• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক [পর্ব-১০]

হজ ও উমরার ধারাবাহিক নিয়ম-কানুন

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

০৭ আগস্ট ২০১৯, ১২:৪৩
HAjj_10
ছবি : সংগৃহীত

ইহরামের প্রস্তুতি

হজ-উমরার কার্যাবলি মূলত শুরু হয় ইহরাম বাঁধার মাধ্যমে। ইহরামের প্রস্তুতি হিসাবে প্রয়োজন দেখা দিলে নখ কাটবে, গোঁফ ছাটবে, নাভীর নীচের লোম চেঁছে ফেলবে, বগলের লোম সাফ করবে এরপর ইহরামের জন্য গোসল করবে, সুগন্ধি ব্যবহার করবে এবং পরনের কাপড় ও গায়ের চাদর পরবে এরপর নির্দিষ্ট মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধবে বাংলাদেশের হাজিগণ বিমানবন্দর থেকেই ইহরাম বাঁধতে পারেন, কারণ বিমানে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকায় ইহরামপূর্ব প্রস্তুতি নিতে অসুবিধে হতে পারে। যদি হাজি যিলহজ মাসের প্রথম দশক শুরু হওয়ার পরে ইহরাম বাঁধে এবং কুরবানি করতে চায়, তাহলে চুল, নখ কোনটিই কাটবে না তবে যিলহজের প্রথম দশকে সম্পাদিত উমরা থেকে হালাল হওয়ার জন্য যে চুল ছাটা হয়, তা এই হুকুমের মধ্যে পড়বে না কেননা তা উমরার একটি ওয়াজিব কাজ

ইহরাম বাঁধার নিয়ম

হজ বা উমরার কার্যাবলি শুরু করার নিয়তকেই ইহরাম বলেঅতএব, নিয়ত ছাড়া কেউ মুহরিম হবে না রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেকটি আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল[বুখারি, হাদিস নং-১] নিয়তবিহীন ইহরামের কাপড় পরাকে ইহরাম বলা যায় না অতএব, যে ব্যক্তি যে প্রকারের হজ করতে চায়, মনে মনে তার নিয়ত করবে তামাত্তু হজ করতে চাইলে উমরার নিয়ত করবে, ইফরাদ হজ করতে চাইলে শুধু হজের নিয়ত করবে এবং কিরান হজ করতে চাইলে হজ ও উমরা উভয়ের নিয়ত করবে

মুহরিম ব্যক্তি মনে মনে যে নিয়ত করেছে, তা মুখে উচ্চারণ করা ভালো সে তার হজের প্রকার অনুযায়ী বলবে, ‘লাব্বাইক উমরাতান’ (আমি আপনার ডাকে সাড়া দিতে উমরার জন্য উপস্থিত), বা ‘লাব্বাইক হাজ্জান’ (আমি আপনার ডাকে সাড়া দিতে হজের জন্য উপস্থিত), অথবা ‘লাব্বাইক উমরাতান ওয়া হাজ্জান’ (আমি আপনার ডাকে সাড়া দিতে উমরা ও হজের জন্য উপস্থিত)

হজ এবং উমরার নিয়ত ব্যতীত অন্য কোনো ইবাদতের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা যাবে না যেমন: তাওয়াফ, সাঈ, সালাত, যাকাত, ছিয়াম ইত্যাদির নিয়ত কেননা অন্য ক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো আমল প্রমাণিত হয়নি।

তামাত্তু হজের ক্ষেত্রে মুহরিম ব্যক্তি হজের মাসগুলির কোনো এক সময় মিকাত থেকে উমরার ইহরাম বাঁধবে এরপর তাওয়াফ ও সাঈ সম্পন্ন করে মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেটে হালাল হয়ে যাবে এরপর যিলহজ মাসের ৮ তারিখে হজের ইহরাম বাঁধবে এবং পর্যায়ক্রমে হজের কার্যাবলি সম্পন্ন করবে তামাত্তু হজ পালনকারী কুরবানি করবে একটি ছাগল কুরবানি দিতে পারে অথবা সাত জনে একটি উট বা গরুতে অংশগ্রহণ করতে পারে কেউ কুরবানি দিতে অক্ষম হলে তাকে ১০টি সাওম পালন করতে হবে; তিনটি হজে এবং অবশিষ্ট ৭টি হজ থেকে ফিরে

কিরান হজের ক্ষেত্রে মুহরিম ব্যক্তি মিকাত থেকে হজ ও উমরা উভয়ের ইহরাম বাঁধবে অতঃপর মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম বা আগমনী তাওয়াফ শেষে সাফা-মারওয়ায় সাঈ করতঃ কুরবানির দিন পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকবে কুরবানির দিন জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপ শেষে মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেটে হালাল হয়ে যাবে তামাত্তু হজ পালনকারীর মত কিরান হজ পালনকারীকেও কুরবানি করতে হবে

ইফরাদ হজের ক্ষেত্রে মুহরিম ব্যক্তি মিকাত থেকে শুধুমাত্র হজের ইহরাম বাঁধবে এবং কিরান হজ পালনকারীর মত একই কাজ করবে তবে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, কিরান হজ পালনকারীকে কুরবানি করতে হয়; কিন্তু ইফরাদ হজ পালনকারীকে কুরবানি দিতে হয় নাতবে তিন প্রকার হজের মধ্যে তামাত্তু হজ সর্বোত্তম

কিরান এবং ইফরাদ হজ পালনকারী যদি সঙ্গে করে হাদি নিয়ে যায়, তাহলে কুরবানির দিন পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকবে রাসুল (সা.) এমনটি করেছিলেন পক্ষান্তরে তারা যদি হাদির পশু সঙ্গে না নিয়ে যায়, তাহলে তাদের ইহরামকে উমরার ইহরামে রূপান্তর করবে

ইহরাম অবস্থায় পোশাক হবে পরনের একটি কাপড় এবং একটি গায়ের চাদর কাপড় দু’টি সাদা এবং পরিষ্কার হওয়া উত্তম ইহরামের কাপড় ময়লা হলে মুহরিম ব্যক্তি তা ধুতে পারে অনুরূপভাবে প্রয়োজনে বদল করে ঐ জাতীয় অন্য কাপড়ও পরতে পারে ইহরাম অবস্থায় মুহরিম ব্যক্তি গোসল করতে পারে কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় প্রবেশের সময় যু-তুওয়া এলাকার কূপ থেকে গোসল করেছিলেন [বুখারি, আসসাহিহ : ১৫৫৩]

মুহরিম ব্যক্তিকে তার স্বাভাবিক পোশাক রেখে একটি পরনের কাপড় এবং একটি গায়ের চাদর পরতে হয় এক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই ইহরামের ক্ষেত্রে পোশাকের এই সমতা হাজিদেরকে মৃত্যুর পরে কাফন পরিধানের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের সমতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় কোন মুসলিম যখন মৃত্যুকে স্মরণ করবে, তখন সে নেক আমলের মাধ্যমে নৈকট্য অর্জন করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে

বদলি হজের নিয়ত

কেউ অন্য কারো পক্ষ থেকে হজ করলে মনে মনে ঐ ব্যক্তির পক্ষ থেকে নিয়ত করবে, যার পক্ষ থেকে সে হজ করার ইচ্ছা পোষণ করেছে সে তার নিয়তটা মুখেও উচ্চারণ করতে পারে যেমন: বলতে পারে, ‘লাব্বাইকা হাজ্জান আন ফুলান’ অর্থাৎ ‘আমি অমুক ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজের জন্য আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি’ যার পক্ষ থেকে হজ করবে, তার নাম বলবেআর আমরা আগেও আলোচনা করেছি যে, যে ব্যক্তি নিজের হজ করে নি, সে অন্যের হজ করতে পারবে না

তালবিয়া

‘তালবিয়া’ শব্দটি ‘লাব্বা’ (لَبَّى)-এর ক্রিয়ামূললাব্বাইক শব্দটি কারো ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য সুন্দর একটি শব্দ রাসুল (সা.) কতিপয় সাহাবিকে ডেকেছেন এবং তাঁরা ‘লাব্বাইক’ বলে সাড়া দিয়েছেন মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায়

রাসুল (সা.) এভাবে তালবিয়া পড়তেন:

«لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ»

(লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নি‘মাতা লাকা ওয়াল-মুলক, লা শারীকা লাক) অর্থাৎ ‘আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোন শরিক নেই, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নিয়ামত এবং সাম্রাজ্য আপনারই আপনার কোন শরিক নেই[বুখারি, আসসাহিহ : ১৫৪৯; মুসলিম, আসসাহিহ : ২৮১১]

পুরুষদের উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পড়া উত্তম সায়িব ইবনে খাল্লাদ (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,

«جَاءَنِي جِبْرِيلُ فَقَالَ لِي يَا مُحَمَّدُ مُرْ أَصْحَابَكَ أَنْ يَرْفَعُوا أَصْوَاتَهُمْ بِالتَّلْبِيَةِ»

‘জিবরিল (আ.) এসে আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি আপনার সঙ্গীগণকে উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পড়ার আদেশ করুন[নাসায়ি, আসসুনান : ২৭৫৩]

তবে মহিলারা নিম্নস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে মহিলাদের উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পড়া মাকরুহ

হজ বা উমরার ইহরাম বাঁধার পর থেকে তালবিয়া পাঠ শুরু করবে এবং হজ পালনকারী ১০ তারিখে জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপের পর তালবিয়া বন্ধ করবে জামরাতুল আক্বাবায় কংকর নিক্ষেপ পর্যন্ত নবি (সা.) তালবিয়া পড়তে থাকতেন আর উমরা পালনকারী তাওয়াফ শুরু করার সময় তালবিয়া বন্ধ করে দিবে

মসজিদে হারামে প্রবেশ

মসজিদে হারামসহ যে কোনো মসজিদে প্রবেশের সময় আগে ডান পা রাখবে অতঃপর বলবে,

«بِسْمِ الله, اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ, اَعُوْذُ باللهِ الْعَظِيْمِ, وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ, وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ, اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ»

‘আল্লাহ্‌র নামে প্রবেশ করছি হে আল্লাহ! আপনি রাসুলের উপর দরুদ এবং সালাম বর্ষণ করুনআমি মহান আল্লাহ, তাঁর সম্মানিত চেহারা ও সত্ত্বা এবং অনাদি শক্তির ওসিলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ারসমূহ খুলে দিন

হজ ও উমরা পালনকারী মসজিদে হারামের যে দিক দিয়ে প্রবেশ করতে সহজ হয়, সে দিক দিয়ে প্রবেশ করবে মসজিদে হারামে প্রবেশ করলে সে স্বচক্ষে কাবা দেখবে, নমুনা নয়, সে সরাসরি মানুষদেরকে বায়তুল্লাহ্‌র তাওয়াফ করতে এবং সালাত আদায় করতে দেখবে সে স্মরণ করবে, এই কাবাকে ঘিরেই পৃথিবীর সবপ্রান্ত থেকে মুসলিমরা সালাত আদায় করে, প্রার্থনা করে এটি সকলের মিলনস্থল

তাওয়াফ করার ইচ্ছা নিয়ে কেউ মসজিদে হারামে প্রবেশ করলে তাওয়াফই তার জন্য ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ হিসাবে গণ্য হবে এরপর তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমের পেছনে দু’রাকাত সালাত আদায় করবে

তাওয়াফ

তাওয়াফ আল্লাহ নির্ধারিত একটি ইবাদাত এবং এটি কাবার বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি অতএব, কাবা ব্যতীত কোনো কবর বা অন্য কোনো কিছুকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করা যাবে না তাওয়াফকারী তাওয়াফের সময় ‘হাজরে আসওয়াদ’ এবং ‘রুকনে ইয়ামানি’ স্পর্শ করবে

বায়তুল্লাহ্‌র তাওয়াফ হবে সাতটি চক্করের মাধ্যমে প্রত্যেকটি চক্কর হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু হয়ে সেখানেই আবার শেষ হবে হাজরে আসওয়াদ রয়েছে কাবার দরজার পাশের কোণটিতে তাওয়াফকারী পবিত্র হয়ে কাবাকে বাম পাশে রেখে তাওয়াফ করবে তাওয়াফের সময় ‘হিজর’ বা হাতিম নামক স্থানটির বাহির দিয়ে তাওয়াফ করবে; ভেতর দিয়ে নয় কেননা এই স্থানটিও কাবার অন্তর্ভুক্ত মনে রাখতে হবে, হিজ্‌রের ভেতর দিয়ে তাওয়াফ করলে তা শুদ্ধ হবে না কেননা সে পুরো বায়তুল্লাহ্‌র তাওয়াফ করে নি তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও হিজ্‌রের বাহির দিয়েই তাওয়াফ করতেন মসজিদে হারামের ভেতরের যে কোন জায়গা দিয়ে তাওয়াফ করলে হয়ে যাবে, তবে মসজিদের বাহির দিয়ে করলে হবে না ইবনুল মুনযির (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সবাই একমত যে, মসজিদের বাহির দিয়ে তাওয়াফ করলে হবে না[আল-ইজমা, পৃ. ৬২]

তাওয়াফকারী যখন হাজরে আসওয়াদ বরাবর পৌঁছবে, তখন সহজ হলে হাজারে আসওয়াদকে চুম্বন করবে সম্ভব না হলে হাত অথবা অন্য কোন কিছু দিয়ে তা স্পর্শ করবে এবং যা দিয়ে স্পর্শ করেছে, তা চুম্বন করবে সেটিও সম্ভব না হলে হাত দিয়ে ইশারা করবে পাথরটি চুম্বন করার দলিল হলো সাইয়িদুনা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)’র সেই বিখ্যাত কথা, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করে তিনি বলেছিলেন,

«إِنِّى أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّى رَأَيْتُ النَّبِىَّ - صلى الله عليه وسلم - يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ»

‘আমি জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্রতুমি যেমন কোন ক্ষতি করতে পারো না, তেমনি কোন উপকারও করতে পারো না আমি নবিজিকে যদি তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না[বুখারি, আসসাহিহ : ১৫৯৭; মুসলিম, আসসাহিহ : ৩০৭০]

চুম্বন বা স্পর্শ করার জন্য হাজারে আসওয়াদের নিকটে পৌঁছতে হলে যদি কাউকে কষ্ট দেওয়া লাগে, তবে সেখানে যাবে না; বরং ইশারা করে তাওয়াফ চালিয়ে যাবে কেননা পাথর স্পর্শ করা উত্তম, কিন্তু মানুষকে কষ্ট দেওয়া হারাম আর কোনো হারাম কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে কোনো উত্তম কাজের প্রতি ধাবিত হওয়া যাবে না

হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ বা চুম্বন করার সময় বলবে, بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ (বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার), অর্থাৎ ‘আল্লাহ্‌র নামে চুমু দিচ্ছি বা স্পর্শ করছি, আল্লাহ মহান’ আর পাথরের দিকে ইশারা করার সময় বলবে, اللَّهُ أَكْبَر ‘আল্লাহ মহান’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১৬১৩]

তাওয়াফকারী যখন রুকনে ইয়ামানি বরাবর পৌঁছবে, তখন সহজ হলে হাত দিয়ে সে এটিকে স্পর্শ করবে; রুকনে ইয়ামানিকে চুম্বন করবে না, তেমনি হাত দিয়ে স্পর্শ করে হাতও চুম্বন করবে না যদি রুকনে ইয়ামানি স্পর্শ করা সহজ না হয়, তবে তার দিকে ইশারা না করেই তাওয়াফ চালিয়ে যাবে [বুখারি, আসসাহিহ : ১৬০৯; মুসলিম, আসসাহিহ : ৩০৬১]

তাওয়াফের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দুয়া নেই তাওয়াফকারী তার সহজসাধ্য যে কোনো দুয়ার মাধ্যমে তার রবের নিকটে প্রার্থনা করবে এবং কুরআন তেলাওয়াত করবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত দুয়াসমূহ পাঠ করা উত্তম কিছু কিছু মানুষ প্রত্যেক চক্করে আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট দুয়া পড়ে থাকে, শরিয়তে যার কোনো দলিল নেই

উমরার তাওয়াফে এবং কিরান ও ইফরাদ হজ পালনকারী তাওয়াফে কুদুমে ‘ইযতিবা’ করা উত্তম ইযতিবা হচ্ছে, গায়ের চাদর ডান বগলের নীচ দিয়ে বাম কাঁধের উপরে উঠিয়ে দিয়ে ডান কাঁধ খালি রাখা তাওয়াফকারী সাত চক্করেই ইযতিবা অবস্থায় থাকবে শুধুমাত্র উল্লেখিত তাওয়াফেই ইযতিবা করতে হবে ইযতিবার অবস্থা ব্যতীত ইহরামের বাকি সব অবস্থায় চাদর উভয় কাঁধের উপর থাকবে

উমরার তাওয়াফ এবং কিরান ও ইফরাদ হজ পালনকারীর তাওয়াফে কুদুমের প্রথম তিন চক্করে পুরুষদের জন্য ‘রমল’ করাও উত্তম রমল হচ্ছে, ঘন ঘন ধাপে একটু জোরে চলা [বুখারি, আসসাহিহ : ১৬০২; মুসলিম, আসসাহিহ : ৩০৫৯]

তবে মহিলাদের জন্য রমল নেই ইবনুল মুনযির (রহ.) বলেন, ‘সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, মহিলাদের জন্য কোন রমল নেই; না বায়তুল্লাহ্‌র তাওয়াফের সময়, না সাফা-মারওয়ায় সাঈর সময়[আল-ইজমা, পৃ. ৬১]

কেউ যদি চক্কর সংখ্যা ভুলে যায়, তাহলে প্রবল ধারণার উভর নির্ভর করবে যদি কোনো দিকেই তার সন্দেহ প্রবল না হয়, তাহলে কম সংখ্যকটা ধরে নিয়ে এরপরে বাকি চক্কর সম্পন্ন করবেতাওয়াফরত অবস্থায় যদি সালাতের ইকামত দিয়ে দেয়, তাহলে সে আগে সালাত আদায় করে নিবে এবং যেখানে সালাত আদায় করেছে, সেখান থেকে তাওয়াফের বাকি অংশ পূরণ করবে

তাওয়াফ শেষে সহজ হলে তাওয়াফকারীর জন্য মাকামে ইবরাহিমের পেছনে সুরা কাফিরুন এবং সুরা ইখলাস দিয়ে দুই রাকাত সালাত আদায় করা উত্তম আর সহজ না হলে মসজিদের যে কোনো স্থানে দুই রাকাত সালাত আদায় করবে [মুসলিম, আসসাহিহ : ২৯৫০]

যমযম পানি পান

যমযম পানি পান করা উত্তম রাসুল (সা.) বিদায় হজে তাওয়াফ এবং মাকামে ইবরাহিমের পেছনে সালাত অন্তে যমযম পানি পান করেন এবং মাথায় দিয়েছিলেন [আহমাদ, আলমুসনাদ : ১৫২৪৩]

ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘যমযম পানি হচ্ছে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পানি এটি মানুষের নিকটেও প্রিয়তর আর মানুষের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান পানি’ [যাদুল মায়াদ, ৪/৩৯২]

হজ ও উমরা পালনকারী পান করার, আরোগ্য লাভ করার এবং অন্যকে উপহার দেওয়ার জন্য বেশি করে যমযম পানি সঙ্গে নিতে পারে এই পানি সবচেয়ে মূল্যবান উপহার কেননা এটি বরকতময় এবং ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ পানি আয়িশা (রা.) সঙ্গে করে যমযম পানি নিয়ে আসতেন তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এই পানি সঙ্গে করে আনতেন [তিরমিযি, আসসুনান : ৯৬৩]

চলবে...।

আরও পড়ুন- হজের প্রকারভেদ

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড