• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর—৪

কুরবানি : আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

০৮ আগস্ট ২০১৯, ১৭:২৪
Qurbani_4
ছবি : প্রতীকী

ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিতেই পাওয়া যায় জাতির পরিচয়। প্রত্যেক জাতিরই থাকে কিছু বৈশিষ্ট্য, যা তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় বিশ্বদরবারে। চিন্তা, চেতনা, শিল্প, সংস্কৃতি আর উৎসব-আনুষ্ঠানিকতায় প্রকাশ পায় সেসব বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি জাতিরই থাকে আনন্দ-উৎসবের নির্দিষ্ট কিছু দিন। কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা অথবা কারও জন্ম বা মৃত্যু দিন অথবা কোন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত হয় এসব দিবস। জাতির চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে এসব দিবসে।

সারা বিশ্বের প্রায় দুই কোটি খ্রিস্টান জিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে ২৫ ডিসেম্বরকে তাদের উৎসবের বড়দিন’ হিসেবে পালন করে। প্রায় সত্তর লাখ বৌদ্ধ ২২ মে গৌতম বুদ্ধের জন্মদিনকে তাদের উৎসবের দিন ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’ হিসেবে পালন করে থাকে। সবচেয়ে বেশি উৎসবের দিন হলো হিন্দু ধর্মের। ১২ মাসে ১৩টি উৎসব তাদের। তবে এর মধ্যে লক্ষ্মীপূজা ও দূর্গাপূজা অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে পালন করা হয়। আর সারা বিশ্বের প্রায় দেড়শ কোটি মুসলিম মাহে রামাদানের শেষে শাওয়ালের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর এবং জিলহজ মাসের ১০ তারিখকে ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ হিসেবে পালন করে থাকে। যদিও মুসলিমদের এ উৎসবের রয়েছে সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্রতা মুসলিমদের তাওহিদি বিশ্বাস ও ইবরাহিমি চেতনার বাস্তব প্রতিফলনের দিন হলো ঈদুল আজহা।

মুসলিমসমাজে ঈদুল আজহার প্রচলন হয় হিজরতের পর। মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর। হাদিসে এর বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন। মদিনায় এসে তিনি দেখলেন, সেখানকার অধিবাসীগণ শরতের পূর্ণিমায় ‘নওরোজ’ আর বসন্তের পূর্ণিমায় ‘মেহেরজান’ নামে প্রতিবছর দু’টি উৎসব উদযাপন করে থাকে। কিন্তু এ দু’টি উৎসবের রীতিনীতি ছিল ইসলামি চিন্তা-চেতনা ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতির পরিপন্থি। শ্রেণিবৈষম্য, আর ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান প্রকটভাবে ফুটে উঠতো এসব উৎসবে। উৎসব দু’টি হতো ছয়দিন ব্যাপী আর এই বারোটি দিন ভাগ করে দেয়া হত বিভিন্ন শ্রেণির লোকজনদের মধ্যে। একটি দিন নির্দিষ্ট করা হতো ‘নওরোজ-এ হাসা বা ‘নওরোজ-এ বুযুর্গ’ হিসাবে শুধুমাত্র বিত্তবানদের জন্য। সেদিন কোন দরিদ্র বা নিঃস্বের অধিকার থাকত না। নওরোজ উৎসব উদযাপনে শালীনতা-বিবর্জিত নর্তকী ও চরিত্রহীনা ‘কিয়ানদের’ জন্যও একটি দিবস বিশেষভাবে পরিচিত হত। সাধারণ মানুষের জন্য ‘নওরোজ-এ আম্মা’ হিসাবে চিহ্নিত করা হতো শুধুমাত্র একটি দিনকে। অন্য পাঁচটি দিনের উৎসবে অংশগ্রহণের বিন্দুমাত্র কোন সুযোগ ছিল না বিত্তহীন, সহায়-সম্বলহীন সাধারণ মানুষের। এই ‘নওরোজ-এ আম্মা’ দিবসটিকে অবজ্ঞা ও ঘৃণার চোখে দেখত আমির-উমারাহ ও বিত্তশালী ব্যক্তিরা। সাধারণ, দরিদ্র অসহায় মানুষ কোনক্রমে এ দিবসটি উদযাপন করত ব্যথা-বেদনা ও লাঞ্ছনার মাধ্যমে।

কিন্তু ইসলাম হচ্ছে শান্তি ও মিলনের দীন। সাম্য, মৈত্রী, প্রেম-প্রীতির দীন। ইসলাম তো শ্রেণিবৈষম্যের স্বীকৃতি দেয় না। তাই শ্রেণিবৈষম্য নির্ভর শালীনতা-বিবর্জিত উৎসব দু’টির বিলুপ্তি ঘটিয়ে মনুষ্য সৃষ্ট কৃত্রিম পার্থক্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ধনী-দরিদ্রের মহামিলনের প্রয়াসে মহানবি (সা.) প্রবর্তন করলেন দু’টি উৎসব তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ

আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবি (সা.) মদিনায় আগমনের পর দেখলেন মদিনাবাসির দু’টি উৎসবের দিন রয়েছেএ দিনে তারা খেলাধুলা, আনন্দ ও চিত্তবিনোদন করে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দু’টি দিন কী?’ তারা বলল, মূর্খতার যুগে আমরা এইদিনে আনন্দোৎসব, খেলাধুলা করতাম। রাসুল (সা.) তখন বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এই দুই দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দু’টি দিন তোমাদের দান করেছেন। একটি হলো ঈদুল ফিতর অপরটি হলো ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ইদ।’ [নাসায়ি, আসসুনান : ১৫৩৮; আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ : ২০২১]

এতে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল ‘নওরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ উৎসব উদযাপন। শ্রেণি বৈষম্য-বিবর্জিত, পঙ্কিলতা ও অশালীনতামুক্ত সুনির্মল আনন্দ উপভোগ শুরু হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপনের মাধ্যমে। জন্ম নিল প্রীতিঘন সাম্য, ত্যাগ ও মিলনের উৎসব।

চলবে...।

আরও পড়ুন- কুরবানি ইবরাহিম খলিলের সুন্নাহ

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড