মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির
জ্ঞান হলো মুমিনের হারানো সম্পদ, যেখানে পায় সেখান থেকেই আরোহণ করে। মুসলিম উম্মাহ হলো জ্ঞানতাত্ত্বিক এক উম্মাহ। এখানে অজ্ঞতা, মূর্খতার কোনো অবকাশ নেই। অনেকে মনে করেন, জ্ঞানার্জনের ব্যাপারটা কেবলই ফজিলতপূর্ণ একটি ব্যাপারমাত্র। অর্থাৎ জ্ঞানার্জন করা ভালো, সওয়াবের কাজ আর না করা দোষণীয় নয়! কিন্তু বিষয়টি কি আদৌ এমন? মোটেই তা নয়। বরং একজন মানুষের প্রকৃত মুমিন হওয়া নির্ভর করে জ্ঞানার্জনের ওপর। কারণ কোনো ব্যক্তি জ্ঞানার্জন ছাড়া প্রকৃতি মুমিনই হতে পারে না। এ জন্যই সালাফরা ইমানের জন্য ইলম বা জ্ঞানকে শর্ত করেছেন। কারণ, যদি ঈমান সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান না থাকে, তাহলে একজন ব্যক্তি যেকোন সময় ঈমানবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যেতে পারেন। ইমান সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণেই আজকের সমাজে ঈমানের দাবিদার হাজার হাজার মুমিন ঈমানবিধ্বংসী বিভিন্ন কথা, কাজ ও বিশ্বাসে লিপ্ত।
একারণেই ইমাম বুখারি (রহ.) সহিহ বুখারীতে ইলমকে আমলের আগে প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন এবং একটি অধ্যায় কায়েম করেছেন নিম্নোক্ত শিরোনামে :
بَاب الْعِلْمُ قَبْلَ االْقَوْلِ وَالْعَمَلِ لِقَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: (فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ)
‘কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞানার্জন বিষয়ক অধ্যায়। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা জানো যে আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই’।
আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
«طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ»
জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলিমের ওপর ফরয।’ [ইবনু মাজাহ, আসসুনান : ২২৪]
হাদিস বিশারদগণ লিখেছেন, ‘নিঃসন্দেহে মুসলিম مسلم (পুরুষ) শব্দটি المسلمة মুসলিমা (নারী)-কেও শামিল করে। অর্থাৎ এই বিধান পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে নারীর জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। আর কোনো কোনো হাদিসে المسلمة শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। আসলে এটি দুর্বল তথা অপ্রয়োজনীয় সংযোজন। কেননা ‘মুসলিম’ শব্দটিই এটার প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে দেয়।’
জ্ঞান অন্বেষী ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত ঘরে না ফেরে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে জিহাদের রাস্তায় থাকারই সওয়াব দান করা হয়। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ خَرَجَ فِي طَلَبِ الْعِلْمِ فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى يَرْجِعَ»
‘আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য বের হয় সে আল্লাহর রাস্তায় থাকে, যাবত না সে ফিরে আসে।’ [তিরমিযি, আসসুনান : ২৬৪৭]
মানুষ অন্যকে কোনো সাফল্য পেতে দেখলে আফসোস করে, ঈর্ষা করে, হিংসা করে এবং নিজে সেসব সাফল্য পেতে চায়, মনেপ্রাণে তা কামনা করে। শরিয়তের দৃষ্টিতে হিংসা ও লোভ-লালসা নিষিদ্ধ এবং তা কঠোর গুনাহের কাজ। কিন্তু জ্ঞান এমন এক মূল্যবান সম্পদ, যা অন্যকে অর্জন করতে দেখলে শুধু আফসোস করা নয়, বরং তা লাভের জন্য রীতিমতো ঈর্ষা করাও জায়েয! হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-: لاَ حَسَدَ إِلاَّ فِى اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ أَتَاهُ اللَّهُ مَالاً فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ فِى الْحَقِّ وَرَجُلٌ أَتَاهُ اللَّهُ حِكْمَةً فَهُوَ يَقْضِى بِهَا وَيُعَلِّمُهَا
‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুটি ক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে ঈর্ষা করা বৈধ নয়। এক. ওই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন আর সে তা হকের পথে ব্যয় করে এবং দুই. ওই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ইলম দিয়েছেন, যা দ্বারা সে বিচারকার্য পরিচালনা করে এবং এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ৭১৪১; মুসলিম, আসসাহিহ : ৮৫০]
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড