ধর্ম ডেস্ক
সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। তার প্রমাণ এ সূরা সম্পর্কে রাব্বুল আলামীন ১৫ নাম্বার সূরা আল-হিজরের ৮৫ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করেছেন। আর সর্বসম্মতিক্রমে এটা সিকৃত যে, আল-হিজর মক্কি সূরা। রাসুল (সা.) যখন নবুয়ত প্রাপ্ত হন, তখন যাবালে নূর তথা হিরায় তার নিকট সূরা আলাকের পাঁচটি আয়াত অবতীর্ণ হয়। অতঃপর কিছু দিন ওহী অবতীর্ণ বন্ধ থাকে। তারপর সূরা মুদ্দসিরের প্রথম দিতের কিছু আয়াত অবতীর্ণ হয়। لএরপর সর্বপ্রথম পুর্নাঙ্গ সূরা হিসেবে সূরা আল-ফাতিহা নাযিল হয়।(والله اعلم) الحمدلله
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর।
অত্র আয়াতে আমার রাব্বুল আলামীনের প্রংশসা করছি, আমরা যেমন একে অপরকে বলি-"আপনি খুব ভালো মানুষ" অনুরূপ আমরা রাব্বুল আলামীনকে বলছি, সকল প্রশংসা তাঁর বিষয়টা এমন নয়। الحمدالله কোনো ক্রিয়া বাচক বাক্য নয়, একি একটি বিশেষ্য বাচক বাক্য।
সরল ভাষায় বললে, এখানে কোনো কিছু করা হচ্ছে না, বরং কোনো সত্যের পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। যেমন আমরা বলি সূর্য আলো দেয়। তখন আমরা একটি সত্য কথা বলি। তবে আমরা কিন্তু প্রশংসা করে বলছি না, আহা! সূর্য, তুমি কতো আলো দাও।
সর্বাবস্থায় সূর্য আলো দেয়- সেটা আমরা বলি বা না বলি। অর্থাৎ আমরা সকলেই যদি "সূর্য আলো দেয়" বলা বর্জন করে দেই, সূর্য ঠিকই আলো দেবে। ঠিক অনুরূপভাবে الحمدلله "সকল প্রশংসা আল্লাহর" আমরা বলি আর নাই বলি, ইতোমধ্যেই সকল প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার। মূলত الحمدالله"আলহামদুলিল্লাহ" এর দুটি অংশ রয়েছে। প্রথমটি হলো আমরা রাব্বুল আলামীনের প্রতি কৃতজ্ঞ তাঁর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। কৃতজ্ঞতা শুধুমাত্র রাব্বুল আলামীনের জন্য। আর দ্বিতীয় অংশ হলো- প্রশংসা। অর্থাৎ প্রশংসা মাত্র আল্লাহ তা'আলার জন্য। المد প্রশংসা ও شكر কৃতজ্ঞতা দুটি ভিন্ন বিষয়।
একদিকে যেমন প্রশংসা অন্যদিকে কৃতজ্ঞতা, দুটি দিক। অতএব দুটি বিষয়ের পার্থক্য বোঝা দরকার। আমরা যখন কোনো সুন্দর প্রাসাদ দেখি তখন তার প্রসংশা করি কিন্তু প্রসাদটিকে ধন্যবাদ দেই নয়া। অনুরূপ আমরা যখন কোনো অসাধারণ খেলোয়াড়কে দেখি তার প্রশংসা করি যে, সে অসাধারণ খেলোয়াড়। সে কঠিন গোল/রান করে। এভাবে আমরা তার প্রসংশা করি কিন্তু ঐ খেলোয়াড়ের প্রতি কৃতজ্ঞ হই না।
অথবা একটি সুন্দর মনোরম গাড়ি দেখলে আমরা গাড়িটির প্রসংশা করি তবে গাড়িটির প্রতি কৃতজ্ঞ হই না। তবে কখনো কখনো বিপরীতটাও ঘটে। যেমন কিছু মানুষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ থাকি তবে তাদের প্রসংশা করি না এমনও হয়ে থাকে। এমনও হয়ে থাকে। যেমন, রাব্বুল আলামীন একজন মুমিন মুসলিমকে সর্বাবস্থায় তার পিতামহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে বলেছেন। এমনকি তারা মুশরিক হলেও।
وَ قَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاہُ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ؕ اِمَّا یَبۡلُغَنَّ عِنۡدَکَ الۡکِبَرَ اَحَدُہُمَاۤ اَوۡ کِلٰہُمَا فَلَا تَقُلۡ لَّہُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنۡہَرۡہُمَا وَ قُلۡ لَّہُمَا قَوۡلًا کَرِیۡمًا
আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। (১৭ ইসরা ২৩ আরো দেখুন, ৪ নিসা ৩৬, ৬ আনআম ৭৪-১৫১, ৯ তাওবা ২৩,২৪,১১৪,আনকাবুত ২৯/৮,লুকমান ৩১/১৪-১৫, কারণ উল্লেখ করে তিঁনি বলেন, ৩১/৩৩, ৫৮ মুজাদালা ২২, মুমতাহিনা ৪, মারইয়াম ১৯/১৪)
অতএব অবশ্যই আমাদের পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। এমনকি যদিও তারা আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি শিরক করতে বলেন! তারা যদি চান আমরা ঈমান পরিহার করি তবুও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা তাদের শিরক ও কুফুরের আহ্বানে সাড়া দেবনা, প্রশংসাও করবনা। তথাপিও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব।
বুঝা গেলো জীবননের কোন কোন সময় আমরা প্রসংশা দেখি কৃতজ্ঞতা ছাড়া, আবার কখনো কৃতজ্ঞতা দেখি প্রসংশা ছাড়া। (والله اعلم) এমনি করে আরও উদাহরণ পেশ করা যায়, যা আল-কুরআনের মধ্যে স্পষ্ট দেখতে পাই। যার মধ্যে কৃতজ্ঞতা আছে কিন্তু প্রসংশা নেই। আমরা সকলেই জানি ফেরাউনের বিষয়টি। ফেরাউন তার নিজের অপছন্দের সত্বেও মূসা (আঃ) কে তার প্রাসাদে বড় করেছে। অতঃপর মূসা (আঃ) তার নিকট থেকে চলে গিয়ে অনেক বছর পরে ফেরাউনের কাছে ফিরে আসেন। তখন ফিরাউন মূসা (আঃ) কে তার অনুগ্রহের কথা স্বরণ করিয়ে দেন।
এভাবে যে, তুমি কি এইখানে এই প্রাসাদে অনেক দিন থাকনি? আমরা কি শৈশব থেকে এই বাড়িতে তোমাকে রেখে বড়ো করিনি? ফিরাউন তার দয়ার কথা এভাবে স্বরণ করিয়ে দিচ্ছিল। আর স্বভাবতই কেউ যখন আপনার উপকার করে, আপনিও তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন। তাইতো আল-কুরআনে দেখা যায়, মূসা (আঃ) ও উক্ত উপকারের কথা অকপটে স্বীকার করেন এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মূসা (আঃ) বলেন, হ্যাঁ তুমি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছিলে।
যখন আমরা কারও উপকারের কথা স্বীকার করি, তখন আমরা তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। যদিও তার প্রসংশা করি না। অতএব আমরা কাউকে ধন্যবাদ দিতে পারি তার প্রসংশা ছাড়া। অনুরূপ কাহারও প্রসংশা করতে পারি কৃতজ্ঞতা ছাড়া।
অতএব যখন আমরা الحمدلله "আলহামদুলিল্লাহ " বলি- তার অর্থ হলো আমরা বলি যে, আমরা মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি। তিঁনি যা কিছু অনুগ্রহ করেন তার জন্য। তিঁনি যা কিছু করেন তার সবকিছুই অসাধারণ, মহান। তার থেকে আর ভালো কিছু হতে পারে না। একেবারেই নিখুঁত। যাতে কোন প্রকার অভিযোগ নেই। এবং তাঁর প্রসংশার পর আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি এজন্য যে, তিঁনি তা অনুগ্রহ করেছেন।
চলবে...
লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড