• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর—৫

কুরবানির উদ্দেশ্য

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

০৮ আগস্ট ২০১৯, ২০:০৯
Qurbani_5
ছবি : প্রতীকী

তাওহিদের অনুশীলন

পশু নিবেদন বা যবেহ করা হবে এক আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে, যার কোন শরিক নেইআল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। যেমন তিনি বলেছেন-

﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ﴾

‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমার ইবাদত করবে।’ [সুরা যারিয়াত, ৫১ : ৫৬]

ইবাদত বলা হয়,

لفظ شامل لكل ما يحبه الله و يرضاه من الأقوال والأفعال الظاهرة والباطنة

‘যেসকল কথা ও কাজ আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন; হোক সে কাজ প্রকাশ্যে বা গোপনে।’ [ফাতহুল মাজিদ, পৃ. ১৭]

আর এ ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তার উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করা। এ কাজটি তিনি শুধু তাঁর উদ্দেশ্যে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা বলেন-

﴿قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ

‘বলো, আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের রব আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নেই। আর আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’ [সুরা-আনয়াম, ৬ : ১৬২-১৬৩]

ইবনু কাসির (রহ.) বলেন, ‘এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, যে সকল মুশরিক আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু যবেহ করে তাদের যেন জানিয়ে দেয়া হয়, আমরা তাদের বিরোধী। সালাত, কুরবানি শুধু তাঁর নামেই হবে যার কোন শরিক নেই। এ কথাই আল্লাহ তায়ালা সুরা কাউসারে বলেছেন,

﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ

‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও পশু কুরবানি করো।’ [সুরা কাউসার, ১০৮ : ২]

অর্থাৎ তোমার সালাত ও কুরবানি তাঁরই জন্য আদায় করো। কেননা, মুশরিকরা প্রতিমার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করে ও পশু যবেহ করে। আর সকল কাজে ইখলাস অবলম্বন করতে হবে। ইখলাসের আদর্শে অবিচল থাকতে হবে। যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু উৎসর্গ বা যবেহ করবে তার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা হাদিসে এসেছে—

«لَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَهُ ، وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ ، وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا ، وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ»

১. যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে অভিশাপ দেয় আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন। ২. যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু যবেহ করে আল্লাহ তার উপর লানত করেন। ৩. ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ লানত করেন যে ব্যক্তি কোন বিদয়াতিকে প্রশ্রয় দেয়। ৪. যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে আল্লাহ তাকে লানত করেন। [মুসলিম, আসসাহিহ : ৩৭৭১]

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্যের নামে পশু যবেহ করার অর্থ এমন, যেমন কোন ব্যক্তি প্রতিমার নামে যবেহ করল অথবা কোন নবির নামে যবেহ করল বা কাবার নামে যবেহ করল। এ ধরনের যত যবেহ সব নাজায়েয ও তা খাওয়া হারাম। যবেহকারী মুসলিম হোক বা অমুসলিম।’

যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু যবেহ করে সে জাহান্নামে যাবে। যেমন হাদিসে এসেছে

সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে একটি মাছির কারণে। এ কথা শোনার পর লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ‘এটা কীভাবে হবে?’ তিনি বললেন, দু’ব্যক্তি এক সম্প্রদায়ের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। সে সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলন ছিল, যে ব্যক্তি তাদের কাছ দিয়ে যাবে তাকে তাদের প্রতিমার উদ্দেশ্যে কিছু উৎসর্গ করতে হবে। সে সম্প্রদায়ের লোকেরা এ দু’জনের একজনকে বলল, ‘আমাদের এ প্রতিমার জন্য কিছু উৎসর্গ করো!’ লোকটি উত্তর দিল, ‘আমার কাছে তো এমন কিছু নেই যা আমি এ প্রতিমার জন্য উৎসর্গ করতে পারি।’ তারা বলল একটি মাছি হলেও উৎসর্গ কর। সে একটি মাছি উৎসর্গ করল। তারা তাকে ছেড়ে দিল। ফলে সে জাহান্নামে গেল। তারপর তারা দ্বিতীয় ব্যক্তিকে অনুরূপ কথা বলল। সে উত্তরে বলল, ‘আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য কিছু উৎসর্গ (নিবেদন) করি না।’ তারা তাকে হত্যা করল। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করল। [বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান : ৭৩৪৩]

সুতরাং কুরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো, বান্দাকে তাওহিদের এ শিক্ষা প্রদান করা যে, যাবতীয় কুরবানি, উৎসর্গ, নিবেদন স্রেফ আল্লাহর জন্য। কোনো মুসলিম আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও জন্যে একটা মাছি পরিমাণ কিছুও উৎসর্গ করতে পারে না।

তাকওয়ার চর্চা

কুরবানি তাকওয়ার অনুশীলনের অন্যতম মাধ্যম। হাবিল-কাবিলের ঘটনায় আমরা দেখেছি যে, হাবিল বলেছিল,

إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ

‘কেবল মুত্তাকিদের কুরবানিই কবুল হয়ে থাকে।’ [সুরা আল-মায়িদা, ৫: ২৭]

এমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন,

لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُمْ ۚ

‘আল্লাহর নিকট (কুরবানির পশুর) গোশত এবং রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’ [সুরা হজ, ২২ : ৩৭]

মূলত আল্লাহ তায়ালা কুরবানির পশু, এর মূল্য, মাংস ইত্যাদির দিকে লক্ষ্য করেন না। বরং বান্দা কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করে তাঁর রবকে স্মরণ করছে, কাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কুরবানি করছে, সেটাই আল্লাহর কাছে বিবেচ্য।

চলবে...।

আরও পড়ুন- কুরবানি : আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড