• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক [পর্ব-৯]

হজের প্রকারভেদ

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

০৫ আগস্ট ২০১৯, ১৭:৩৮
Hajj_9
ছবি : সংগৃহীত

হজ তিন প্রকার—তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ

১. তামাত্তু

শাওয়াল, যিলকদ ও যিলহজ এ তিনটি হল হজের মাস। হজের মাসসমূহে পৃথকভাবে প্রথমে উমরা ও পরে হজ আদায় করাকে তামাত্তু হজ বলে। অর্থাৎ ১ লা শাওয়াল থেকে উকুফে আরাফার পূর্বে (৯ যিলহজ), যেকোনো মুহূর্তে উমরা আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া ও উকুফে আরাফার পূর্বে আবার নতুন করে হজের ইহরাম বাঁধা এবং হজের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করা। যারা হাদি (কুরবানির পশু) সঙ্গে করে মক্কায় গমন করে না—বর্তমানে বহিরাগত হাজিদের কেউই হাদির পশু সঙ্গে নিয়ে আসে না—তাদের জন্য তামাত্তু হজই উত্তম। হাম্বলি ফকিহগণের মতে, সর্বাবস্থায় তামাত্তু হজ উত্তম। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের সময় তাঁর সঙ্গে থাকা সাহাবাদের মধ্যে যারা হাদির জন্তু সঙ্গে নিয়ে আসেননি তাদের সবাইকে তামাত্তু হজ করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং নিজেও এই আশা ব্যক্ত করেছেন যে, যদি এ বিষয়টি পূর্বে প্রতীয়মান হত তাহলে হাদির জন্তু তিনি সঙ্গে আনতেন না, আর যদি হাদি সাথে থাকত, তবে হালাল হয়ে যেতেন। [বুখারি, আসসাহিহ : ১৬৬০]

তামাত্তু হজ তিনভাবে আদায় করা যায় :

ক) মিকাত থেকে উমরার জন্য ইহরাম বেঁধে মক্কায় গিয়ে তাওয়াফ ও সাঈ করে মাথার চুল মুন্ডন অথবা ছাটাই করে হালাল হয়ে যাওয়া ও হজ পর্যন্ত মক্কাতেই অবস্থান করা। ৮ যিলহজ নতুনভাবে হজের ইহরাম বেঁধে হজের কার্যক্রম সম্পাদন করা।

খ) মিকাত থেকে উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কা গমন করা ও উমরার কার্যক্রম—তাওয়াফ, সাঈ, হলক/কসর সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাওয়া। হজের পূর্বেই মদিনা যিয়ারত সেরে নেয়া ও মদিনা থেকে মক্কায় আসার পথে আবয়ারে আলি নামক জায়গা থেকে উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসা। উমরা আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া, ৮ যিলহজ হজের জন্য নতুনভাবে ইহরাম বেঁধে হজ আদায় করা।

গ) ইহরাম না বেঁধে সরাসরি মদিনা গমন করা। যিয়ারতে মদিনা শেষ করে মক্কায় আসার পথে আবয়ারে আলী নামক জায়গা থেকে উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা ও মক্কায় এসে তাওয়াফ সাঈ হলক-কসর করে হালাল হয়ে যাওয়া, ও ৮ যিলহজ হজের জন্য নতুন করে ইহরাম বাঁধা।

২. কিরান

উমরার সাথে যুক্ত করে একই ইহরামে উমরা ও হজ আদায় করাকে হজ্জে কিরান বলে। হজ্জে কিরান দু’ভাবে আদায় করা যায়।

ক) মিকাত থেকে ইহরাম বাধার সময় হজ ও উমরা উভয়টার নিয়ত করে ইহরাম বাঁধা। মক্কায় পৌঁছে প্রথমে উমরা আদায় করা ও ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করা। হজের সময় হলে একই ইহরামে মিনা-আরাফায় গমন ও হজের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।

খ) মিকাত থেকে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা। পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর উমরার তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে হজের নিয়ত উমরার সাথে যুক্ত করে নেয়া। উমরার তাওয়াফ-সাঈ শেষ করে, ইহরাম অবস্থায় হজের অপেক্ষায় থাকা ও ৮ যিলহজ একই ইহরামে মিনায় গমন ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পাদন করা।

৩. ইফরাদ

হজের মাসগুলোয় উমরা না করে শুধু হজ করাকে ইফরাদ হজ বলে। এ ক্ষেত্রে মিকাত থেকে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধতে হয়। মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) করা। ইচ্ছা হলে এ তাওয়াফের পর সাঈও করা যায়। সে ক্ষেত্রে হজের ফরজ-তাওয়াফের পর আর সাঈ করতে হবে না। তাওয়াফে কুদুমের পর ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করা। ৮ যিলহজ একই ইহরামে হজের কার্যক্রম সম্পাদনের উদ্দেশ্যে মিনার দিকে রওয়ানা হওয়া। ইফরাদ হজকারীকে হাদি যবেহ করতে হয় না। তাই ১০ যিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপের পর মাথা মুণ্ডন করে ইফরাদ হজকারী প্রাথমিকভাবে হালাল হয়ে যেতে পারে।

উপরোক্ত প্রকারভেদের প্রমাণ

আয়েশা রা. বলেন,

خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَامَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ ، فَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ ، وَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِحَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ ، وَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِالْحَجِّ وَأَهَلَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالْحَجِّ، فَأَمَّا مَنْ أَهَلَّ بِالْحَجِّ أَوْ جَمَعَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لَمْ يَحِلُّوا حَتَّى كَانَ يَوْمُ النَّحْرِ .

‘আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিদায় হজের দিন বের হলাম। আমাদের কেউ উমরার ইহরাম বাঁধলেন, কেউবা হজ ও উমরার জন্য একসাথে ইহরাম বাঁধলেন। আবার কেউ শুধু হজের ইহরাম বাঁধলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু হজের ইহরাম বাঁধলেন। আর যারা শুধু হজ কিংবা হজ ও উমরা উভয়টির ইহরাম বেঁধেছিলেন তারা কুরবানীর দিন পর্যন্ত হালাল হননি।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১৫৬২; মুসলিম, আসসাহিহ : ১২১১]

চলবে, ইনশাআল্লাহ।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড