ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
মুহাররম একটি অত্যন্ত বরকতপূর্ণ মাস। হিজরি সনের প্রথম মাস এটি। সম্মানিত চারটি মাসের অন্যতম এ মাস। এ সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿إِنَّ عِدَّةَ ٱلشُّهُورِ عِندَ ٱللَّهِ ٱثۡنَا عَشَرَ شَهۡرٗا فِي كِتَٰبِ ٱللَّهِ يَوۡمَ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ مِنۡهَآ أَرۡبَعَةٌ حُرُمٞۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُۚ فَلَا تَظۡلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمۡۚ﴾
‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধানে মাস বারটি, আসমানসমূহ ও যমিন সৃষ্টির দিন থেকেই। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ করো ঐক্যবদ্ধভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে রয়েছেন।’ [সুরা তাওবাহ, ৯ : ৩৬]
আবু বাকরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
«السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ: ثَلاثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ»
‘বছর হলো বারো মাসের সমষ্টি, তন্মধ্যে চারটি অতি সম্মানিত। তিনটি পরপর লাগোয়া—যিলকদ, যিলহজ ও মুহাররম আর (চতুর্থটি হলো) জুমাদাস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস রজব।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ২৯৫৮]
তন্মধ্যে মুহাররমকে মুহাররম বলে অভিহিত করা হয়েছে, কারণ এটি অতি সম্মানিত। আল্লাহর বাণী فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ ‘তোমরা এতে নিজেদের ওপর কোনো যুলুম করো না।’ অর্থাৎ এই সম্মানিত মাসগুলোতে তোমরা কোনো অন্যায় করো না। কারণ এ সময়ে সংঘটিত অপরাধের পাপ অন্যান্য সময়ের পাপের চেয়ে বেশি মারাত্মক।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ ‘তোমরা এতে নিজেদের ওপর কোনো যুলুম করো না।’ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘সাধারণভাবে বারো মাসের কোনোটিতেই তোমরা অন্যায়-অপরাধে জড়িত হইয়ো না। এরপর আল্লাহ তায়ালা সেখান থেকে চারটি মাসকে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করেছেন। সেগুলোকে মহা-সম্মানে সম্মানিত করেছেন। এ মাসগুলোর মাঝে সংঘটিত অপরাধকে তিনি অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ বলে গণ্য করেছেন। আর এতে সম্পাদিত নেক কাজকে বেশি সাওয়াবের যোগ্য বলে সাব্যস্ত করেছেন।’
কাতাদাহ (রাহিমাহুল্লাহ) فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ ‘তোমরা এতে নিজেদের ওপর কোনো যুলুম করো না।’ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘যদিও যুলুম সব সময়ই বড় অন্যায়, তবে হারাম মাসগুলোতে সম্পাদিত যুলুম অন্যান্য সময়ের যুলুম হতে অপরাধ ও পাপের দিক থেকে অনেক বেশি মারাত্মক। কারণ আল্লাহ তায়ালা নিজ ইচ্ছামতো যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন। আল্লাহ তায়ালা নিজ সৃষ্টি হতে উৎকৃষ্টগুলোকে বাছাই করেন। ফিরিশতাকুল থেকে কাউকে তাঁর বার্তাবাহক হিসেবে বাছাই করেছেন; অনুরূপ মানুষের মধ্য থেকেও কাউকে কাউকে রিসালাতের জন্য বাছাই করেছেন। সমস্ত কথা থেকে বাছাই করেছেন তাঁর যিকিরকে। যমিন থেকে বাছাই করেছেন মসজিদগুলোকে। মাসসমূহ থেকে বাছাই করেছেন রমাদান ও সম্মানিত চারটি মাসকে। দিনসমূহ থেকে বাছাই করেছেন জুময়ার দিনকে আর রাতসমূহ থেকে বাছাই করেছেন লাইলাতুল কদরকে। সুতরাং আল্লাহ যাদের সম্মানিত করেছেন, তোমরাও তাদের সম্মান প্রদর্শন করো। আর বুঝ-বুদ্ধিওয়ালা লোকদের মতে, প্রতিটি বস্তুকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয় মূলত সেসব জিনিসের মাধ্যমেই, যেসব কারণে আল্লাহ তাদেরকে সম্মানিত করেছেন।’ [ইবনু কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আযিম, সুরা তাওবাহ : ৩৬ থেকে সংক্ষেপিত]
মূল (আরবি) : ড. শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ : মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড