মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির
ইসলাম স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর কোনো ধর্ম নয়। মুসলিমদের প্রতিটি কর্মই হলো ইবাদাত, যদি সেটা তাওহিদ ও সুন্নাহ মোতাবেক হয়। রসম, রেওয়াজ বা কুসংস্কারের কোনো স্থান ইসলামে নেই। কুরআন ও সুন্নাহয় যা আদেশ করা হয়েছে এবং যা নিষেধ করা হয়েছে তা-ই হলো একজন মুসলিমের করণীয় ও বর্জনীয়। হোক সেটা, ইবাদাত-বন্দেগি কিংবা ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনের কোনো কর্ম। এমনকি জন্ম-মৃত্যু, বিয়ে-শাদি পর্যন্ত।
এতটুকু মাথায় রেখে এবার চলি মূল কথায়। কুরআনের কোন আয়াত বা রাসুলের কোন বিশুদ্ধ হাদিস কি কারও জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকী পালনের অনুমতি দিয়েছে? নবিজিকে যারা নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন সেই সাহাবা আজমাইনের কেউ কি নবিজির জীবদ্দশায় অথবা তাঁর ওফাতের পর তাঁর জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছেন? নবিজির ছেলে সন্তানগুলো সব শিশুকালেই একে একে মৃত্যুবরণ করেছেন, ইবরাহিম ছাড়া বাকিরা জন্মের এক বছরের মধ্যেই মারা যায়। শুধু ইবরাহিমই ষোল মাস বয়সে মারা যায়। এজন্য নবিজি (সা.) এতটাই দুঃখিত হন যে, তাঁর চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। কিন্তু এই আদরের সন্তানদের মৃত্যুকে কেন্দ্র তিনি কি কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা করেছিলেন?
ইসলামের দৃষ্টিতে জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস পালন করা এবং এ উপলক্ষে যে সমস্ত ব্যয়বহুল আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয় সবই হারাম এবং বিদয়াত। জন্ম কিংবা মৃত্যু দিবস পালনের কোন প্রমাণ নবিজির পবিত্র জীবনীতে পাওয়া যায় না। তাঁর সাহাবিদের মধ্যেও এধরনের কোনো কিছুর প্রমাণ পাওয়া যায় না।
পৃথিবীর শুরু থেকে যত নবি-রাসুল এসেছেন, আমরা তাদের প্রত্যেকের প্রতি ঈমান রাখি। তাদের প্রতিও ঈমান রাখা জরুরি। এখন এই অসংখ্য-অগনিত নবি-রাসুল, তারপর খুলাফা রাশিদিন, অসংখ্য সাহাবা, তাবিয়িন, আয়িম্মা মুজতাহিদিন জন্ম গ্রহণ করেছেন ও ইন্তেকাল করেছেন। যদি তাদের জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন ইসলাম সমর্থিত হত বা সাওয়াবের কাজ হত তাহলে আমাদেরকে তো বছরব্যাপী জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনের ঘূর্ণাবর্তে আবদ্ধ হয়ে যেতে হত। ইসলামটা হয়ে যেত স্রেফ জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন কেন্দ্রিক।
সাহাবা আজমাইন ছিলেন সত্যিকারার্থে নবিপ্রেমিক ও তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারী। নবিপ্রেমের হাজারও নজির তারা স্থাপন করেছেন। জানবাজি রেখে নবিজিকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। কই, তারা তো কখনও নবিজির জন্ম কিবা মৃত্যুর অনুষ্ঠান পালন করেননি। যদি এটা ভালো কাজ, নেকের কাজই হত, ভালোবাসার প্রমাণ হতো তবে সাহাবারা কি সেটা অবশ্যই পালন করতেন না? অবশ্যই করতেন।
সুতরাং যেখানে প্রিয় নবিজির জন্ম এবং মৃত্যু দিবসই পালন করা শরিয়তসিদ্ধ নয়, সেখানে অন্য কারো জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস পালন করা কতটুকু শরিয়ত সম্মত হতে পারে? আসলে ইসলামের সাথে এসবের দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই। ইসলামের পূর্ণতার শত শত বছর পরে ভক্তির আতিশয্যে কিংবা বিধর্মীদের সাদৃশ্যাবলম্বনে ইসলামের গায়ে বিষফোঁড়ার ন্যায় এগুলোর উৎপত্তি ঘটেছে।
বর্তমান সমাজে পিতা-মাতা, দাদা-দাদী সন্তান-সন্তুতি কিংবা বিভিন্ন নেতা-নেত্রীর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী ঘটা করে পালন করা হয়ে থাকে। সেখানে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে বিশাল খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে, অনেক জায়গায় তো বাদ্যবাজনারও ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। অথচ এভাবে জন্ম-বার্ষিকী কিংবা মৃত্যুবার্ষিকীতে আনন্দোৎসব বা শোক পালন করা ইসলামি চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
জন্ম দিবস বা মৃত্যু দিবস কেন্দ্রিক এসব আচার-অনুষ্ঠান খৃস্ট, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য কাফিরদের ধর্মীয় রীতি। তাই এটা মুসলিমদের জন্য পরিত্যাজ্য। প্রিয় নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ [আবু দাউদ, আসসুনান : ৩৫১২] তিনি আরও বলে গেছেন, ‘আমার পরে আমার শরিয়তের মধ্যে যে নতুন কোনো আমল আবিষ্কার করবে, তা পরিত্যাজ্য।’ [বুখারি, মুসলিম]
তাই জন্ম কিংবা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে বিদয়াত তথা মনগড়া কাজ। আর ঐতিহাসিকভাবে এগুলো যেহেতু ইহুদি, খৃস্টান ও অগ্নিপূজকদের কাজ, তাদের অনুসরণ নিতান্তই ইসলাম বিরোধী কাজ। সুতরাং এগুলো থেকে মুসলিমদেরকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
আরও পড়ুন মৃতদের জন্য জীবিতদের করণীয় ও বর্জনীয়
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড