• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুহাররম-আশুরা : করণীয়-বর্জনীয় [পর্ব-৬]

আশুরার রোযা রাখার পূর্বে জেনে নিন

  ধর্ম ও জীবন ডেস্ক

০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:০৩
Ashoora_odhikar6
ছবি : প্রতীকী

শনিবার কিংবা জুমাবার হলেও আশুরার সিয়াম রাখা যাবে

কেবলমাত্র জুমার দিনকে নফল সিয়ামের জন্য নির্ধারণ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। অনুরূপভাবে ফরয সিয়াম ব্যতীত শনিবারও সিয়াম রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে মাকরুহ হবে না—ঐ দুই দিনের সাথে আরও একদিন মিল করে সিয়াম রাখলে, কিংবা দিনটি নিয়মিত নফল সিয়াম পালনের সময়ের অনুকূলে পড়ে গেলে, যেমন একদিন সিয়াম রাখা পরদিন না রাখার অভ্যাস; মান্নত কিংবা কাযা সিয়াম পালন করা হলে অথবা শরিয়ত সিয়াম রাখতে উৎসাহিত করেছে এমন তারিখে ঐ দিন দুটি পড়ে গেলে, যেমন আরাফা কিংবা আশুরার দিন।

আল্লামা বুহুতি রহ. বলেন, শুধুমাত্র শনিবারকে সিয়াম রাখার জন্য নির্দিষ্ট করা মাকরুহ। কারণ, এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনু বুসর তার বোনের সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« لاَ تَصُومُوا يَوْمَ السَّبْتِ إِلاَّ فِيمَا افْتُرِضَ عَلَيْكُمْ » ‘ফরয সিয়াম ব্যতীত তোমরা শুধুমাত্র শনিবারকে সিয়ামের জন্য নির্দিষ্ট করবে না।’ [তিরমিযি, আসসুনান : ৭৪৪; আবু দাউদ, আসসুনান : ২৪২১]

কেননা শনিবারকে ইহুদিরা খুব সম্মান করে, তাই সেদিন সিয়াম পালনটা তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন হয়ে যাবে। তবে শুক্র বা শনিবার যদি কোনো ব্যক্তির অভ্যাসের আওতায় পড়ে যায় তাহলে আর মাকরুহ হবে না। যেমন, কোনো ব্যক্তি নিয়মিত আরাফা ও আশুরার সিয়াম পালন করে আর সেই আরাফা কিংবা আশুরার দিন শনি কিংবা শুক্রবার দিন হলে সে ব্যক্তির জন্য উক্ত শুক্র কিংবা শনিবার সিয়াম রাখা মাকরুহ হবে না। কারণ এসব ক্ষেত্রে অভ্যাসকে বিবেচনায় রাখা হয়।

মাসের শুরু অস্পষ্ট হয়ে গেলে কী করণীয়?

ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন, মাসের শুরু নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে আশুরার সিয়াম তিনদিন রাখা হবে। আর এমনটি করা হবে কেবল নয় ও দশ তারিখের সিয়ামকে নিশ্চিত করার জন্য। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহররম মাসের শুরুর ব্যাপারে জানতে পারে নি এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে ইচ্ছুক তাহলে সে নিয়মমত যিলহজকে ত্রিশ দিন গণনা করবে। এরপর নয় ও দশ তারিখ সিয়াম পালন করবে। আর যে নয় তারিখের ব্যাপারেও সাবধানতা অবলম্বন করতে চাইবে সে আট, নয় ও দশ মোট তিন দিন সিয়াম রাখবে। (এভাবে যিলহজ মাস যদি ত্রিশ দিন থেকে কম হয় তাহলে সে নিশ্চিতভাবে তাসুয়া ও আশুরার সিয়াম রাখতে সক্ষম হবে) তবে মনে রাখা দরকার যে, আশুরার সিয়াম কিন্তু মুস্তাহাব, ফরয নয়। তাই মানুষকে রমাদান ও শাওয়াল মাসের মত মুহাররম মাসের চাঁদ তালাশ করার নির্দেশ দেওয়া হবে না।

আশুরার সিয়াম কোন ধরনের পাপ মোচন করে?

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘আশুরার সিয়াম সমস্ত সগিরা গুনাহের জন্য কাফফারা। এ সিয়ামের কারণে কবিরা নয়, বরং যাবতীয় সগিরা গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ এরপর তিনি বলেন, ‘আরাফার সিয়াম দুই বছরের গুনাহের জন্য কাফফারা, আশুরার সিয়াম এক বছরের জন্য কাফফারা, যার আমিন বলা ফিরিশতাদের আমিনের সাথে মিলে যাবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে... হাদিসে বর্ণিত এসব গুনাহ মাফের অর্থ হচ্ছে, ব্যক্তির আমলনামায় যদি সগিরা গুনাহ থেকে থাকে তাহলে এসব আমল তার সগিরা গুনাহগুলো মোচন করে দেবে। আর যদি সগিরা-কবিরা কোনো গুনাহই না থাকে তাহলে এসব আমলের কারণে তাকে সাওয়াব দান করা হবে, তার মর্যাদা সুউচ্চ করা হবে। আর আমলনামায় যদি শুধু কবিরা গুনাহ থাকে সগিরা নয়, তাহলে আমরা আশা করতে পারি, এসব আমলের কারণে তার কবিরা গুনাহগুলো হালকা করা হবে।’ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ.) বলেন, পবিত্রতা অর্জন, সালাত, রমাদান, আরাফা ও আশুরার সিয়াম এসবই কেবল সগিরা গুনাহসমূহের কাফফারা।

সিয়ামের সাওয়াব দেখে ধোঁকায় পড়া যাবে না

আরাফা কিংবা আশুরার সিয়ামের ক্ষেত্রে অনেক বিভ্রান্ত লোক ধোঁকায় পড়ে যায়। অনেককে বলতে শোনা যায়, আশুরার সিয়ামের কারণে পূর্ণ এক বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে গেছে। বাকি থাকল আরাফার সিয়াম, আর সেটি সাওয়াবের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করবে (তাহলে আর অন্যান্য ইবাদাতের কী দরকার!)। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, এই বিভ্রান্ত লোকটি বুঝল না যে, রমাদানের সিয়াম ও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আরাফা কিংবা আশুরার সিয়ামের চেয়ে বহু গুণে বড় ও মহিমান্বিত। আর এগুলো মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের জন্য কাফফারা তখনই হবে যখন কবিরা গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হবে। সুতরাং এক রমাদান থেকে পরবর্তী রমাদান এবং এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, মধ্যবর্তী সময়ে কৃত পাপের জন্য কাফফারা তখনই হবে, যখন কবিরা গুনাহ পরিত্যাগ করা হবে। এ উভয়বিধ কার্য সম্পাদনের মাধ্যমেই কেবল সগিরা গুনাহ মাফ হবে।

আবার কিছু বিভ্রান্ত লোক ধারণা করে, তাদের সৎকর্ম অসৎকর্ম থেকে বেশি। কারণ, তারা গুনাহের ভিত্তিতে নিজেদের হিসাব নেয় না এবং নিজেদের পাপগুলো গণনায় আনে না। যদি কখনো কোনো নেক আমল সম্পাদন করে তখন কেবল তাই সংরক্ষণ করে, গননা করে। এরা হলো সেসব লোকদের ন্যায় যারা মুখে মুখে ইসতিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) তো করে, অথবা দিনে একশত বার তাসবিহ পাঠ করে, কিন্তু পাশাপাশি মুসলিমদের গিবত ও সম্মান বিনষ্টের কাজে লেগে থাকে। সারা দিন আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথা-কাজে লিপ্ত থাকে। এসব লোক তাসবিহ তাহলিলের ফযিলত সম্বন্ধে খুব চিন্তা-ভাবনা করে। কিন্তু পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার ও কুৎসা রটানোসহ তার দ্বারা সংঘটিত অন্যান্য পাপকর্মের প্রতি মোটেই দৃষ্টিপাত করে না। আর এটাতো কেবলই আত্মপ্রতারণা।

রমাদানের সিয়াম অনাদায়ি থাকাবস্থায় আশুরার সিয়াম পালনের হুকুম

রমাদানের কাযা আদায় না করে নফল সিয়াম রাখা যাবে কিনা এ ব্যাপারে ফকিহদের মাঝে মতভেদ আছে। হানাফি মাযহাব মতে, এটি জায়িয। কেননা রমাদানের কাযা তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করা ওয়াজিব নয়। বিলম্বে সম্পন্ন করার অবকাশ আছে। শাফিয়ি ও মালিকিদের নিকটও জায়েয, তবে মাকরুহ। কারণ, এতে ওয়াজিব আদায় বিলম্বিত হয়। ইমাম দুসুকি (রহ.) বলেন, মান্নত, কাযা ও কাফফারা জাতীয় ওয়াজিব সিয়াম অনাদায়ি রেখে নফল সিয়াম পালন করা মাকরুহ। সে নফল সিয়ামটি গাইরে মুয়াক্কাদা হোক কিংবা মুয়াক্কাদা যেমন আশুরা কিংবা আরাফার সিয়াম ইত্যাদি। আর হাম্বলি মাযহাব মতে, রমাদানের কাযা আদায় করার পূর্বে নফল সিয়াম পালন করা হারাম। এমতাবস্থায় কেউ নফল সিয়াম রাখলে সহিহ হবে না। এমনকি পরবর্তীতে কাযা আদায় করার মত পর্যাপ্ত সময় থাকলেও, আগে ফরয আদায় করাই জরুরি। সুতরাং প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে, রমাদানের পরপরই দ্রুত সিয়ামগুলো আদায় করে নেওয়া। যাতে কোনোরূপ সমস্যা ছাড়াই আরাফা ও আশুরার সিয়াম পালনের সুযোগ পাওয়া যায়। আর কেউ যদি আরাফা ও আশুরার সিয়ামের কাযা আদায়ের নিয়ত করে এবং এ নিয়ত রাত্র হতেই করে তাহলে তার ক্বাযা আদায় হয়ে যাবে। আল্লাহর অনুগ্রহ তো সীমাহীন।

চলবে ইনশাআল্লাহ।

মূল (আরবি) : শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ

বঙ্গানুবাদ : মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড