• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক [পর্ব-৮]

মুহরিম অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

০৫ আগস্ট ২০১৯, ১৪:০১
Hajj_8
আবেগঘন এক হাজি; ছবি : সংগৃহীত

১. পশম ওঠানো:

মুহরিম অবস্থায় মাথার চুল, গোঁফ, নাভির নিচের লোম, বগলের লোম বা শরীরের যে কোনো স্থানের পশম যে কোনো উপায়ে উঠানো নিষিদ্ধমহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَلَا تَحۡلِقُواْ رُءُوسَكُمۡ حَتَّىٰ يَبۡلُغَ ٱلۡهَدۡيُ مَحِلَّهُۥۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ بِهِۦٓ أَذى مِّن رَّأۡسِهِۦ فَفِدۡيَة مِّن صِيَامٍ أَوۡ صَدَقَةٍ أَوۡ نُسُك﴾

‘আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুণ্ডন করবে না, যতক্ষণ না কুরবানির পশু যথাস্থানে পৌঁছে যা তোমাদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে ছওম পালন করবে কিংবা ছাদাক্বা করবে অথবা কুরবানি করবে[সুরা বাকারা : ১৯৬]

মাথার চুলের মত সমস্ত শরীরের যে কোনো স্থানের পশমও এই বিধানের আওতায় পড়বে কেননা এসবই সৌখিনতার অন্তর্ভুক্ততবে দাড়ি কাটা বা ছাঁটা ইহরাম এবং হালাল উভয় অবস্থায় হারাম

২. নখ কাটা:

ইমাম ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, মুহরিম ব্যক্তির জন্য নখ কাটা নিষিদ্ধ[ইবনুল মুনযির, আল-ইজমা, পৃ. ৫৭]

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

﴿ثُمَّ لۡيَقۡضُواْ تَفَثَهُمۡ﴾

‘এরপর (ইহরাম খোলার পর) তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়[সুরা হজ : ২৯]

ইমাম ইবনু কাসির (রহ.) উক্ত আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে বলেন, ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘(আয়াতের অর্থ হচ্ছে) মাথা মুণ্ডন করা, সাধারণ পোশাক পরা এবং নখ কাটা

উম্মু সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,

«إِذَا رَأَيْتُمْ هِلاَلَ ذِى الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّىَ فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وأظفارهِ»

‘যখন তোমরা যিলহজ মাসের চাঁদ দেখবে এবং তোমাদের কেউ যদি কুরবানি করার ইচ্ছা করে, তাহলে সে যেন তার চুল এবং নখ না কাটে [মুসলিম, আসসাহিহ : ৫১১৯] কুরবানি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির তুলনায় মুহরিম ব্যক্তি এই নিষেধাজ্ঞার অধীনে পড়ার অধিক উপযুক্ত

৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা:

মুহরিম ব্যক্তি শরীরে অথবা কাপড়ে কোনো প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে ইবনু উমর (রা.) এর হাদীছে এসেছে,

«وَلاَ تَلْبَسُوا مِنَ الثِّيَابِ شَيْئًا مَسَّهُ الزَّعْفَرَانُ وَلاَ الْوَرْسُ»

‘তোমরা যাফরান এবং ওয়ার্‌স (এক প্রকার উদ্ভিদ, যাতে সুগন্ধি রয়েছে) রঞ্জিত কাপড় পরবে না’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১৫৪২; মুসলিম, আসসাহিহ : ২৭৯১]

উপরোক্ত হাদিস প্রমাণ করে যে, মুহরিম ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে না তবে মুহরিম ব্যক্তি ইহরাম বাঁধার পূর্বে তার শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে; কাপড়ে নয় ইহরাম বাঁধার পর সুগন্ধি অবশিষ্ট থাকলে তাতে কোনো সমস্যা নেই কেননা ফিকহের উসুল হচ্ছে,

يَجُوْزُ فِيْ الْاِسْتِدَامَةِ مَا لاَ يَجُوْزُ فِي الْاِبْتِدَاءِ

‘কিছু বিষয় অব্যাহত রাখা জায়েয হলেও নতুনভাবে শুরু করার ক্ষেত্রে তা জায়েয নয়

৪. মুহরিম ব্যক্তি কর্তৃক মাথা বা মুখের সাথে লেগে থাকে এমন কিছু দ্বারা মাথা ও মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা:

ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে,

«لاَ يَلْبَسُ الْقُمُصَ وَلاَ الْعَمَائِمَ»

‘মুহরিম ব্যক্তি জামা এবং পাগড়ি কোনটাই পরবে না’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১৫৪২; মুসলিম, আসসাহিহ : ২৭৯১]

তবে মাথা বা মুখের সাথে লেগে থাকে না এমন কিছু দ্বারা ছায়া গ্রহণ করা যেতে পারে যেমন: ছাতা, গাড়ির ছাদ, কাপড়, তাঁবু ইত্যাদি কেননা জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপের সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাপড় দ্বারা ছায়া দেওয়া হয়েছিল [মুসলিম, আসসাহিহ : ৩১৩৮]

৫. সেলাইকৃত পোশাক পরিধান:

পুরুষ কর্তৃক সারা দেহ আবৃত করে এমন সেলাইকৃত পোশাক পোশাকের স্বীয় আকৃতিতে পরা, যেমন: জামা অথবা শরীরের কিছু অংশ আবৃত করে এমন সেলাইকৃত পোশাক স্বীয় আকৃতিতে পরা, যেমন: পায়জামা, চামড়ার মোজা, কাপড়ের মোজা, গেঞ্জি ইত্যাদি

তবে উযরের কারণে পাজামা ও মোজা পরিধান করা যেতে পারে। ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, আমি আরাফাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«مَنْ لَمْ يَجِدِ النَّعْلَيْنِ فَلْيَلْبَسِ الْخُفَّيْنِ وَمَنْ لَمْ يَجِدْ إِزَارًا فَلْيَلْبَسْ السَّرَاوِيلَ لِلْمُحْرِمِ»

‘যার সেন্ডেল নেই, সে যেন মোজা পরে অনুরূপভাবে কেউ যদি পরনের কাপড় না পায়, তাহলে সে যেন পাজামা পরে; এই হুকুম মুহরিমের জন্য[বুখারি, আসসাহিহ : ১৮৪১; মুসলিম, আসসাহিহ : ২৭৯৪]

মহিলা মানুষ শরিয়তসম্মত স্বাভাবিক যে কোন পোশাক পরতে পারে হাত মোজা এবং নেকাবসহ মুখমণ্ডলের মাপে তৈরিকৃত অন্যান্য কাপড় ছাড়া তার জন্য অন্য কোন পোশাক নিষেধ নেই রাসুল (সা.) বলেন,

«وَلَا تَتَنَقَّبْ الْمُحْرِمَةُ وَلَا تَلْبَسْ الْقُفَّازَيْنِ»

‘মুহরিম মহিলা মুখাচ্ছাদন ব্যবহার করবে না এবং হাত মোজা পরবে না[বুখারি, আসসাহিহ : ১৮৩৮]

তবে বেগানা পুরুষের উপস্থিতিতে সে তার কাপড় দ্বারা হাত এবং ওড়না দ্বারা মুখমণ্ডল ঢেকে দিবে আয়িশা (রা.) বলেন,

«كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا إِلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ»

‘আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালীন আরোহী পথযাত্রীরা আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত তারা আমাদের বরাবর পৌঁছলে আমরা আমাদের মাথার বড় চাদর টেনে মুখমণ্ডলের উপরে ঝুলিয়ে দিতাম এবং তারা আমাদেরকে অতিক্রম করে চলে গেলে আবার মুখ খুলে দিতাম[আবু দাউদ, আসসুনান : ১৮৩৩; শাওয়াহিদের ভিত্তিতে হাদিসটি সহিহ]

ইমাম ইবনুল মুনযির (রহ.) বলেন, ‘সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, মহিলারা সেলাইকৃত সব ধরনের পোশাক এবং মোজা পরতে পারে মাথা এবং চুল ঢেকে রাখতে পারে মুখমণ্ডলের উপর একটি কাপড় ঝুলিয়ে দিবে, যাতে বেগানা পুরুষের দৃষ্টিগোচর থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে[ইবনু হাজার, ফাতহুল বারি, ৩/৪০৬]

উপরোক্ত ভুলসমূহের জন্য ফিদইয়া

কেউ অজ্ঞতা বা ভুলবশত উক্ত নিষিদ্ধ ৫টি বিষয়ের কোনটি করে ফেললে তাতে কোন সমস্যা নেই তবে অজ্ঞ ব্যক্তি জানার পরে এবং ভুলকারী স্মরণ হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিবে; সেলাইকৃত পোশাক পরে থাকলে খুলে ফেলবে, মাথা ঢাকলে মাথা আলগা করে ফেলবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকলে তা দূর করবে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলি করলে সে একদিকে যেমন পাপী হবে, অন্যদিকে তেমনি তার উপর ফিদ্‌ইয়া ওয়াজিব হবে তবে প্রয়োজনের তাকিদে কেউ সেগুলি করলে সে গোনাহগার হবে না বটে, তবে তাকে ফিদ্‌ইয়া দিতে হবে অবশ্য সুগন্ধির ক্ষেত্রে এ হুকুম প্রযোজ্য নয় কেননা সুগন্ধি ব্যবহার মানুষের জরুরি কোনো বিষয় নয় উক্ত নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের ফিদ্‌ইয়া হচ্ছে, ছাগল জবাই করা বা মাথাপিছু আধা ‘সা’ হারে ছয়জন মিসকিনকে খাওয়ানো অথবা তিন দিন সাওম পালন করা এ তিনটির যে কোন একটি বেছে নেওয়া যাবে মহান আল্লাহ বলেন,

﴿كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ بِهِۦٓ أَذٗى مِّن رَّأۡسِهِۦ فَفِدۡيَةٞ مِّن صِيَامٍ أَوۡ صَدَقَةٍ أَوۡ نُسُكٖۚ﴾

‘তোমাদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয়ে পড়ে, কিংবা মাথায় যদি কষ্টদায়ক কিছু থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে সাওম পালন করবে, কিংবা সাদাকা করবে, অথবা কুরবানি করবে[সুরা বাকারা : ১৯৬]

কাব ইবনু উজরা (রা.) বর্ণিত হাদিস উক্ত আয়াতের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে অসুস্থতার কারণে তাঁর মাথার উকুন তাঁকে কষ্ট দেওয়ায় রাসুল (সা.) তাঁকে মাথা মুণ্ডন করতে বললেন এবং তাঁকে কাফফারাহ স্বরূপ ছাগল জবাই করা, বা মাথাপিছু আধা ‘সা’ হারে ছয় জন মিসকিনকে খাওয়ানো, অথবা তিন দিন সাওম পালন করার আদেশ করলেন[বুখারি, আসসাহিহ : ৪৫১৭; মুসলিম, আসসাহিহ : ২৮৮৩]

পবিত্র কুরআন এবং ছহীহ হাদীছে শুধুমাত্র মাথা মুণ্ডনের ক্ষেত্রে এই ফিদ্‌ইয়ার কথা এসেছে তবে অবশিষ্ট চারটি নিষিদ্ধ বিষয়ও এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে কেননা মাথা মুণ্ডনের মত এগুলিতেও শৌখিনতা রয়েছে

৬. শিকারযোগ্য স্থলপ্রাণী শিকার করা:

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَقۡتُلُواْ ٱلصَّيۡدَ وَأَنتُمۡ حُرُم﴾

‘হে ঈমানদারগ! তোমরা হরাম অবস্থায় শিকারযোগ্য প্রাণী হত্যা করো না[সুরা মায়িদা : ৯৫]

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে শিকারযোগ্য স্থলপ্রাণীকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকারীর বিনিময় উল্লেখ করেছেন,

﴿وَمَن قَتَلَهُۥ مِنكُم مُّتَعَمِّدٗا فَجَزَآءٞ مِّثۡلُ مَا قَتَلَ مِنَ ٱلنَّعَمِ يَحۡكُمُ بِهِۦ ذَوَا عَدۡلٖ مِّنكُمۡ هَدۡيَۢا بَٰلِغَ ٱلۡكَعۡبَةِ أَوۡ كَفَّٰرَةٞ طَعَامُ مَسَٰكِينَ أَوۡ عَدۡلُ ذَٰلِكَ صِيَامٗا لِّيَذُوقَ وَبَالَ أَمۡرِهِۦۗ﴾

‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে স্থলচর শিকারকে হত্যা করবে, তার উপর ঐ প্রাণীর সমান বিনিময় ওয়াজিব হবে, যাকে সে হত্যা করেছে; দু’জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি এর ফসালা করবে বিনিময়ের প্রাণীটি উৎসর্গ হিসবে কাবায় পৌছাতে হবে, অথবা কাফফারা স্বরূপ তার উপর কয়েকজন দরিদ্রকে খাওয়ানো ওয়াজিব হবে, অথবা তার সমপরিমাণ সাওম পালন করবে, যাতে সে স্বীয় কৃতকর্মের প্রতিফল আস্বাদন করে[সুরা মায়িদা : ৯৫]

উক্ত আয়াতের আলোকে বলা যায়, ইহরাম অবস্থায় কেউ শিকারযোগ্য স্থলচর প্রাণীকে হত্যা করলে যদি তার সমকক্ষ কোনো গৃহপালিত পশু পাওয়া যায়, তাহলে তার সামনে তিনটি পথ: হয় সে হত্যাকৃত প্রাণীর সমকক্ষ প্রাণীটিকে হারাম এলাকায় যবেহ করে তার সম্পূর্ণ গোশত সাদাকা করে দিবে, তা থেকে সে নিজে মোটেও খাবে না, অন্যথায় সমকক্ষ পশুটির মূল্য খাদ্যের হিসাবে হিসাব করে মাথাপিছু আধা ‘সা’ হারে মিসকিনদের মাঝে বণ্টন করতে হবে, অথবা মিসকিনদের সংখ্যার সমপরিমাণ সাওম পালন করতে হবে কিন্তু যদি হত্যাকৃত প্রাণীটির সমকক্ষ পশু না পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত বিবরণ মোতাবেক খাদ্য খাওয়াতে হবে অথবা সাওম পালন করতে হবে আয়াতটি আরো প্রমাণ করে যে, কেবলমাত্র ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকারীর উপরেই এই বিনিময় ওয়াজিব হবে; ভুলবশতঃ বা অনিচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকারীর উপরে নয়

৭. বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া কিংবা বিবাহ সম্পন্ন করা :

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

«لاَ يَنْكِحُ الْمُحْرِمُ وَلاَ يُنْكَحُ وَلاَ يَخْطُبُ»

‘মুহরিম ব্যক্তি নিজে যেমন বিয়ে করবে না, তেমনি অন্যকেও বিয়ে দিবে না এবং বিবাহের প্রস্তাবও পেশ করবে না[মুসলিম, আসসাহিহ : ৩৪৪৬]

কোন মুহরিম কর্তৃক বিবাহ সংঘটিত হলে উক্ত বিবাহ সঠিক গণ্য হবে না সেজন্য উক্ত বৈবাহিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে হলে নতুনভাবে আবার বিয়ে পড়াতে হবে

৮ ও ৯. স্ত্রী সহবাস করা কিংবা যৌন উত্তেজনার সহিত স্ত্রীকে আলিঙ্গন করা:

মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ٱلۡحَجُّ أَشۡهُرٞ مَّعۡلُومَٰتٞۚ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ ٱلۡحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي ٱلۡحَجِّۗ﴾

‘হজের জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস রয়েছেএসব মাসে যে ব্যক্তিজেইহরাম বাঁধবে, তার জন্য হজে স্ত্রী সহবাস করা, অশোভন কোন কাজ করা কিংবা ঝগড়া-বিবাদে জড়ানো জায়ে নয়[সুরা বাকারা : ১৯৭]

আয়াতে ‘রফাস’ (رَفَثَ) শব্দটি স্ত্রী সহবাস এবং যৌন উত্তেজনার সহিত স্বামী-স্ত্রীর আলিঙ্গন উভয়কে শামিল করে অনুরূপভাবে এটা অশোভন কথা এবং কাজকেও শামিল করে ‘ফুসুক’ (فُسُوقَ) শব্দটি যাবতীয় পাপাচারকে বুঝায় অনর্থক এবং হিংসা-বিদ্বেষমূলক তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া বুঝাতে ‘জিদাল’ (جِدَالَ) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তবে হককে বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে বিতর্ক করা যায়; বরং তা করা উচিৎ

মুহরিম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে বা যৌন উত্তেজনার সহিত পরস্পরে আলিঙ্গন করলে কি আবশ্যক হবে, তদ্বিষয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন হাদিস পাওয়া যায় না তবে এ বিষয়ে সাহাবা কেরাম থেকে কিছু আসার রয়েছে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস এবং আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সর্বসম্মতিতে প্রমাণিত হয় যে, ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সহবাসকারীর হজ নষ্ট হয়ে যাবে; তবে হজের অবশিষ্ট কার্যাবলি তাকে পূর্ণ করতে হবে আর পরবর্তী বছর তাকে আবার হজ আদায় করতে হবে এবং একটি ফিদ্‌ইয়া দিতে হবে [হাকিম, আলমুসতাদরাক : ২/৬৫]

তাঁদের সবার উক্তি প্রমাণ করে যে, প্রাথমিক হালাল হওয়ার পূর্বে স্ত্রী সহবাস করলে একটি উট কুরবানি করে তার গোশত হারাম এলাকার দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করে দিতে হবে পক্ষান্তরে প্রাথমিক হালালের পরে স্ত্রী সহবাস করলে সর্বসম্মতিক্রমে তার হজ নষ্ট হবে না এবং এক্ষেত্রে তাকে একটি ছাগল ফিদ্‌ইয়া দিতে হবে আর উমরার ক্ষেত্রে বিধান হচ্ছে, সাঈ অথবা তাওয়াফের পূর্বে স্ত্রী সহবাস করলে উমরা নষ্ট হয়ে যাবে তবে ঐ ওমরা সম্পন্ন করতে হবে এবং প্রথম উমরার মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধে নতুন আরেকটি উমরা করতে হবে সাথে সাথে তাকে একটি ফিদ্‌ইয়াও দিতে হবে এক্ষেত্রে ফিদ্‌ইয়া হচ্ছে, ছাগল জবাই করে তার গোশত হারাম এলাকার দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া পক্ষান্তরে যদি সে সাঈর পরে এবং মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটার পূর্বে স্ত্রী সহবাস করে, তাহলে তার উমরা নষ্ট হবে না তবে তাকে একটি ছাগল ফিদ্‌ইয়া দিতে হবে অবশ্য যদি যৌন উত্তেজনার সহিত স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে আলিঙ্গন করে এবং বীর্যপাত ঘটে, তাহলে তার হজ নষ্ট হবে না কেননা ব্যাভিচারের ক্ষেত্রে এমন অবস্থায় হদ তথা শরিয়ত নির্ধারিত শাস্তি ওয়াজিব হয় না তাছাড়া যে সহবাসের মাধ্যমে হজ নষ্ট হয়, এটি সে পর্যায়ের নয় তবে প্রাথমিক হালালের পূর্বে এমনটি করে থাকলে তাকে উট ফিদ্‌ইয়া দিতে হবে আর প্রাথমিক হালালের পরে করলে ছাগল ফিদ্‌ইয়া দিতে হবে উক্ত বিধিবিধান পুরুষের মত মহিলাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য তবে স্ত্রীকে যদি এ কাজে বাধ্য করা হয়, তবে তার উপর ফিদ্‌ইয়া ওয়াজিব হবে না

চলবে, ইনশাআল্লাহ

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড