• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সম্পর্কের ভিত্তি

  মাওলানা নজরুল ইসলাম

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:১০
relationship_odhikar
ছবি : প্রতীকী

আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা হচ্ছে ঈমানের অন্যতম শক্তিশালী পিলার। অনেকগুলো খুঁটির মধ্যে একটি খুঁটি। পিলার যত শক্ত হবে কাঠামো তত মজবুত হবে। আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা সরাসরি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাথে সম্পর্কযুক্ত। যদি ওয়ালা (আনুগত্য) বলতে আল্লাহ, তাঁর নবি-রাসুলগণ ও মুমিনদের প্রতি নিষ্ঠাপূর্ণ ভালোবাসা ও সহযোগিতা প্রকাশকে বোঝায়, তবে বিপরীতে বারা (সম্পর্কচ্ছেদ) বলতে মিথ্যা ও মিথ্যার অনুসারী মানুষদের সাথে শত্রুতা পোষণ ও সম্পর্কচ্ছেদ বোঝাবে। আর প্রকৃতপক্ষে এসবের উদ্ভব ঈমানের সবচেয়ে মৌলিক বিষয়গুলো থেকেই।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক দণ্ডকে আমরা প্রায় উপড়েই ফেলেছি। আপনি যখন সত্যকে মেনে নিবেন তখন সাথে সাথে মিথ্যাকে বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হবে। সত্যকে বুকে টেনে মিথ্যার সাথে সখ্যতা গড়ার সুযোগ নেই। সখ্যতা বা বন্ধুত্বের সাথে সদাচরণের বিশদ তফাৎ। আর আমরা ঠিক এই জায়গায় ভুলটা করে ফেলি। সদাচরণ করতে যেয়ে আত্মার আত্মীয় বনে যাই। এই বিধ্বংসী মতবাদ থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

পারস্পরিক ভালোবাসা বা ঘৃণা প্রদর্শন হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির ওপর ভিত্তি করে। কোন ব্যক্তি—যত উঁচু বংশের বা যত বড় আলেম হোক না কেন—যতক্ষণ দীনের উপর অবিচল থাকবেন, যতক্ষণ দীনের ব্যাপারে আপোষহীন থাকবেন, যতক্ষণ দীনের সঠিক মতাদর্শ লালন করবেন, যতক্ষণ উম্মাহর জন্য অশ্রু ঝরাবেন ততক্ষণ তাঁর প্রতি মুহাব্বত থাকবে। অব্যাহত থাকবে ভালোবাসা এবং ভালোলাগা। যখনই টলে যাবেন, অবস্থান থেকে নড়ে যাবেন, মিথ্যার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলবেন তখনই বহমান ভালোবাসার স্রোতের মুখে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। আমাদের আবেগকে কন্ট্রোল করতে হবে। ভালোবাসার মানদণ্ড মেনে চলতে হবে।

কোন আলেম সবসময় মাননীয় নাও থাকতে পারেন। তাঁর সব কথা, রাজনৈতিক কনসেপ্ট, রিলিজিয়াস ভিউ ইসলামের সাথে নাও যেতে পারে। কখনো পুরো বিপরীত মত দাঁড় করাতে পারেন। ঠিক তখনও কি তাঁকে মেনে নিবো? আগের মতোই ভালোবেসে যাবো? যদি তা-ই হয় তাহলে তো এই ভালোবাসা আল্লাহর জন্য হল না। হয়ে গেল ব্যক্তির কারণে, নামডাকের কারণে। আর আমাদের এতদিনের পবিত্র ভালোবাসাটাও মূল জায়গা থেলে সরে গিয়ে মিথ্যা তোষামোদের জায়গায় স্থান করে নিল, যা অন্যায়। ব্যাপারগুলোকে ছোট করে দেখা হলেও সেগুলো মোটেও ছোট নয়। এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ঈমানের রুহ মরে যায়। নিস্তেজ এবং নিষ্প্রভ ঈমান নিয়ে পোশাকি মুমিন হয়ে বেঁচে থাকতে হয়, যা সত্যিই ভয়ানক ব্যাপার।

একজন ব্যক্তির সাম্প্রতিক একটি মন্তব্য বা একটি আলোচনার কারণে তার পুরো জীবনের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। একটি অসঙ্গত মন্তব্য তাঁর পিছনের সব ভালো অর্জনকে এলিমেট করে দেয় না। একজন ব্যক্তির আচরণ, মতবাদ, রাজনৈতিক আদর্শ তাঁর গৌরবগাঁথা বংশের মুখে চুনকালি মাখায় না। এমন ধারণা অন্ধকার যুগের। ইসলাম তা সমর্থন করে না। ব্যক্তির অপরাধ ব্যক্তির একক কাঁধেই চাপবে। পুরো বংশকে সেজন্য আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না। সুতরাং কারোর সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বিরোধিতা করতে যেয়ে পুরো জীবনকে সামনে আনা অবিচারের শামিল। একজন ব্যক্তির দোষ ধরতে যেয়ে বংশের আগাগোড়া নিয়ে আলোচনা করা মারাত্মক অপরাধ। ইনসাফ হচ্ছে, ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট ত্রুটির উপর গঠনমূলক আলোচনা করা। গালিগালাজ বা অগঠনমূলক সমালোচনা করে অন্যায়ের বিপরীতে আরেক জঘন্য অন্যায় করার ফুরসত নেই।

ভক্তকুলরা নিজেদের পছন্দের লোকদেরকে সমালোচনা থেকে বাঁচাতে প্রদত্ত মন্তব্যের মনগড়া ব্যাখ্যা খুব তাড়াতাড়ি দাঁড় করিয়ে ফেলেন। মনে হয়, তারাই ছিলেন ঐ ব্যক্তির রাজনৈতিক উপদেষ্টা। তাবিল-কারখানায় কাজ করা শ্রমিকগুলো নিজেদের সাথে সাথে উম্মাহর বিরাট ক্ষতি করছে। একটা বাজে বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। থামতে হবে তাদেরকেও। হেকমতের কথা আর কি আর বলব। এটা তো এখন সুবিধাবাদ এবং কপটতার প্রতিরূপ।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড