• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হিজরি সন কী ও কেন?

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

৩১ আগস্ট ২০১৯, ১৮:২০
Hijri
ছবি : সংগৃহীত

প্রাচীনকাল থেকেই বর্ষ-গণনার রীতি চলে আসছে। বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতিতে বিভিন্ন গণনা-পদ্ধতির প্রচলন ছিল। গণনার ক্ষেত্রে প্রধানত নির্ভর করা হতো চন্দ্র ও সূর্যের ওপর। সৌরনির্ভর অব্দগুলোর মধ্যে ছিল বঙ্গাব্দ, জুলীয়, গ্রেগরীয়, থাই (শ্যামদেশীয়), ইরানি, বাইজেন্টাইন, শকাব্দ ইত্যাদি। আর চান্দ্র অব্দগুলোর মধ্যে ছিল বুদ্ধাব্দ, চীনা, কোরীয়, নেপাল সংবৎ, বিক্রম সংবৎ, মায়া, গুপ্তাব্দ, মঘী, ত্রিপুরাব্দ, বিক্রমাব্দ, লক্ষ্মনাব্দ ইত্যাদি।

যেভাবে সূচনা হিজরি সনের ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা সাইয়িদুনা উমর (রা.) সময়কাল। খলিফা উমরের কাছে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় চিঠিপত্র আসত। সেখানে মাসের নাম ও তারিখ লেখা হতো। কিন্তু সনের নাম থাকত না। এতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতো। তখন পরামর্শক্রমে একটি সন নির্ধারণ ও গণনার সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন উপলক্ষ থেকে সন গণনার মতামত আসলেও শেষ পর্যন্ত নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ঘটনা থেকে সন গণনার সিদ্ধান্ত হয়। হিজরতের ১৭তম বর্ষ থেকে হিজরি সন গণনা শুরু হয়।

হিজরতের বছর থেকে সন গণনার তাৎপর্য হিজরতের সন থেকে সন গণনা চূড়ান্ত হওয়ার পেছনে তাৎপর্য হলো, হিজরতকে মূল্যায়ন করা হয় ‘আল ফারিকু বাইনাল হাক্কি ওয়াল বাতিল’ অর্থাৎ সত্য-মিথ্যার মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্যকারী হিসেবে। হিজরতের পর থেকেই মুসলমানরা প্রকাশ্য ইবাদত ও সমাজ-গঠনের রূপরেখা বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন। প্রকাশ্যে আযান, নামায, জুমা, ঈদ সবকিছু হিজরতের পর থেকেই শুরু হয়েছে। এসব তাৎপর্যের দিকে লক্ষ্য করেই মুসলমানদের সন গণনা হিজরত থেকেই শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

হিজরি মাসসমূহ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই মাসের সংখ্যা বারোটি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ

‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে।’ [সুরা তাওবা, ৯ : ৩৬]

হিজরি মাসগুলো মূলত চান্দ্রবর্ষের মাস। হিজরি সনও একটি চান্দ্রবর্ষ। পূর্ব থেকেই আরবদের মধ্যে এ মাসগুলোর প্রচলন ছিল। মাসগুলো হলো মুহাররম, সফর, রবিউল আওয়াল, রবিউস সানি, জুমাদাল উলা, জুমাদাস সানি, রজব, শাবান, রমাদান, শাওয়াল, যিলকদ, যিলহজ।

মুসলিমজীবনে হিজরি সনের প্রভাব মুসলমানদের জীবনে হিজরি সন ও চান্দ্রমাসের প্রভাব ব্যাপক। জীবনের সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব রয়েছে। বিশেষত ইবাদতের তারিখ, ক্ষণ ও মৌসুম নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিজরি সনের প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণে হিজরি সনের হিসাব রাখা মুসলমানদের জন্য জরুরি। রমদানের সিয়াম, দুই ঈদ, হজ, যাকাত ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে চান্দ্রবর্ষ বা হিজরি সন হিসেব করেই আমল করতে হয়। সিয়াম ও ঈদ নির্ভর করে চাঁদ দেখা বা চাঁদ দেখার খবর শোনার মাধ্যমে। এমনকি স্বামীর মৃত্যুর পর মহিলাদের ইদ্দতের দিনগুলোও চান্দ্রবর্ষের হিসাবে গণনা করতে হয়। সুতরাং হিজরি তারিখের হিসাবে দিন, মাস ও বছর হিসাব করা আবশ্যকীয়। এটা ফরযে কিফায়া; মুসলিমদের কেউই যদি এর হিসাব না রাখে তাহলে সবাইকে গুনাহগার হতে হবে। এ জন্য মুসলিমদের মধ্যে হিজরি তারিখ বাস্তবায়নের একটা আন্তর্জাতিক কমিটি থাকা দরকার। ওআইসি চাইলে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড