মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির
কুরবানি যে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান সে ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত। এ ব্যাপারে কারও কোন দ্বিমত নেই।[1] তবে, কুরবানির হুকুম কি? ওয়জিব না সুন্নাহ? এ বিষয়ে ফকিহদের মাঝে দু’টো মত রয়েছে।
প্রথম মত: কুরবানি ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ি, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখের মত এটা। আর ইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদের একটি মতেও কুরবানি ওয়াজিব।
দ্বিতীয় মত: কুরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বা অত্যন্ত তাকিদপূর্ণ সুন্নাহ। এটা অধিকাংশ আলিমদের মত। ইমাম মালিক ও শাফিয়ির প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি পরিত্যাগ করা মাকরুহ। যদি কোন জনপদের লোকেরা সমর্থ্য হওয়া সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কুরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কুরবানি হলো ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন।[2]
যারা কুরবানি ওয়াজিব বলেন তাদের দলিল
১. আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন,
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ﴾
‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও পশু কুরবানি করো।’[3]
আর আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো ব্যাপারে নির্দেশ দেন সাধারণত সেটা পালন করা ওয়াজিবই হয়ে থাকে।
২. আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
«مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا»
‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছেও না আসে।’[4]
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি পরিত্যাগকারীদের জন্য এটি একটি ধমকি ও সতর্কবাণী। আর সাধারণত এধরনের ধমকি উজুবাতের ক্ষেত্রেই আসে। তাই কুরবানি ওয়াজিব।
৩. মিখনাফ ইবনু মুসলিম থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
«يَا أَيُّهَا النَّاسُ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِي كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَّةٌ»
‘হে মানব সকল! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হলো প্রতি বছর কুরবানি দেয়া।’[5]
যারা কুরবানি সুন্নাত বলেন তাদের দলিল
১. উম্মু সালামা (রা.) বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
«إِذَا رَأَيْتُمْ هِلالِ ذِي الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعَرِهِ وَأَظْفَارِهِ»
‘তোমাদের মাঝে যে কুরবানি করতে চায়, যিলহয মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কুরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নাখ না কাটে।’[6]
এ হাদিসে ‘যে কুরবানি করতে চায়’ কথা দ্বারা বুঝা যায় এটা ওয়াজিব নয়।
২. রাসূল (সা.) তার উম্মতের যারা কুরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে কুরবানি করেছেন। এদ্বারাও বোঝা যায়, কুরবানি ওয়াজিব নয়।
আল্লামা ইবনু উসাইমিন (রহ.) উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন, ‘এ সকল দলিল-প্রমাণ পরস্পর বিরোধী নয়; বরং একটা অন্যটার সম্পূরক।’ তাছাড়া, উভয়পক্ষের দলিল সমানভাবে বলিষ্ঠ। যাতে কোন একটার প্রতি পক্ষপাতিত্ব সহজ নয়। এ কারণে কিছু আলিম কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার পক্ষ সমর্থন করেন। তাদের মধ্যে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া অন্যতম। কিন্তু অধিকাংশ সাহাবা, তাবিয়িন এবং ফকিহগণের মতে কুরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (তাকিদপ্রাপ্ত সুন্নাত)। অবশ্য মুসলিমের জন্য উচিত হচ্ছে, সামর্থ্য থাকলে কুরবানি ত্যাগ না করা। উচিত নিজের ও পরিবার-পরিজনের তরফ থেকে কুরবানি করা। যাতে আল্লাহর আদেশ পালনে এবং মহানবির অনুকরণে বিরাট সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়।
চলবে...।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড