাসিনো ইস্যু : ইসলাম কী বলে?

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:১৮
casino_odhikar
ছবি : সংগৃহীত

ক্যাসিনো কী?

ক্যাসিনো শব্দটি ইতালীয় ভাষার ক্যাসা শব্দমূল থেকে উদ্গত। যার অর্থ হলো ঘর। ক্যাসিনো বলতে ছোট ভিলা কিংবা সামাজিক ক্লাবকে বোঝানো হতো। ১৯ শতক থেকে ক্যাসিনো বলতে এমনসব ভবনকে বোঝানো হয় যেখানে নাচ, গান, জুয়া ও ক্রীড়ার ব্যবস্থা থাকে। সর্বপ্রথম ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠিত হয় ইতালিতে, ১৬৩৮ সালে। অবশ্য ১৭৭৪ সালে এটা বন্ধও করে দেয়া হয়।

উনিশ শতকের শুরুর দিকে আমেরিকায় ক্যাসিনো নির্মিত হয়। এসব ক্যাসিনোতে আগতরা পান করতো, আড্ডা দিতো এবং প্রায়শই জুয়া খেলতো। ১৯৩১ সালে নেভাদায় জুয়া খেলাকে বৈধ করা হলে সেখানে প্রথম বৈধ আমেরিকান ক্যাসিনো নির্মিত হয়। ১৯৭৬ সালে নিউ জার্সি আটলান্টিক শহরে জুয়া অনুমোদন করে। এটা বর্তমানে আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহৎ জুয়াড়ি শহর।

জুয়ার ক্ষতি

জুয়া ব্যক্তি ও সমাজকে কলুষিত করে। পারস্পরিক সৌহার্দ্যের পরিবর্তে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়। জুয়ায় হেরে মানুষ অনেক অন্যায়-অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন ফর মেন্টাল হেল্থ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,

‘জুয়াড়িরা নিজের জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, আর এ কারণে গোটা জীবনটা সমস্যায় ভরে যায়। জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে তারা শুধু জুয়া খেলার সুযোগ খোঁজে এবং জুয়ার মধ্যেই নিজেদের জীবনকে ডুবিয়ে রাখে। অনেকে টাকাপয়সা খুইয়ে এবং নানা বিপত্তি সত্ত্বেও জুয়া খেলা ছাড়তে পারে না। বহুবার চেষ্টা করেও জুয়া খেলা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারে না। এটা অনেকটা ড্রাগের আসক্তির মতো।’

শুধু আমেরিকাতেই বছরে ৫৪ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় জুয়ার কারণে। কীভাবে জুয়া একটি দেশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে শেষ করে দেয়, তার পক্ষে পরিসংখ্যান দেখিয়ে বইয়ের পর বই লেখা হয়েছে, অসংখ্য গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। ডেইলি ফাইন্যান্সের ২২ জুলাই, ২০১১ সংখ্যায় একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, একজন জুয়ায় আসক্ত বাবা, তার ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার জন্য জমানো টাকা চুরি করে, স্ত্রীর নামে বিরাট লোন নিয়ে স্ত্রীকে জেলে যাবার ব্যবস্থা করে; শুধুই জুয়ার জন্য টাকা জোগাড় করতে।

জাহিলি যুগে জুয়া

ইসলামপূর্ব মূর্খতার যুগে মদ, জুয়া ও বাজিতে সয়লাব ছিল সমাজ। তখন লোকেরা জুয়া-বাজিতে মারাত্মকভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, নিজ স্ত্রী-সন্তান ও ভিটে-মাটির ওপর বাজি ধরতেও কুন্ঠিত হত না। হেরে গিয়ে চিন্তাক্লিষ্ট ও হতাশাগ্রস্ত হতো। যখন দেখতো তার সম্পদ অন্যের হাতে, তখন শুরু হতো বিজয়ীর সঙ্গে বিরোধ, শত্রুতা ও বিদ্বেষ। এভাবে সমাজের পরিস্থিতি ক্রমশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠেছিল।

ইসলামের দৃষ্টিতে জুয়া-বাজি

ইসলাম আল্লাহপ্রদত্ত জীবনবিধান। স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহই ভালো জানেন মানবজাতির জন্য কোন্ বিধান কল্যাণকর, আর কোনটি অকল্যাণকর। আল্লাহ তায়ালা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর এমন সবকিছুই নিষিদ্ধ করেছেন। জুয়াকেও আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ - إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاء فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللّهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ

‘হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানি অপবিত্র কাজ বৈ কিছুই নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারো। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখনও কি নিবৃত্ত হবে না?’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ৯০-৯১]

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মদ, জুয়া ও বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন।’ [বায়হাকি, আসসুনান : ৪৫০৩]

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে যাবে না।’ [দারিমি, আসসুনান : ৩৬৫৩]

সম্প্রতি ঢাকার চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু ক্যাসিনোর এই স্লট মেশিনগুলো কারা আমদানির অনুমতি দিয়েছে? কোন আইনে দিয়েছে? রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমস কোন আইনে এগুলো আনার অনুমতি বা ছাড়পত্র দিয়েছে? কীভাবে পরিবহণ হলো? কারা সহযোগিতা করেছে—এই প্রশ্নগুলোরও জবাব দরকার। সেই রাঘববোয়ালদের সামনে আনা দরকার, যারা এর মূলহোতা। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, মদ-জুয়ায় সয়লাব একটা সমাজকে আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে মুহাম্মাদ (সা.) যেই আদর্শ দিয়ে পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, সোনালি সমাজে রূপান্তরিত করেছিলেন, সেই আদর্শ বাস্তবায়ন করা দরকার। কারণ আইন করে, অভিযান চালিয়ে, ধরপাকড় করে হয়তো সাময়িকভাবে কিছু সমাধান পাওয়া যাবে, কিন্তু স্থায়ী সমাধানের জন্য ফিরে আসতে হবে ইসলামের কাছেই। সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়ন করা ছাড়া আদর্শিক মুক্তি কল্পনাও করা যায় না।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড