ধর্ম ডেস্ক
আল-কুরআন মাহাত্ম্যপূর্ণ নাযিলকৃত একটি দ্বীনি গ্রন্থ। তাঁর মাহাত্ম্য প্রকাশিত হয় তাঁর একাধিক নামে ও গুনে। যিনি যত বড় হন, তাঁর নাম ও গুন তত বেশি হয়। যেভাবে তার সুনাম সুখ্যাতি বৃদ্ধি পায়, তেমনি গুনের কারণে নামের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। মহান রবের গুনের সংখ্যা অসংখ্য। তাঁর নাম ও গুন অনুপম অতুলনীয়। তাই তাঁর নামও অনেক। তাঁর নবীর নামও অনেক।
নামাবলী এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্যের প্রতি ইঙ্গিত করে। নাম শুধুমাত্র পরিচিতির জন্য নয়, তার সাথে জড়িয়ে থাকে অনেক মহত্ত্ব ও মাহাত্ম্য। যার গুণ যত বেশি, তার গুণগত নাম তত বেশি। এজন্য এক একটা নাম ও গুনের কারণে কুরআন মাজিদের নাম ও গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। এ অধ্যায়ে আমরা ইনশাআল্লাহ আল-কুরআনের নাম ও গুণাবলীর পরিচয় তুলে ধরছি। কালামুল্লাহ كلام الله
মহাগ্রন্থের মাহাত্ম্যের জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, কুরআন মাজীদ "কালামুল্লাহ" তথা মহান স্রষ্টার মুখনিঃসৃত বাণী। রব্বুল আলামীন তা বলেছেন, রুহুল আমীন (জিবরাঈল) তা শ্রবণ করেছেন, তিনি তা নিয়ে রহমাতাল্লিল আলামীনের নিকট অবতরণ করেছেন, রাসুল (সা.) তার নিকট থেকে শুনেছেন ও স্মৃতিস্হ করেছেন।
এ কিতাব মহান রবের নাযিলকৃত বাণী। এ বানি তার সিফাত বা গুণ। তা কোন সৃষ্টি নয়। এ যে মহান রবের বাণী তা আল-কিতাবের একাধিক স্থানে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
وَإِنْ أَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتّٰى يَسْمَعَ كَلٰمَ اللَّهِ ثُمَّ أَبْلِغْهُ مَأْمَنَهُۥ ۚ ذٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْلَمُونَ
মুশরিকদের মধ্য হতে যদি কেহ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে তাহলে তুমি তাকে আশ্রয় দান কর, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়; অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দাও, এই আদেশ এ জন্য যে, এরা এমন লোক যারা জ্ঞান রাখে না। (৯ তাওবা ৬)
তাঁর বানীতে যা বলা হয়েছে তা সবই সত্য এবং ইনসাফে পরিপূর্ণ।
وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلًا ۚ لَّا مُبَدِّلَ لِكَلِمٰتِهِۦ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
তোমার রবের বাণী সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ, তাঁর বাণী পরিবর্তনকারী কেহই নেই, তিনি সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন।(৬ আনআম ১১৫)
এ বাণী কোনো মালাক/ফেরেশতার বাণী নয়। বরং সম্মানিত জিবরাঈল তা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন।
إِنَّهُۥ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ
নিশ্চয়ই এই কুরআন এক সম্মানিত রাসূলের বাহিত বার্তা। (৬৯ হাক্কা ৪০)
إِنَّهُۥ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ
নিশ্চয়ই এই কুরআন সম্মানিত বার্তাবহের আনীত বাণী।
ذِى قُوَّةٍ عِندَ ذِى الْعَرْشِ مَكِينٍ
যে সামর্থ্যশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন,
مُّطَاعٍ ثَمَّ أَمِينٍ
যাকে সেখানে মান্য করা হয় এবং যে বিশ্বাসভাজন। (৮১তাকবীর ১৯-২১)
আরও বলা হয়েছে যেমন,
وَإِنَّهُۥ لَتَنزِيلُ رَبِّ الْعٰلَمِينَ
নিশ্চয়ই ইহা (আল কুরআন) জগতসমূহের রাব্ব হতে অবতারিত।
نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ
জিবরাঈল ইহা নিয়ে অবতরণ করেছেন।
عَلٰى قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنذِرِينَ
তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পার।
بِلِسَانٍ عَرَبِىٍّ مُّبِينٍ
অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরাবী ভাষায়। (২৬ শুআারা ১৯২-১৯৫)
এ বাণীতে শয়তান ও তার দোসরদের কোন অংশ নেই উল্লেখপূর্বক রব্বুল আলামীন বলেছেন,
وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَيْطٰنٍ رَّجِيمٍ
এবং ইহা অভিশপ্ত শাইতানের বাক্য নয়। (৮১তাকবীর ২৫)
তিঁনি আরো বলেন,
وَمَا تَنَزَّلَتْ بِهِ الشَّيٰطِينُ
শাইতানরা ইহাসহ অবতীর্ণ হয়নি।
وَمَا يَنۢبَغِى لَهُمْ وَمَا يَسْتَطِيعُونَ
তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এর সামর্থও রাখে না।
إِنَّهُمْ عَنِ السَّمْعِ لَمَعْزُولُونَ
তাদেরকে শ্রবণের সুযোগ হতে দূরে রাখা হয়েছে। (২৬ শুআরা ২১০-২১২)
এ বণীতে শয়তানের অনুপ্রবেশ থাকলে তাঁর পাঠের পূর্বে শয়তান থেকে মহান আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রাথনার নির্দেশ দেওয়া হতো না। তিঁনি বলেন,
فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْءَانَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطٰنِ الرَّجِيمِ
যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবে। (১৬ নাহাল ৯৮)
উক্ত দাবির খন্ডনপূর্বক পরবর্তী আয়াতে রব্বে কারীম বলেন,
إِنَّهُۥ لَيْسَ لَهُۥ سُلْطٰنٌ عَلَى الَّذِينَ ءَامَنُوا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
তার কোনো আধিপত্য নেই তাদের উপর যারা ঈমান আনে ও তাদের রবের উপরই নির্ভর করে।
إِنَّمَا سُلْطٰنُهُۥ عَلَى الَّذِينَ يَتَوَلَّوْنَهُۥ وَالَّذِينَ هُم بِهِۦ مُشْرِكُونَ
তার আধিপত্য শুধু তাদেরই উপর যারা তাকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে এবং যারা (আল্লাহর) সাথে শরীক করে। (১৬ নাহাল ৯৯-১০০)
সর্বশেষ এ সূরার (১৬/১০২) রব্বুল আলামীন পরিষ্কার করে বুঝিয়েছেন এ কিতাব শয়তানের দোসর ফিরকা ধারিদের কিতাব নয়। বরং একক রবের তাওহীদে বিশ্বাসি মুমিন মুসলিমের কিতাব।
قُلْ نَزَّلَهُۥ رُوحُ الْقُدُسِ مِن رَّبِّكَ بِالْحَقِّ لِيُثَبِّتَ الَّذِينَ ءَامَنُوا وَهُدًى وَبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِينَ
তুমি বল- তোমার রবের নিকট হতে রূহুল কুদুস (জিবরাঈল) সত্যসহ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন যারা মু’মিন তাদেরকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং হিদায়াত ও সুসংবাদ স্বরূপ আত্মসমর্পনকারীদের জন্য। (১৬ নাহাল ১০২)
চলবে...
লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড