মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ﴾
‘তোমরা তা হতে নিজেরা খাও এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্থকে খাওয়াও।’[1]
রাসুলুল্লাহ (সা.) কুরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন,
كُلُوا وَأَطْعِمُوا وَادَّخِرُوا
‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে খাওয়াও এবং সংরক্ষণ করো।’[2]
‘খাওয়াও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্থকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়। কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এব পরিমাণ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তাই উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ‘কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মুস্তাহাব (উত্তম)।
কুরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। ‘কুরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না’-মর্মে যে হাদিস রয়েছে তার হুকুম রহিত হয়ে গেছে।
তবে ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ.) এ বিষয়ে একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সংরক্ষণ নিষেধ হওয়ার কারণ হলো দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষের সময় তিন দিনের বেশি কুরবানির গোশত সংরক্ষণ জায়েয হবে না। তখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর যদি দুর্ভিক্ষ না থাকে তবে যতদিন ইচ্ছা কুরবানিদাতা কুরবানির গোশত সংরক্ষণ করে খেতে পারেন। তখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ রহিত হওয়া’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করা হবে।’[3]
কুরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এমনকি এক যিলহজ্জ থেকে আরেক যিলহজ্জ পর্যন্তও সংরক্ষণ করে রাখা যাবে।[4]
আরও পড়ুন-
কুরবানির আগে যা জেনে রাখা প্রয়োজন
কেউ চাইলে সে তার কুরবানির সম্পূর্ণ গোশতকে বিতরণ করে দিতে পাবে। আর তা করলে উপরোক্ত আয়াতের বিরোধিতা হবে না। কারণ, ঐ আয়াতে খাওয়ার আদেশ হলো মুস্তাহাব বা সুন্নাত। সে যুগের মুশরিকরা তাদের কুরবানির গোশত খেত না বলে মহান আল্লাহ উক্ত আদেশ দিয়ে মুসলিমদেরকে তা খাবার অনুমতি দিয়েছেন। অবশ্য কেউ কেউ খাওয়া ওয়াজিবও বলেছেন।[5]
কুরবানির গোশত হতে কাফিরদেরকে তার অভাব, আত্মীয়তা, প্রতিবেশী অথবা তাকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী করার জন্য দেওয়া বৈধ। আর এটা ইসলামের মহানুভবতা।[6]
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা.) তার ইহুদি প্রতিবেশিকে দিয়ে গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন।[7] ‘তোমরা মুসলিমদের কুরবানি থেকে মুশরিকদের আহার করিও না’-মর্মে যে হাদিস এসেছে সেটা সহিহ নয়।[8]
মূলত কুরবানি হলো আত্মত্যাগ, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যতার নাম। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যথাযথভাবে কুরবানি করার তাওফিক দিন। আমাদের নিয়তকে বিশুদ্ধ করে দিন। আমাদের কুরবানিগুলো কবুল করে নিন। আল্লাহুম্মা আমিন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড